বেসুরো রাগিণী
বাদল বিহারী চক্রবর্তী
এক টুকরো জমিন ছিল উর্বর।
দিনকে দিন পড়ে থাকা ইট, কাঁকর আর বালির স্তূপ
সরিয়ে নেয়ার এক ধরনের উন্নাসিকতায়
বীতশ্রদ্ধ মৌসুমী বায়ুরা বারবার ব্যর্থতার একেকটি
সনদপত্র ধরিয়ে দিয়ে গেছে তার হাতে।
এখন চৈত্রের দাবদাহ।
মৌসুমীরা কবে আসবে, জানা নেই তার ভাল।
জীবন-চৈত্রের এই কাটখোট্টা ইমারত,
ভাষাহীন শানশওকত নির্বিকার সব আজ
ফ্যালফ্যাল চেয়ে থাকা, শুধু মৌসুমীর উপহাস,
উপেনের বিবেকী গলায়-
‘যত হাসো আজ, যত করো সাজ, ছিলে দেবী-হলে দাসী।’
তাই বলি, ওহে কাব্যের আজিকার দাস,
এ যে অর্বাচীন পা-ুলিপির অনুর্বর চাষ,
সময়ের কাজ তুমি করোনি যে সময়ের হালে ;
আশাবরী রাগ কি কভু শোনাবে ভাল সেই-ইমনের কালে?
বিশ্বস্ত ফসিল
আহমদ রাজু
থাক না ওসব কথা, যে কথাগুলো
ভেসে গেছে বাণের জলে
তাকে আর আগ্নেয়গিরির লাভায়
ভাসানোর প্রয়োজন কী?
নিষ্ঠুর পথ ছিন্নভিন্ন করে তোলে আজো
মখমল সময় আমার। সৃষ্টিগুলো কোথায় হারিয়েছে
জানি না; তুমি কি ভেবেছিলে কখনো
চাঁদের জ্যোৎ গা এলিয়ে দেবার মুহূর্ত
ধূর্ত ঈগলের ঠোঁটে এভাবেই হারিয়ে যাবে?
অগ্নিলা, কি এক অদ্ভুত পৃথিবীতে বিচরণ তোমার-আমার তাই না?
তুমি দক্ষিণ কোণে তপস্যা করো সূর্য স্নানে
আর আমি উত্তরের উতাল হাওয়ায় ভাসিয়ে
দিই কাগজের নৌকা।
মনে আছে, অগ্নিলা, যেদিন আকাশে উঠেছিল
নতুন চাঁদ- বাতাসে নবান্নের গন্ধ
তুমি তখন ভেন্নাপাতায় হৃদয় সাজিয়ে
বলেছিলে, ‘সখা অনন্ত যৌবনে যুদ্ধ বাঁধে রোজ
সমাপ্তি হয় আলোকিত সন্ধ্যায়; যদি কখনও
আর সূর্য না ওঠে- ভুলে যাই যৌবনের স্বাদ
আমি পূর্ণতিথিতে জেগে রইবো; বিশ্বাস করো
এ আমার ভালোবাসার বিশ্বস্ত ফসিল।’
অগ্নিলা, আমার বিশ্বাস অবিশ্বাসের যাঁতাকলে
নিষ্পেষিত নয়। ভগ্নদশায় ক্ষয়িষ্ণু শরীর
ভেঙে খান খান হৃদয়ের জ্বরে। তবুও জেনে রেখো
সময়ে কলমী ফোটে কেষ্টো ডাঙ্গায়।
তোমার ভালোবাসায় ভরা সভ্যতার চিঠি
পরিপূর্ণ একটা কাগজের নৌকা।
উল্কাসুখের কাছে পরাজিত আমি
ভাসিয়ে দিয়েছি নয়নের জলে।
বিচ্ছেদের সূত্র খুঁজি
সুমন ইসলাম
কার্তিকের নৈঃশব্দ বিছানা ছেড়ে দেখো, মধ্যহ দুপুররাতে
নির্মল শিশিরভেজা পাতাদের ডালে ঝুলে থাকে বাদুরবৃত্তান্ত গল্প-
তাহাদের সহিষ্ণু ধ্বনির অন্তরালে পচাকদম ফুলগুলোর হৃদস্পন্দনের
মাতামাতি কেবল ঘরের চাল গড়িয়ে গেলো। তখন ঘুমবুদ্ধের যন্ত্রণা বাড়ে,
তিনি যন্তর-মন্ত্রর উপদেশ ছুড়েন। তখন আমার কাছে কোনো শব্দই থাকে না।
আমি শুধু তোমার আমার মধ্যখানে বিচ্ছেদের সূত্র খুঁজি।
মহসিন হোসাইনের দুটি কবিতা
১. মিশে যাবে
ঈষাণ অগ্নি নৈঋত ও বায়ুকোণ মিশে
গেছে হাসপাতালের ছাদ ভেদ করে।
আরো ছয়দিক মিশে যাবে হয়তো এখনি।
২৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৩
বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল, ঢাকা।
২. পারো নাকি আর
একটু পরেই সূর্যের আলোক ধুয়ে দেবে
সকল কালিমা, দুঃখের নিশানা।
আমি তবু পড়ে রবো দুঃখের কলুষ
গহ্বরে সারারাত সারাদিন।
আমার বৃষ্টিতে ভেজা দিনগুলো
বসন্তের হাসিতে হাসিতে পারে নাকি আর?
২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৩
বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল, ঢাকা।
[কবিতাদুটি বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের সিটে বসে প্রেসক্রিপশনের
অপর পৃষ্ঠায় রচনা করেন কবি। সা. সম্পাদক]
অদৃষ্টবাদীর সওদাপত্র
কাজী রিয়াজুল ইসলাম
ইদানীং প্রায় প্রতিদিনই আড্ডায় যাই বিভিন্ন কবরস্থানে;
হয়তো বা মৃত্যুচিন্তার উজান ¯্রােতের টানে।
নিঝুম অন্দরমহলে হাজারো আত্মার কথাবার্তা শুনে
ভুলে যাই সারাক্ষণ এই মন যে রঙিন বাসনার জাল বুনে।
কারো দেউলিয়ার মতো হা-হুতাশ :
কেন ধূর্ত শেয়ালের মতো শরিকের হক করেছি গ্রাস;
কারো সন্তানহারা পিতার মতো আর্তচিৎকার :
আদৌ কি প্রয়োজন ছিল সুদের টাকায় এই অট্টালিকার;
কারো বয়লারে জ্বলন্ত কয়লার মতো শাঁ শাঁ আর্তনাদ :
কেনই বা দুনিয়ার বুকে দেখালাম ক্ষমতার দাপট দিন-রাত।
কারো বা ব্যর্থপিতার মতো আপসোস : হে মালিক!
দুনিয়ার মায়াজালে পড়ে ইবাদত করতে পারিনি ঠিক ঠিক।
হাজারো আত্মার দীর্ঘনি:শ্বাসের টর্নেডো-ঝটিকা
চারদিক ছড়িয়ে দিতে চায় যেন গনগনে অগ্নিশিখা।
সবার কথা শুনে কাঁদে এই অদৃষ্টবাদী,
তবে কারো জন্য নয়, আপন জমিন আজও তো অনাবাদি।
হতাশা অতঃপর...
আরিফ মুহাম্মদ
ছায়া ভালোবেসে ঝরেপড়া গোলাপের পাপড়ির মতো
স্মৃতির দহনে পুড়ে পুড়ে শাব্দিক কথা নিয়ে
ঝরে গেছে প্রণয়ের নীল কবিতা।
বিষাদের কালো মেঘে ছেয়ে গেছে গোলাপের সাদা হৃদয়।
হলুদ মিছিলে চিৎকার করে ক্ষয়িষ্ণু সময়-
‘কী লাভ আর অকেজো স্বপ্ন দেখে?’
জলের মতো ভালো আছি সমুদ্র স্নানে
সমুদ্রের অভেদ্য রহস্যে-
চোখের চিলেকোঠায় কুয়াশা স্নানে শীতার্ত হৃদয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন