যেকোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টের মাত্র একদিন আগে গ্যালারির টিকিট উন্মুক্ত করে বিসিবি। সেই টিকিট কিনতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বিস্তর ভোগান্তিতে পড়েন দর্শকরা। সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলেও দেখা গেছে এই চিত্র। অথচ তথ্য প্রযুক্তির যুগে এই বিড়ম্বনা সহজেই দূর করা যেত। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে সেই পথে হাঁটেনি বিসিবি, ইংল্যান্ড সিরিজেও তাই আগের বিড়ম্বনাই থাকছে। এই সিরিজেও মাঠে বসে খেলতে দেখচে উৎসাহীদের টিকিটি কিনতে হবে লাইনে দাঁড়িয়ে। হোম অব ক্রিকেটে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের টিকিটমূল্য নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। ইস্টার্ন স্ট্যান্ড গ্যালারির টিকেটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের টিকেটের দাম সবচেয়ে বেশি- ১৫০০ টাকা। ৩০০ টাকা নর্থ/সাউথ স্ট্যান্ড গ্যালারির টিকিট। ক্লাব হাউজের টিকিট মিলবে ৫০০ টাকায়। আর ভিআইপি স্ট্যান্ড গ্যালারির টিকেটের মূল্য রাখা হয়েছে ১০০০ টাকা। আজ থেকেই মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের টিকিট কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যাবে সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত। প্রাপ্তি সাপেক্ষে টিকিট মিলবে ম্যাচের দিনও।
বাংলাদেশে যেকোনো খেলায় দর্শকদের চাহিদা থাকে বিপুল। এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে এতদিন পর্যন্ত কোন সুন্দর ব্যবস্থাপনা দাঁড়ায়নি। টিকিট কিনতে মানুষের হয়রানির সঙ্গে যোগ হয় কালোবাজারির দৌরাত্ম্য। এবারের মতো দর্শকদের ভোগান্তির কথা উপেক্ষীত থাকলেও আসছে আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকে পরিস্থিতি বদলানোর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়েছেন বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনলাইনে টিকিট বিক্রির ভাবনার কথা জানান নিজামউদ্দিন, ‘অবশ্যই সম্ভব হবে (অনলাইনে টিকিট বিক্রি), যদি আমরা করতে পারি এবং আমাদের সেই পরিকল্পনা রয়েছে। কিছু কারণে আমরা এবারও করতে পারিনি। আপনি যেটা বললেন, আসলেই মানুষের কষ্ট হয়। এটা (অনলাইনে টিকিট) কিছু কমফোর্ট দিতে পারে অবশ্যই, যদি অনলাইন বা ইউজার ফ্রেন্ডলি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থাকে। এবারও পারিনি করতে। চেষ্টা করব আগামী অন্তত আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকে যেন থাকে।’
এর আগেও বেশ কয়েকবার এই বিষয়ে আলাপ উঠলেও পরে আর ডিজিটাল পথে যায়নি বিসিবি। কোন কারণে সেটা করা গেল না তা খোলাসা করতে পারেনি বিসিবির সিইও, ‘সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদি এটা করা যায়, খুব একটা জটিল প্রক্রিয়া নয়। কিছু স্পন্সরের বিষয় থাকে, কিছু বাণিজ্যিক ব্যাপার থাকে। এই বিষয়গুলো আমরা চূড়ান্ত করতে পারিনি বলে...। হয়তো আমরা নিজেরা সরাসরি করে ফেলতে পারতাম। তবে একটা প্ল্যাটফর্ম, এরপর অন্যান্য যে বিষয়গুলো থাকে, এগুলো করে আমরা করে ফেলতে পারব।’
আগামীকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড। একদিন বিরতি শেষে ৩ মার্চ দ্বিতীয় ম্যাচ। এরপর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৬ মার্চ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল। ইংল্যান্ড সিরিজ শেষ হওয়ার চারদিন পরই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজ থেকেই কিছু টিকিট অনলাইনে বিক্রির কথা জানালেন বিসিবি প্রধান নির্বাহী, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী (আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকে)। অন্তত নির্দিষ্ট শতাংশ টিকিট অনলাইনে দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম আমরা প্রস্তুত করে ফেলব।’
টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া ছাড়াও দর্শকদের হয়রানির আরও কারণ থাকে স্টেডিয়ামে। মাঠের ভেতর খাবার ও পানির দাম রাখা হয় অত্যধিক। সেই খাবারের মানও থাকে অতি নিম্ন। এবার এসব বিষয়ও পর্যবেক্ষণ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি, ‘আমি জানি বিষয়টি (খাবারের বেশি দাম রাখা হয়)। এটা আমাদের নলেজে এসেছে। যখন আমার কাছে বিষয়টি আসে, আমি তাৎক্ষনিক সব ভেন্ডারকে প্লে অফের আগে ডেকে তাদেরকে অ্যালার্ট করে দেওয়া হয়েছে যে তারা যদি এগুলো আবার করে বা আমাদের নলেজে আসে, ভবিষ্যতে আমরা তাদেরকে বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে বিবেচনা করব না।’
মাঠের খাবারের দাম বিসিবিই ঠিক করে দেয় বলে জানান নিজামউদ্দিন। তবে সেই দাম নিয়ম না মানার কারণেই হয় হেরফের, ‘টেন্ডার নয়, বরাদ্দ হয়। আমাদের রেট ফিক্সড করা থাকে। তার পরও... ধরেন সরকারও তো অনেক নিয়ম-কানুন বেঁধে দেয়, তার পরও অনেক রকম বিষয় চলে আসে। এগুলোকে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের যে ভলান্টিয়ার টিম আছে, তাদেরকে বলে দিয়েছি, এই ধরনের কোনো কিছু নলেজে এলে দ্রুত অ্যাকশন নেওয়ার জন্য। আমার মনে হয়, বিপিএলের এলিমিনিটর ও ফাইনালে কিছুটা হলেও প্রভাব ছিল, ওদের সঙ্গে সভা করার পর।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন