আজ ফেব্রুয়ারির তিন তারিখ। ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার মাস, বইয়ের মাস। ১৯৫২ সালে এই মাসে ভাষা শহিদরা নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষাকে করেছে উজ্জল এবং সমৃদ্ধ। বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারির পর থেকে বাংলা ভাষা পেয়েছে বিশে^ এক অনন্য মর্যাদা।
প্রতি বছর বাংলা একাডেমি বই মেলার আয়োজন করে, তবে ফেব্রুয়ারি মাসেই কেন? সেটাও বাংলা, ফেব্রুয়ারি এবং বইয়ের আত্মিক সর্ম্পকের কারনেই। এবার অমর একুশে বই মেলায় ছয়শেরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। নতুন বই আসবে প্রায় তিন-চার হাজারেও বেশি। কাজ করছে নতুন-পুরাতন লেখক, প্রকাশক এবং সাথে সম্পৃক্ত আরও কতো মানুষ। সবই বইকে কেন্দ্র করে! প্রশ্ন হচ্ছে বই কেন পড়া দরকার?
উত্তর এক একজন এক এক ভাবে দিবে, আমিও তাদের কিছু কিছু মতামতের সাথে একমত হবো। তবে আজকে আপনাদেরকে এক ভিন্ন দিক থেকে আলোকপাত করবো উত্তরটি। আপনারা সবাই বই পড়ার নানান রকম উপকারের সম্পর্কে জানেন। আপনার কেনো আজকে থেকে পাঠক হওয়া উচিৎ, এটা জানেন? চলুন জানি।
প্রযুক্তির এই যুগে, সেই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। তাতে কি আমাদের পাঠক কমে গেছে? উত্তর হচ্ছে - নাহ্! যে একবার পাঠক হয়, সে মৃত্যু পর্যন্ত বই পড়ে। তার মানে পাঠক কমেনি।
তাহলে তো আর কোনো সমস্যা নাই। বই নিয়ে এতো কাজ তাহলে বৃথা না। এইটুকু উত্তর শুনে মনে হতে পারে আমাদের এখন নিশ্চিন্তে নাকে শরিষার তেল দিয়ে, মরণ ঘুম দেওয়া দরকার।
কিন্তু সমস্যা তো একটা আছে, না হলে শিরোনামে দুর্ভিক্ষের পূর্বাবাস দিলাম কেন? সমস্যা বড়, সমাধানও তেমন কঠিন। তবে এখনই যদি সমাধান করা সম্ভব না হয়, তাহলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে পারছি না।
আসুন বুকে পাথর বেঁধে কঠিন সত্যিটাকে একটু সহজ করে বলি। সেটা হলো পাঠক কমে নাই সত্যি, কিন্তু পাঠক উৎপাদন কমে গেছে। এতোটাই কমে গেছে যে, উৎপাদন হচ্ছে না বললেই চলে। ও মা! কি ভয়ঙ্কর কথা! উৎপাদন কমে গেছে?
অর্থনীতির ভাষায় উৎপাদন কমে গেলে দ্রব্য,পণ্য বা সেবার দাম বৃদ্ধিপায়, এটা স্বাভাবিক। এখানে উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে পাঠকের, মানেটা দাঁড়ায় এখানে দ্রব্য হচ্ছে পাঠক। উৎপাদন কমে গেলে সমান তালে যোগান কমতে থাকে এবং পাল্লাদিয়ে চাহিদা ও দাম বাড়তে থাকে। এটাতো ভালোই হওয়ার কথা, কারণ পাঠকদের মূল্য বাড়ছে। কিন্তু অর্থশাস্ত্র আপনাকে শান্তি দিচ্ছে না, দাম বাড়লে অর্থের মূল্য কমে যায় ফলে তৈরি হয় মূল্যস্ফিতি। মূল্যস্ফিতি যদি ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাহলে নেমে আসে বড় ধরণের বিপর্যয় মানে দুর্ভিক্ষ।
এখানে সাহিত্যকে অর্থনীতিকে আর উৎপাদিত দ্রব্য ভাবা হচ্ছে পাঠককে, তার মানে পাঠক তৈরি না হলে বাংলা সাহিত্যে নেমে আসবে দুর্ভিক্ষ। সর্বনাশ!
তবে সুখবর এই যে দুর্ভিক্ষের পূর্বাবাস যে পায় তার কাছে এটাকে মুকাবিলা করার উপায়ও ধরা দেয়। আসুন দেখি কোনো উপায় পাই কিনা?
অনেক ভেবে একটা উপায় অবশ্য পেয়েছি। তবে সেটা সহজলভ্য নয়, স্বাভাবিক নয়। বাংলার সংস্কৃতি পরিবর্তণ হয়েছে।
[অসমাপ্ত]
মন্তব্য করুন