শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আইনের ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতি

বিচারককে অশালীন আচরণ সম্পর্কে হাইকোর্টের মন্তব্য

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আইন জগতের ইতিহাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতি কালো দাগ সৃষ্টি করেছে। এই মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং বিচারপতি রাজিক-আল জলিলের ডিভিশন বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। বিচার কার্যক্রম চলাকালে বিচারকের সঙ্গে অশালীন আচরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট তিন আইনজীবীর উপস্থিতিতে এ মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। তিন আইনজীবীর পক্ষে শুনানিতে সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির আদালতকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথে এগিয়েছে। আজ থেকে সব কোর্ট চলছে। আমাদের আরও কিছু কাজ রয়েছে। সবকিছুর সমাধান হবে। আমাদের এক মাস সময় দিন। শুনানিকালে তিন আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল ও অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা উপস্থিত ছিলেন।
তখন হাইকোর্ট বলেন, কিছুই (ডেভেলপমেন্ট) হয়নি। হাইকোর্টে এটার তারিখের আগে ওখানে একটু নাড়াচাড়া করেন। আমরা বুঝি। দিন যাচ্ছে আর টাইম নষ্ট করছেন। এটার (কনসিকোয়েন্স ফেস) পরিণতি ভোগ করতে হবে। আপনারা (রুলের) জবাব দিলে দিন। না দিলে না দেন। আমরা আমাদের মতো এগুবো। একটা কোর্টকে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অচল করে রেখেছেন। সমস্ত কিছু আমরা দেখছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার (আইনজীবী সমিতি) বাংলাদেশের লিগ্যাল ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে, সমস্ত আইনজীবীদের কলঙ্কিত করেছে।
আদালত আরও বলেন, আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট হোক আর সদস্য হোক। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। বার কাউন্সিল আছে। তবে বার কাউন্সিল কিছু না করলে আমরা এখান থেকেই করবো। প্রতিদিন আমরা খবরের কাগজে চোখ রাখি, যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারে কি হচ্ছে। আপনারা কোর্ট বর্জন করছেন, করেন। কিন্তু বিচার প্রার্থীরা কোর্টে গেলে তাদের ডিস্টার্ব করা হচ্ছে, থ্রেট দেয়া হচ্ছে। আপনারা একতরফা (এক্সপার্টি) গেলে আমরাও (এক্সট্রিম) যাবো। কে বারের সভাপতি, কে বিজ্ঞ আইনজীবী তা আমরা দেখবো না। এরা বাংলাদেশে প্রাকটিস (আইন পেশা পরিচালনা) করার যোগ্য কি না সেটিও আমরা দেখব।
পরে হাইকোর্ট ব্্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন আইনজীবীকে তাদের ব্যাখ্যা দিতে সময় দিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৬ ফেব্রæয়ারি দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল ও অশালীন আচরণের ঘটনায় আদালত অবমাননার রুলের শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রæয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেন। শুনানিকালে সংশ্লিষ্ট তিন আইনজীবীকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল ও অশালীন আচরণের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভ‚ঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামকে তলব করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তাদের প্রতি রুল জারি করেন।
সব আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নিয়েছেন আইনজীবীরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নিয়েছেন আইনজীবীরা। নারী ও শিশু-১ আদালতের বিচারক মো. ফারুক ছুটিতে চলে যাওয়ায় বর্জনের আওতায় থাকা ওই আদালতের কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন আইনজীবীরা। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২২টি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সেই সাথে জেলা জজ আদালত ও চীফ জুডিশিয়ালও চিরচেনা রুপে ফিরেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিচারাঙ্গনে বিচারপ্রার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। প্রাণ ফিরেছে আদালতঙ্গনে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান চৌধুরী কানন জানান, আদালতের অচলাবস্থা নিরসনে গত রোববার ১২ ফেব্রæয়ারি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আইন সচিব গোলাম সারোয়াসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আইনজীবীদের বৈঠক হয়। সেখানে তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার বিশেষ সাধারণ সভা করে নারী ও শিশু-১ আদালত এর বিচারক মো. ফারুক ছুটিতে না যাওয়া পর্যন্ত ওই আদালত ব্যতীত সকল আদালতের ওপর থেকে বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে নারী ও শিশু-১ আদালত এর বিচারক ছুটিতে চলে যাওয়ায় সে আদালতের দায়িত্ব পালন করছেন নারী ও শিশু-৩ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলম। সেক্ষেত্রে আইনজীবীদের কোন সমস্যা না থাকায় তারা নারী ও শিশু-৩ আদালতেই নারী ও শিশু -১ আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নেয়া শুরু করেছেন। এতে সকল আদালতের কার্যক্রমে আইনজীবীরা অংশগ্রহণ করায় আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। এছাড়াও আইনমন্ত্রী জেলা জজের বিষয়ে নমনীয় হতে বলায় সাধারণ সভায় সে বিষয়টি বিবেচনা করে আইনজীবীরা সে আদালত থেকে বর্জন প্রত্যাহার করে নেয়ায় আর কোন জটিলতা থাকছে না।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয়। এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারিরা। এ অবস্থায় জেলা জজ শারমিন নিগার, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. ফারুক ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। একপর্যায়ে আইনমন্ত্রীর আশ^াসে জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত বর্জন অব্যাহত রেখে বাকি সব আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেয় আইনজীবীরা। তবে ৭ ফ্রেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ দফায় বাড়ানো কর্মসূচির শেষ দিনেও তাদের অপসারণ না করায় আবারো সব আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয় আইনজীবীরা। ৮ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকল আদালত বর্জন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হলেও সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নাজির মোমিনুল ইসলামের চাঁদপুরে বদলী ও নারী ও শিশু -১ আদালতের ছুটিতে যাওয়ার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সকল আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নিতে শুরু করেছে আইনজীবীরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন