নানা সঙ্কটে আবর্তিত হচ্ছে দেশের রাজনীতি। রাজনীতির টালমাটালে অস্থির জনজীবন। স্বস্তির নিঃশ্বাস নেই কোথাও। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে দেশের রাজনীতিতে প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন মোড়। স্বাভাবিক কারণে চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠবে দেশের রাজনীতি। তার প্রভাব পড়বে সিলেটের রাজনীতিতেও। বিশেষ করে মাঠের লড়াইয়ে রাজপথে মুখোমুখি হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কিন্তু দল দুইটির সাংগঠনিক ভিত্তি নড়েবড়ে। নেতা কর্মীতে ঠাসা হলেও নেতৃত্ব নিয়ে গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। সেই সাথে প্রধান এ দুই দলের অঙ্গ সংগঠনের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ ও অপূর্ণাঙ্গ। দলের স্থানীয় ‘চেইন অব কমান্ড’ তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ থাকায়, রাজপথের সংগ্রামে কতটুকু সফলতা পাবে উভয় দল এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও শঙ্কিত। যদিও উভয় দল কমিটির নেতৃত্ব শক্তিশালী করতে তৎপরতা বাড়িয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন দলের ছায়ায় থেকে নানামুখী সুবিধা নিচ্ছেন বিতর্কিত হাইব্রিড বা কাউয়ারা। কিন্তু দলের অন্তঃপ্রাণ নেতাকর্মীরা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছে দলের পদের জন্য। কারণ এটাই তাদের পরিচয় ও ত্যাগ তিতীক্ষার পুরস্কার। কিন্তু সেখানেও তারা মূল্যায়নহীন। তাই মনোবল ভেঙে গেছে বঞ্চিতদের। ফলে রাজপথে ঝুঁকি নেয়ার চেয়ে, গা বাঁচিয়ে চলার পথ খুঁজবেন তারা।
একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি। সেই সাথে ছাত্রলীগের কোনো ইউনিটেই কমিটি নেই পূর্ণাঙ্গ। একই অবস্থা যুবলীগেরও। এ ছাড়া বহু আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি। নতুন কমিটির গুঞ্জন থাকলেও কার্যত তা অপ্রকাশিত। অপরদিকে সাংগঠনিক বিন্যাসে খারাপ অবস্থায় আছে বিএনপি। দলটির জেলা ও মহানগর কোনো ইউনিটেই নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সম্মেলন হলেও আহ্বায়ক কমিটিতে সীমাবদ্ধ। ছাত্রদলের জেলা ও মহানগর শাখার কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এ শাখায় নতুন কমিটির জন্য লবিং করছেন দায়িত্বশীলরা। এদিকে, যুবদলের সম্মেলনের পর এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটির অপেক্ষায় রয়েছেন নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্মেলন ও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার অপেক্ষায় অস্থির পদ প্রত্যাশিরা।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে উভয় শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। সেদিন থেকেই শুরু হয় নতুন কমিটির মেয়াদ। এক বছরের বেশি সময় পর ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি উভয় শাখায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বর। তবে আগামী নির্বাচনের আগে আর সম্মেলন বা নতুন কমিটি আসছে না সিলেটে এমনটি নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন দল সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা হয় ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর। এসময় দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করে ছাত্রলীগ কেন্দ্রিয় সংসদ। মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায়নি সিলেট ছাত্রলীগ। এখানেই শেষ নয়, দীর্ঘ প্রত্যাশা গুড়ে বালিতে পরিণত হয়েছে সিলেট যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। মহানগর যুবলীগের সম্মেলন ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। একদিন পর ২৯ জুলাই জেলা শাখার সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে উভয় শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের জুলাইয়ে। কিন্তু কমিটি আর হয়নি পূর্ণাঙ্গ। ফলে হতাশ পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা।
সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০১৭ সালের ১৪ জুন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্র। সে বছরের ১৭ জুন জেলা শাখায় ৯৯ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ দুই কমিটির নির্ধারিত মেয়াদ পেরিয়ে গেছে ২০১৯ সালে। এরপর আর সম্মেলন বা নতুন কমিটির কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। তবে সিলেটে নতুন কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের তৎপরতা রয়েছে বলে জানা গেলেও বাস্তবতা কতদুর এমন ভাবনা পদপ্রত্যাশীদের।
অপরদিকে, সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন হয় ২০২২ সালের ২৯ মার্চ। সম্মেলনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সভাপতি, ইমরান আহমদ চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক ও শামীম আহমদ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর প্রায় এক বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অপেক্ষা রয়েছেন জেলা বিএনপির পদপ্রত্যাশীরা। যদিও দলের একাধিক সূত্র বলেছে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যাচ্ছে জেলা বিএনপি। এদিকে, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। প্রায় দেড় বছর পর এই কমিটি আয়োজন করবে আগামী ৪ মার্চের সম্মেলন।
জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠিত হয় ২০১৮ সালের ১৩ জুন। এই কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি উভয় শাখায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। জেলায় ৩২১ সদস্যের এবং মহানগরে ২৬৬ সদস্যের কমিটি দেয় কেন্দ্র। ছাত্রদলের কমিটি প্রায় আড়াই বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ।
প্রায় দুই দশক পর সিলেটে যুবদলের সম্মেলন হয় গেল বছরের সেপ্টেম্বরে। ১০ সেপ্টেম্বর জেলা যুবদলের সম্মেলনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। একই ভাবে ১১ সেপ্টেম্বর প্রত্যক্ষ ভোট হয় মহানগর শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের। উভয় শাখার এই আংশিক কমিটি, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ করছে বর্তমানে। এছাড়া আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে সিলেটের স্বেচ্ছাসেবক দল। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট রাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। সেদিন জেলা ও মহানগরে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেই হয়ে যায় বিলুপ্ত। গেল বছরের ৯ অক্টোবর জেলা-মহানগরে ফের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এই নতুন আহ্বায়ক কমিটি উপজেলা, পৌর ও মহানগরীর ওয়ার্ড শাখাগুলোতে জোরদার করেছে সাংগঠনিক তৎপরতা। এরপর জেলা ও মহানগর শাখার সম্মেলন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে মনোনিবেশ করবেন সংশ্লিষ্টরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন