মোস্তফা ওয়াদুদ
‘এই রিকশা যাবা?’
‘কোনখানে?’
‘সোনারগাঁও জাদুঘর।’
‘বিশ টাকা লাগবি।’
‘ঠিক আছে। চলো।’
লোকটিকে সোনারগাঁও জাদুঘরে পৌঁছে দেয় রবিউল। পথচারী লোকটি কচকচে ২০ টাকার একটি নোট রিকশাচালক রবিউলের হাতে তুলে দেয়। সে অনেক খুশি হয়। প্যাডেলে পা চালিয়ে রিকশা চালানোর কথা ভুলে যায়।
জীবনের আজই প্রথম রিকশা চালালো রবিউল। আরো কয়েকটি ভাড়া টেনে রিকশা গ্যারেজে পৌঁছে দেয় সে।
এখন রাত বারোটা। চাঁদের আলোয় আলোকিত পৃথিবী। সবাই যার যার ঘরে নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে। পৃথিবী নীরব নিস্তব্ধ। থেকে থেকে পোকার মিটিমিটি আলো জ্বলছে। রাতের আকাশে তারারা দল বেঁধে ছোটাছুটি করছে। যেন আকাশে তারার মেলা বসেছে। আর অতিথি তারকাদের আনন্দ দিতে অন্য তারারা হেলে দুলে নাচছে। মজার মজার খেলা দেখাচ্ছে।
রবিউল ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। গাছ-পালা ঝোপ-ঝাড়ের নিচ দিয়ে। ওর গন্তব্যে কমলনগর। কমলনগরের প্রকৃতি দারুণ সুন্দর। গভীর রাতে প্রকৃতিতে বইছে ঠা-া আবহ। হিমহিম বাতাস ওর গায়ে হালকা মৃদু শিহরণ তুলছে। ওর কোমল দেহে আলতো পরশ বুলাচ্ছে। রবিউল আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির খেলা দেখছে। একমনে হেঁটে যাচ্ছে সে। মনের গহীনে অনেক দুঃখ উঁকি দিয়ে উঠছে। থেমে থেমে ওর বেদনাগুলো ভেসে উঠছে। হৃদয়ের গহীনে দুঃখহীন কোনো আনন্দ নেই। বারবার ওর দুঃখগুলো হৃদয়ের ক্যানভাসে জেগে উঠছে।
রবিউলের জীবনের রয়েছে দুঃখময় এক উপাখ্যান। এক জীবন। এক কাহিনী। সেদিনের আকাশে চাঁদ ওঠেনি। তারারা মেলা জমায়নি। জুঁইপোকা মিটিমিটি আলো জ্বালেনি। প্রকৃতির আবহ্ ঠা-া বাতাস বয়নি। গায়ে শিরশিরে ভাব অনুভূত হয়নি। আকাশের চেহারাও ভালো ছিলো না সেদিন। গুমোট অন্ধকারে বেলা কেটেছে। থেমে থেমে গুড়ুম গুড়ুম মেঘ গর্জন করেছে। সারাদিন বিজলী চমকিয়েছে। সন্ধ্যাবেলা শুরু হলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। একটানা বর্ষণ। বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। মোটেই থামছে না। এমনি এক করুণ মুহূর্তে শর্মিলার কোলজুড়ে আসে এক পুত্রসন্তান। শর্মিলার স্বামী অজয় রায়। স্বামীর নামের সাথে মিলিয়ে পুত্রের নাম রাখলেন বিজয় রায়।
পিতা অজয়ের জন্মস্থান বাংলার এক ব্রাহ্মণপাড়ায়। দেশ ভাগের সময় তারা পালিয়ে কলকাতা চলে গিয়েছিল। সেখানেই পুত্র বিজয়ের জন্ম। বিজয়ের জন্ম হয় বৃষ্টি বাদলের দিনে। জন্মই যেন বিজয়ের দুঃখ। কষ্টের সূচনা।
বিজয়ের বয়স এখন দুই। অনেকদিন পর ওর বাবা সপরিবারে বাংলায় বেড়াতে আসে। পিতার ভিটায়। বিজয়ের চাচার বাড়িতে। বিজয়ের চাচা অভিজিৎ রায় যুদ্ধের সময় দেশেই ছিল। রাজাকার সম্রাট আবুল আসাদের বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে থেকে গিয়েছিল। যুদ্ধের পর নিজভিটায় ফিরে আসে।
বিজয়ের চাচার কোনো সন্তানাদি নেই। তাই তিনি বড়ভাইয়ের পুত্র বিজয়কে কীভাবে তার কাছে রেখে দেয়া যায় তার জন্য ফন্দি আঁটলেন। বিজয়ের পিতা অজয় রায় কলকাতা ফিরে যাওয়ার দু’একদিন পূর্বে বেড়ানোর নাম করে বিজয়কে দূরে সরিয়ে রাখলেন। অজয় রায় পুত্রের অপেক্ষায় রইলেন। বিজয় এলেই কলকাতার দিকে রওনা হবেন।
কিন্তু কয়েকদিন চলে যাওয়ার পরও বিজয়কে নিয়ে ফিরে আসছে না বিজয়ের চাচা। খবর পাঠালে বিজয়কে না জানিয়েই বলে দেয় যে, বিজয় আরো কিছুদিন বঙ্গদেশে থাকতে চায়। এদিকে অজয়ের অফিস খুলে গিয়েছে। তাই তিনি আর কালবিলম্ব না করে পুত্র ছাড়াই স্ত্রীসহ কলকাতা ফিরে গেলেন। রেখে গেলেন আদরের পুত্র বিজয়কে। কিন্তু অজয় রায় জানতেন না এটাই যে, তার সবচেয়ে বড় বোকামি। তার ভাই তার সাথে কৌশলে প্রতারণা করেছে এটা তিনি ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারলেন না।
এদিকে বিজয় রায় পিতার কথা জিজ্ঞেস করলে চাচা জানায়, ‘তোমার বাবা আমাদের বাড়িতেই আছেন। একদিন এসে তোমাকে নিয়ে যাবেন।’
বিজয় চাচার কথা বিশ্বাস করে শান্তমনে অপেক্ষা করে। বাবার জন্য। বিজয় জানতো না যে ওর বাবা চলে গিয়েছেন। অনেকদিন অপেক্ষা করে। পিতার জন্য। কিন্তু ওর পিতা আর ফিরে আসে না। বিজয়কে নিতে আসেনা। বাবা না আসায় বিজয়ের মন খারাপ হয়ে যায়। বিষণœ মনে সময় কাটায়।
কিছুদিন পর ওর চাচা অভিজিৎ ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরে। বাড়িতে বাবাকে না দেখে ওর বুকটা ধড়ফড় করে ওঠে। বিজয়ের বাবা থেকেও নাই হয়ে যায়। ওর চাচা ওকে সান্ত¦না দেয়, ‘তোমায় তোমাকে আমার কাছে রেখে গিয়েছেন। যতদিন তোমার বাবা না আসে ততদিন আমিই তোমার বাবা। তুমি আমাদের কাছেই থাকো।’
বিজয় বাবার কথাকে বুকে চাঁপা দিয়ে থাকতে শুরু করে ওর কাকার সংসারে। ওর কাকা ওকে প্রথম প্রথম অনেক আদর করতো। স্নেহ করতো। বাজার থেকে মজা এনে দিত। মজার মজার চকলেট কিনে দিতো। দামি দামি আইসক্রিম এনে দিতো। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর শুরু হয় ওর ওপর মানসিক যাতনা। শারীরিক নির্যাতন।
এদিকে বিজয়ের বাবাকে মিথ্যা সংবাদ জানানো হয় যে, ‘বিজয় রোড এক্সিডেন্ট করেছে। অবস্থা খুবই সিরিয়াস। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সুতরাং আপনি বিজয়কে দেখার জন্য আজই রওয়ানা দিন।’
বিজয়ের পিতা রওয়ানা দিয়ে বাড়ি আসলে পরিকল্পনা মাফিক তাকে জানানো হয় বিজয় মারা গিয়েছে। আপনি আসার কিছুক্ষণ আগেই তাকে শ্মশানে জ্বালিয়ে এসেছি। শ্মশানে সেদিনই একটি লাশ পুড়ে স্তবক করা হয়। আর এদিকে বিজয়কে লুকিয়ে রাখা হয় অন্য জায়গায়।
বিজয়ের পিতা তখন পুত্র হারানোর শোক পালন করে বাড়ি ফিরে যায়।
বিজয়ের বয়স এখন বারো। ওর কাকার একমাত্র সন্তান। তাই সব দায়িত্ব এখন ওর উপরে। ঘরের কাজ থেকে নিয়ে মাঠের কাজ, খ্যাত-খামারের কাজ সব ওকে দিয়ে করাতো। আর কাজে যদি ভুল হতো তবেই শুরু হতো শারীরিক নির্যাতন। মোটা মোটা বেতের বাড়ি আর চেহারার উপর থাপ্পরের পর থাপ্পর। এভাবেই কাটতে লাগলো ওর প্রাত্যহিক জীবন। কোনোদিন মাটি কাটার কাজ। কোনোদিন ফসল তোলার কাজ। কোনোদিন হাতুড়ি-বাটালের কাজ। কোনোদিন গাছ কাটার কাজ। নানারকম কষ্টের কাজে ওর জীবন ছিল নিষ্পেষিত, নির্যাতিত। এত কষ্টের কাজ করার অভ্যাস ওর কখনোই ছিল না। এরপরও দু’মুঠো ভাত ওকে পেট ভরে খেতে দিতো না। খালি পেটে না খেয়ে কাজ করতে হতো। আর কাজ করতে করতে যখন ক্লান্ত হয়ে কাজ বন্ধ রাখতো তখনি শুরু হতো ওর উপর শারীরিক নিপীড়ন। এত কষ্টের মাঝে বিজয়ের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়লো। এত যাতনা, কষ্ট, নির্যাতন, নিষ্পেষণ, নিপীড়ন এই ছোটো বাচ্ছা সহ্য করতে না পেরে চলে যেতে চাইলে। দূরে কোথাও। যেখানে কোনো অত্যাচার নেই। নির্যাতন নেই। আছে সুখ। আছে শান্তি। আছে সুখের জীবন।
কিন্তু বিজয় অমুসলিম। হিন্দু পরিবারের সন্তান। সংখ্যাগরিষ্ঠ এই মুসলিম দেশে কে ওকে জায়গা দিবে? দু’মুঠো ভাত খেতে দিবে? ভালোভাবে জীবন ধারণে সাহায্য করবে? নানারকম প্রশ্ন ওর মাথায় কিলবিল করতে লাগলো।
পাশের বাড়িতে থাকতো ওর মতো কিশোর বয়সী এক ছেলে। ওর নাম মোবারক। মাঝে মাঝেই মোবারকের সাথে বিজয় ঘুরতে যেত। গল্প করতো। মোবারকের মাথায় ছিল সুন্নাতি টুপি। গায়ে সুন্দর পাঞ্জাবি। পরনে পায়জামা। বিজয়ের কাছে মোবারকের এই পোশাক অনেক ভালো লাগতো। সেও পরতে চাইতো। কিন্তু ধর্মের ভিন্নতা ওকে পরতে দিতো না। ধর্মই ওকে স্বাধীনভাবে চলতে মানা করতো। বাধা দিতো।
মোবারক মাদরাসায় পড়তো। ঢাকা শহরে। আজ মাদরাসার বন্ধে মোবারক বাড়ি এসেছে। বিজয় অনেকদিন পরে মুসলিম বন্ধু মোবারককে দেখে আনন্দিত হলো। মোবারকের কাছে ওর জীবনের সবকিছু খুলে বললো। দুঃখের ব্যাপারটা জানালো। এমন কথাও বললো যে, জালিম চাচার কাছ থেকে এখন আমি পালাতে চাই। থাকতে চাইনা এমন পরিবারে। কিশোর মোবারকের কাছে এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলো।
বিজয়ের দুঃখের কথা মোবারককে দারুণভাবে ব্যথিত করে তোলে। মোবারকের কচিমন কেঁদে উঠে। মোবারককে ওর দুঃখের কথা বলার সময় বিজয় ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে অনেক কেঁদেছে। তখন মোবারক ওকে শান্তনা দিয়েছিলো। এখন মোবারক নিজেই তার কান্না আটকে রাখতে পারছে না।
মোবারক কি করবে এখন বিজয়ের ব্যাপারে? কি বলবে বিজয় রায়কে?
কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছে না। কিন্তু মাদরাসায় পড়ুয়া কিশোর মোবারক অনেক বুদ্ধিমান। দারুণ মেধাবী। অনেক ভেবেচিন্তে কথা বলে। হুঁশ ছাড়া কথা বলা মোবারকের একদম অপছন্দ। কথার শেষ পরিণাম কি হবে, কোনদিকে মোড় নিবে কথার পরিণাম। কী ভাববে সমাজ। এসব চিন্তা করে মোবারক কথা বলে। মোবারক বয়সে কিশোর হলেও ওর কথার ওজন বড়োদের কথার মতো। মোবারক একজন চিন্তক কিশোর। পরিশেষে অনেক ভেবেচিন্তে মোবারক বিজয় রায়কে বললো, ‘তুমি মুসলমান হয়ে যাও। দেখি তোমার জন্য কিছু করতে পারি কিনা। তাছাড়া তুমি যদি মুসলমান হয়ে যাও তবে আশা করি তোমার আর কোনো কষ্ট থাকবে না। তুমিও আমার মতো চলতে পারবে। কাপড় পরতে পারবে। খাবার খেতে পারবে। তোমাকে কেউ নির্যাতন করবে না। কষ্ট দিবে না।’
মোবারকের মুখ থেকে এমন প্রস্তাব পেয়ে বিজয় আর দেরি করেনি। ওর অন্তরে নূরের জ্যোতি ঝিলিক দিয়ে উঠেছে। আলোর রৌশনি চমকিয়ে উঠেছে। হেদায়াতের দ্যুতি মশাল জ্বেলেছে। দ্বীনের প্রতি ওর মন আকৃষ্ট হয়েছে। ওর ভিতরের মানুষত্ব জেগে উঠেছে। আল্লাহ প্রদত্ত আলোকবর্তিকা জাগ্রত হয়েছে। কেননা আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে হেদায়াতের উপরেই সৃষ্টি করেছেন।
পরিশেষে চুপে চুপে একদিন বিজয় রায় গ্রামের মসজিদের হুজুরের কাছে গিয়ে মুসলমান হয়ে গেলো। হুজুর ওর নাম রাখলেন রবিউল। আসার সময় হুজুরের কাছে অনুরোধ করে ওর ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখতে। এরপর চলে এলো মোবারকের কাছে। প্রস্তুতি নিল পালানোর।
মোবারক কিশোর নব মুসলিম রবিউলকে নিয়ে চলে এলো ওর মাদরাসায়। মোবারক তার বাবাকেও জানায়নি তার ইসলাম গ্রহণের কথা। রবিউল পালিয়ে আসে। তাই ওর খোঁজ পড়ে যায়। কিন্তু পরর্তীতে আর কেউ রবিউলকে খুঁজে পায়নি। কারণ রবিউল কাউকেই জানায়নি। জানায়নি মোবারকও।
মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেয় রবিউলকে। মোবারকরা পারিবারিকভাবে তত সচ্ছল ছিলো না। তাই ভর্তির টাকা যোগাড় করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারল না রবিউলের জন্য। আর রবিউল যে নবমুসলিম এটাও জানানো হলো না ক্লাসের অন্যান্য সাথী ভাইদের। কারণ জানালে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করা শুরু করবে। অনেক ঝামেলাও হতে পারে। মাদরাসায় একমাত্র মোবারক, আর আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় আর কেউ জানে না মোবারকের ইসলাম গ্রহণের কথা। ক্লাসের সাথীরা জিজ্ঞেস করলে মোবারক তার ক্লাসের সবাইকে জানায়, রবিউল ওর চাচাতো ভাই। ওর বাড়ি আর মোবারকের বাড়ি এক জায়গায়ই। এতদিন স্কুলে পড়েছে রবিউল। এখন থেকে মাদরাসায় পড়বে। তাই আমি নিয়ে এসেছি।
আজ থেকে শুরু হলো রবিউলের নতুন জীবন। নতুন ভাবনা। নতুন পৃথিবী। স্বাধীনতার নতুন স্বাদ। জীবনকে সাজাবার নতুন সুযোগ। আদর্শ মানুষ হওয়ার উপযোগী স্থান। নতুন জীবনে পা দিয়ে রবিউল অনেক খুশি। ভুলে যায় এতদিনে দুঃখ-কষ্ট, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা ও জুলুম-অত্যাচারে দাগ। ইসলাম গ্রহণের পর রবিউল দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে, ‘আজ থেকে মরণ পর্যন্ত সদা সত্যের পথে চলবো। আমার মতো নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের পক্ষে প্রয়োজনে লড়াই করবো। অন্যায়ের হাত ভেঙ্গে চুরমার করে দিবো, ইনশাআল্লাহ।’
রবিউল হিন্দুর ঘরে জন্ম নিতে পারে। কিন্তু কারো কাছে চাওয়ার পাত্র নয় সে। ও কোনো মানুষের কাছে চাওয়াকে পছন্দ করে না। কেউ তার প্রতি অনুগ্রহ করুক এমনটাও চায় না। যেদিন থেকে ঈমানের দৌলত লাভ করেছে সেদিন থেকে সে প্রতিজ্ঞা করেছে, ‘একমাত্র আল্লাহর কাছে ছাড়া আর কারো কাছে হাত পাতবো না। না খেয়ে থাকবো তবুও কারো অনুগ্রহ গ্রহণ করবো না।’ এটা ওর প্রতিজ্ঞা। কর্ম করে পড়ার খরচ চালাতে রাজি। কিন্তু কারো কাছে ধরনা দিতে রাজি না। রবিউল তার প্রতিজ্ঞার ব্যাপারে অটল অবিচল।
সে তার প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য রিকশা চালানোর কাজ নেয়। সারাদিন মাদরাসায় ক্লাস করে। সন্ধ্যার পর মাদরাসার অনেক দূরে চলে যায়। যেখানে কেউ ওকে চিনবে না। সেখানে গিয়ে গ্যারেজ থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে রিকশা চালায় গভীর রাত পর্যন্ত। যাতে কেউ না দেখে। গভীর রাতে আবার ফিরে আসে কমলনগর মাদরাসায়। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত চালায়। রিকশা চালানোর টাকা দিয়ে নতুন পাঞ্জাবি বানায়। টুপি কিনে। নতুন জামা কাপড় বানিয়ে ছাত্রদের দেয়া পুরাতন কাপড় সদকা করে দেয়।
রবিউল আজও মাদরাসায় পড়ছে। কমলনগর মাদরাসায়। ওর ইচ্ছা অনেক বড়ো আলেম হওয়ার। ওর মতো থাকা অমুসলিম কিশোরদের মুসলিম বানাবার। নির্যাতনের হাত থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষা করার। রবিউল এগিয়ে চলছে। এগিয়ে চলছে ওর স্বপ্ন। বাস্তবায়িত হচ্ছে ওর প্রতিজ্ঞা।
[বি: দ্র: সত্য কাহিনী অবলম্বনে রচিত। নবমুসলিম ছেলেটি বর্তমানে ঢাকার সাভারের এক মাদরাসায় পড়ে]
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন