দেশের পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত রাবার বাগানে দখলদারদের হয়রানী ও উৎপাত বন্ধ করে সহবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে আমদানি কমিয়ে দেশেই উৎপাদন বৃদ্ধি করতে রাবারকে কৃষি পণ্য ঘোষণার দাবি জানিয়েছে মালিক সমিতি। দেশে পর্যাপ্ত রাবার উৎপাদন হলেও একটি মহল আমদানি বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় রাবার গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশন। ১ লাখ ২০ হাজার পণ্যে রাবার ব্যবহৃত হয় জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি মুহাম্মদ হারুন বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। ইন্দোনেশিয়া রাবার উৎপাদেন প্রথম হলেও দেশে এ খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়।
মূল বক্তব্যে সংগঠনটির উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি বাগানে ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী বাহিনীর তান্ডবের কারণে রাবার শিল্প ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে। এ বিষয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও সার্বিক সহয়তার আহ্বান জানান তিনি।
বিশেষকরে, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের যোগসাজোসে স্থানীয় লোকজন এ শিল্পের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে নানামুখী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অন্যতম হাতিয়ার বিশেষ ব্যবহার করছে বলেও জানান। মাত্র ৫ একর জমির প্রয়োজন হলেও কেন কোয়ান্টাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নামে কয়েক হাজার একর জমি দখল করা হচ্ছে সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। লোকজন দিয়ে মন্দির বানিয়ে সে মন্দিরে আগুন দিয়ে রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন। তাই শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মাঝে বিরাজমান সহবস্থান ধরে রাখতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা।
বারার কোম্পানির বিরুদ্ধে জমি দখলের মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে বাগানের জন্য বরাদ্দকৃত জমি মেপে বুঝিয়ে দিতে বলেন তারা। এক ইঞ্চি জমিও দখল করা হয়নি দাবি করে বাগানের কারণে সেখানে উন্নতি হচ্ছে বলেও জানায় মালিক সমিতি। বারার শিল্পের বিকাশে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনসহ বিশ কিছু দাবি তুলে ধরেন তারার।
এদিকে রাবার বাংলাদেশেসাদা সোনা নামে পরিচিত হলেও এখনো কৃষি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি জানান মোয়াজ্জেম হোসেন। তবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ এটিকে কৃষি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় তারা এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি পণ্য ঘোষণা করলে এখাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ সরকার প্রদত্ত কৃষি বিষয়ক সকল প্রণোদনা পাবে। তাই এখাতের বিকাশে স্বীকৃতি প্রদানের দাবী জানিয়ে প্রযুক্তিগত সহয়তা ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করতে বলেন। দেশের বাজারে যানবাহনের টায়ার, টিউব, জুতা, ফোম, খেলার সামগ্রীসহ শিল্প কারখানায় রাবারের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জানায় সংস্থাটি। তাই প্রয়োজনীয় সহায়তা না পেলে এ খাতটি আমদানি নির্ভর হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- ১৯৮০-এর দশকে বরাদ্দকৃত প্লট সমূহের চুক্তির নবায়ন করা। ৪০ বছর মেয়াদি এসব চুক্তি শেষ হওয়ার পথে রয়েছে। রাবার চাষীদের স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রদান করার পাশাপাশি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করতে বলা হয়।
তাছাড়া বিদেশ হতে উচ্চ ফলনশীল বীজ আমদানির সুযোগ করে দিতে বলা হয়। দেশে উৎপাদিত রাবার পণ্যের উপর ভ্যাট/ট্যাক্স প্রত্যাহার করে স্থানীয় রাবার শিল্পের সুরক্ষায় আমদানী পর্যায়ের রাবারের শুল্ক কর বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। পাহাড়ে হেডম্যানরা যথেচ্ছা জমি বরাদ্দ দিয়ে দেন।তাই এখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ দাবি করা হয়। অবৈধ দখল বন্ধ করা, জমি হস্তান্তর ও নামজারি ব্যবস্থা সহজ করার ব্যবস্থা করা। রাবার রিসার্চ ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এখাতের বিকাশে সহায়তা করার দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তামেন ১ লাখ একরের চেয়ে বেশি জমিতে রাবার চাষ হচ্ছে। যেখানে লক্ষাধিক লোকের কর্মস্থান হয়েছে। প্রতি বাগানে ২৫ একরর মতো জমি বকরাদ্দ করা আছে। আর ১৩শ লোককে এসব বাগান দেওয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন