রাফায়েল বেনিতেজ কোচের দায়িত্ব ছাড়ার পরের ৫ বছরে একটা গড়পড়তা ক্লাবে পরিণত হয়েছিল লিভারপুল। মার্সিসাইডের ক্লাবটিতে কান পাতলেই শোনা যেত কেবল ব্যার্থতার গল্প। সেখান থেকে অলরেডদের ত্রাতা হয়ে আসেন জার্মান ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপ। দলকে ইউরোপ সেরা বানানোর পাশাপাশি দীর্ঘ ৩০ বছর পরে করেন প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন। সেই লিভারপুলেরই চলতি মৌসুমে বেহাল দশা। লিগের পয়েন্ট তালিকায় তাদের অবস্থান ১০ নম্বারে। এসবের সঙ্গে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে পরশু রাতে উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে হার।
উলভসের মাঠ মনিয়েক্স স্টেডিয়ামে ম্যাচের ১২ মিনিটেই ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লপ বাহিনী। এরপর বাকি সময় বহু চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি তারা। উল্টো ম্যাচের ৭১ মিনিটে রুবেন নেভেসের গোলে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে অলরেডরা। শেষ ২০১২ সালে কেনি ডালগ্লিসের অধীনে লিভারপুল লিগে টানা তিন অ্যাওয়ে ম্যাচ হেরেছিল! সবশেষ তিন লিগ ম্যাচে ৯ গোল হজম করেছে লিভারপুল। চলতি লিগে ২০ ম্যাচে খেয়েছে ২৮টি। অথচ গত মৌসুমে ৩৮ ম্যাচে এর চেয়ে ২ গোল কম হজম করেছিল তারা! গেলবার ম্যানচেস্টার সিটির ঘাড়ে শ্বাস ফেলতে ফেলতে শেষ পর্যন্ত ১ পয়েন্টের ব্যবধানে লিগে রানার্সআপ হয়েছিল ক্লপের দল। রানার্সআপ হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও। তবে এতো কিছুর পরও লিভারপুলের দুরবস্থা দূর করার ব্যাপারে এখনো আত্মবিশ্বাসী ক্লপ।
ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে ক্লপ বলেন, ‘কীভাবে আমি উদ্বিগ্ন না হয়ে থাকতে পারি? আমি এখানে বসে বলতে পারি না যে সব ঠিকঠাক আছে এবং আমরা ভালো করছি। তবে এদিন প্রথম ১২ মিনিটে আমরা দুর্দশায় পতিত হলাম। এমন ম্যাচে এগুলো হতে পারে না। আমাদের সমালোচনা করতে পারেন, কাঠগড়ায় তুলতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে আপনারা সম্ভবত সঠিকও, কেননা, ওই ১২ মিনিট মেনে নেওয়া যায় না। তবে ছেলেদের উপর বিশ্বাস হারাচ্ছি না আমি, কিন্তু আমাদের উন্নতি করতে হবে এবং সেজন্য আমরা কাজ করছি।’ ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে লিভারপুল। অন্যদিকে ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চদশ স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
একই রাতে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। ম্যাচের ৭ মিনিটে পর্তুগীজ তারকা ব্রুনো ফার্নান্দেজ ও ৬২ মিনিটের সময় মার্কাস রাশফোর্ড রেড ডেভিলসদের হয়ে গোল দুটি করেন। তবে ম্যাচের ফলাফল ছাপিয়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের শিরোনাম হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা কাসেমিরো। ম্যাচের ৬৬তম মিনিটে টাচলাইনে একটি ফাউলের ঘটনায় বিবাদে জড়িয়ে দুই দলের খেলোয়াড়রা বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষ হিউজের গলা চেপে ধরেন কাসেমিরো। ভিএআরে সময় নিয়ে দেখে এই ডিফেনশিভ মিডফিল্ডারকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান রেফারি। কাসেমিরোকে হারানোর পর একটি গোল হজম করলেও শেষ পর্যন্ত বড় কোনো বিপদ হয়নি স্বাগতিকদের। ম্যাচ শেষে শিষ্যের পাশে দাঁড়িয়েছেন ম্যানইউ বস এরিক টেন হাগ। ডাচ কোচের দাবি, কাসেমিরো কেবল দলের স্বার্থেই এমনটা করেছেন। তবে শাস্তিস্বরূপ লিগে পরবর্তী তিন ম্যাচে খেলতে পারবেন না কাসেমিরো। লিগে ২১ ম্যাচে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে আছে ইউনাইটেড। তাদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলা আর্সেনাল ও ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট যথাক্রমে ৫০ ও ৪৫।
হতাশার গল্প আছে আরো। টানা ব্যর্থতায় লিগ টেবিলে ক্রমেই নিচের দিকে নামতে থাকা দলের বিপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়ল উড়তে থাকা আর্সেনাল। প্রথমার্ধে আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্স উপহার দেওয়া এভারটন বিরতির পর পেল জালের দেখা। ঘুরে দাঁড়ানোর জোর চেষ্টা চালিয়েও ব্যবধান ঘোচাতে পারল না মিকেল আর্তেতার দল। শন ডাইসের কোচিংয়ে প্রথম মাঠে নেমেই সব ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলার আভাস দিয়ে প্রিমিয়ার লিগে ঘরের মাঠে এভারটন জিতেছে ১-০ গোলে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে আগের ১০ ম্যাচে জয়শূন্য ছিল এভারটন। টানা ব্যর্থতায় সবশেষ গত ২১ জানুয়ারি ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের বিপক্ষে হারের পর কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে ছাঁটাই করে ক্লাবটি, দায়িত্ব দেয় ডাইসকে। তার হাত ধরে অবশেষে ভুলতে বসা স্বাদ পেল তারা।
অন্যদিকে ফরাসি লিগ ওয়ানে তুলুজের বিপক্ষে লিওনেল মেসির গোলে জয় পেয়েছে পিএসজি। ম্যাচটা প্যারিসের জায়ান্টরা খেলতে নেমেছিল চোটাক্রান্ত এমবাপ্পে ও নেইমারকে ছাড়াই। তবে এতে অবশ্য সমস্যা হয়নি তাদের। মেসি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে পিএসজিকে ঠিকই জয় এনে দিয়েছেন ২-১ গোলের ব্যবধানে। ম্যাচ শেষে মেসিকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন পিএসজি কোচ ক্রিস্তোফ গালতিয়ের। পার্ক দে প্রিন্সেসে ম্যাচের ২০ মিনিটে পিছিয়ে পড়েছিল স্বাগতিক পিএসজিই। ৩৮ মিনিটে দলকে সমতায় ফেরান আশরাফ হাকিমি। আর দ্বিতীয়ার্ধের ৫৮ মিনিটে দলকে জয়সূচক গোলটি এনে দেন মেসি। এই জয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান আরেকটু দৃঢ় করল প্যারিসের দলটি। ২২ ম্যাচ শেষে পিএসজির পয়েন্ট এখন ৫৪। এক ম্যাচ কম খেলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মার্শেইয়ের চেয়ে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে তারা।
ম্যাচ শেষে মেসিকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন পিএসজি কোচ ক্রিস্তোফ গালতিয়ের। এ সময় মেসিকে খেলানোর কৌশল নিয়েও কথা বলেছেন পিএসজি কোচ, ‘মেসি দলের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। আমি দলকে মেসির জন্য খেলতে এবং তাকে ঘিরে কাজ করতে বলেছি। তাকে অবশ্যই কিছু কাজ থেকে মুক্ত করতে হবে। বল পুনরুদ্ধার এবং গতি আনতে তার সতীর্থদের দ্বিগুণ কাজ করতে হবে। এর ফলে সে পাস খুঁজে পাবে।’ আগামী বৃহস্পতিবার পিএসজি তাদের পরের ম্যাচটি খেলবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মার্শেইয়ের বিপক্ষে। ফরাসি লিগের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়েও পিএসজির হয়ে বড় ভূমিকা নিতে হবে মেসিকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন