শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

শান্তি ও মঙ্গলময় জীবন লাভের পূর্বশর্ত ইত্তেহাদ: নেছারাবাদী হুজুর

ঝালকাঠি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৩:৫২ পিএম

আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সমাজবদ্ধ করেছেন, বিভিন্ন গোত্র, বর্ণ ও জাতিতে বিভক্ত করেছেন এবং উম্মতে মুহম্মদীকে শ্রেষ্ঠ-জাতির মর্যাদা দিয়েছেন। এটা এজন্য যে, উম্মতে মুহম্মদী যেন তার আমানতের সদ্ব্যবহারের নিমিত্ব মানবজাতিকে ন্যায় কাজের আদেশ দিয়ে এবং অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রেখে ‘আশ্রাফুল মখলুক’ উপাধি রক্ষা করে। যে আমানত গ্রহণ করে মনুষ সৃষ্টির সেরা হয়েছে সে আমানতের নাম আহকামে তকলীফিয়াÑস্বেচ্ছাপালনীয় বিধান। অর্থাৎ শরীয়তের বিধানসমূহ পালন কিংবা বর্জনের ব্যাপারে ইচ্ছার স্বাধীনতা। সুতরাং যে ইচ্ছাশক্তির সদ্ব্যবহার করল সে জান্নাতে আল্লাহ তায়ালার দীদার লাভ করে সফলকাম হল, পক্ষান্তরে যে ইচ্ছাশক্তির অপব্যবহার করল সে আখেরাতে জাহান্নামের ইন্ধন হয়ে বরবাদ হয়ে গেল। বুধবার ঐতিহ্যবাহী ঝালকাঠি নেছারাবাদ দরবার শরীফে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব ওয়াজ মাহফিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ^বরেণ্য ওলী, হাদিয়ে যামান, মুজাদ্দেদে মিল্লাত হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ.-এর ছাহেবজাদা ও গদ্দিনশীন পীর আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর এসব কথা বলেন।
আমীরুল মুছলিহীন নেছারাবাদী হুজুর বলেন, ‘দুনিয়ার মানুষের অশান্তির শেষ নেই। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মত মে․লিক প্রয়োজনগুলো মিটে যাবার পরেও অশান্তি। পশ্চিমা পুঁজিবাদীÑ‘খাও দাও ফুর্তি করো’র নারী-বাড়ি-গাড়ি আর বিলাস-ব্যসনেও তারা এখন শান্তি খুঁজে পাচ্ছে না। শান্তি নেই পশ্চিমাদের অনুসারী মুসলমান নামধারীদেরও। ক্ষমতার মদমত্ততা, দুনিয়ার লোভ-লালসা ওইসব মুসলমানকে আজ এমনভাবে পেয়ে বসেছে যে, বিধর্মীদের মার তো খাচ্ছেই, ঘরের মধ্যেও জ¦লছে অশান্তির আগুন। এর একমাত্র কারণ আমানতের খেয়ানতÑইচ্ছাশক্তির অসদ্ব্যবহার, অপব্যবহার। অথচ আল্লাহ তায়ালা সূরা নহলের ৯৭নং আয়াতে এরশাদ করেনÑ‘যারা ঈমান ও নেক আমলের জিন্দেগী যাপন করে, আমি তাদেরকে দুনিয়ায় শান্তি ও মঙ্গলময় জীবন দান করব।’ আমাদের চোখের সামনেই কী সুন্দর শান্তিময় জীবনের দৃষ্টান্ত রেখে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিলেন হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ.; যেভাবে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন হযরত শাহ জালাল ইয়ামনী, খাজা খান জাহান, খাজা মঈনুদ্দীন চীশতি রহ.সহ অসংখ্য আওলিয়ায়ে কেরাম।’ আমীরুল মুছলিহীন বলেনÑ‘আমরা আশ্রাফুল মখলুক দাবী করি, সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মতের দাবী করি, অথচ বিভেদ-বিশৃঙ্খলার দেয়াল তুলে নিজের জাতিকে বিভক্ত করে, সমাজকে বিশৃঙ্খল করে শান্তি ও মঙ্গলময় জীবনের আশা করি; এটা বাতুলতা ক্সব কিছু নয়। কুরআনুল করীমে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট ঘোষণা করেছেনÑ‘তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না; যদি তা করো তবে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে।’ (সূরা আনফালঃ ৪৬) উম্মতে মুহম্মদীকে যেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে থাকতে বলা হয়েছে, সেখানে আমরা ব্যক্তিগত ও দলগত স¦ার্থের দ্বারা, ফের্কায়ী চেতনার দ্বারা লালিত হয়ে নিজেকে, নিজের জাতিকে এবং মহান ¯্রষ্টাÑরব্বুল আলামীনকে চিনতে ব্যর্থ হওয়ায় আমাদের ঈমানের দাবীকেই নস্যাত করে দিচ্ছি। কেননা, মুসনাদে আহমদ ও তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় রসূলে করীম স. এরশাদ করেনÑ‘যে ব্যক্তি জাহেলিয়ত তথা ফের্কায়ী চেতনার দিকে আহ্বান জানায় সে নামায কায়েম, রোযা পালন ও মুসলমান দাবী করা সত্ত্বেও জাহান্নামী।’ সুতরাং শান্তি ও মঙ্গলময় জীবন লাভের পূর্বশর্ত হচ্ছে ইত্তেহাদÑঐক্যবদ্ধতা। এজন্যই হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. ঐক্যের ফরযিয়তের আমানত রক্ষায় আমরণ চেষ্টা-সাধনা করেছেন এবং বাস্তবতার নিরিখে ‘ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ’ তথা ‘মতা‣নক্যসহ ঐক্য’ নীতির এক যুগান্তকারী ফর্মুলা উপস্থাপন করেছেন।’ নেছারাবাদী হুজুর বলেনÑ‘এই সংঘাতক্ষুব্ধ সময়ে আমরা যদি সত্যিকারার্থেই শান্তি ও মঙ্গলময় জীবন লাভ করতে চাই, তাহলে আওলিয়ায়ে কেরামের অনুসৃত পথে ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফের ভিত্তিতেই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপন করে ‘আশ্রাফুল মখলুক’ উপাধি রক্ষা করতে হবে; অন্যথায় নামায-রোযা-ঈমানের দাবী সত্ত্বেও আমানতের খেয়ানতকারী ‘আরযালুল মখলুক’Ñনিকৃষ্ট জীব হিসেবে জাহান্নামে যেতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে উম্মতে মুহম্মদীর শ্রেষ্ঠত্বগুণ হাসিলের তে․ফীক দিন। আমীন!’ বিকেলে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে আজকের প্রথম দিনের মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে নসীহত পেশ করেন ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ, মাওলানা গাজী মুহম্মদ শহিদুল ইসলাম, উপাধ্যাক্ষ প্রখ্যাত মুহাদ্দেস হযরত মাওলানা আব্দুল কাদির আল মাদানী, হযরত মাওলানা মনিরুজ্জামান, মুফতী আবু ইয়াহইয়া মুহাম্মদ যাকারিয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বক্তা ও পীর ছাহেবান। ধারণা করা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মাহফিলে কয়েক লক্ষ লোকের সমাবেশ ঘটবে। মাহফিলকে কেন্দ্র করে আগেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, পানি, পয়ঃনিস্কাশন, অগ্নি-নির্বাপন, চিকিৎসা টিম ও এ্যাম্বুলেন্সসহ প্রশাসনের সহযোগিতায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২৪ শে ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাদ-ফজর হযরত নেছারাবাদী পীর ছাহেব হুজুরের সমাপনী বয়ান ও আখেরী মুনাজাতের মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হবে দক্ষিণ বাংলার সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ঐতিহ্যবাহী এ মাহফিল।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন