বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

হ-য-ব-র-ল অবস্থা মিডিয়া সেলের

স্পোর্টস রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ভবিষ্যতের তারকা তৈরীর লক্ষ্যে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) ২০১৮ সালে প্রথমবার আয়োজন করে বাংলাদেশ যুব গেমস। এ ধারাবাহিকতায় যুব গেমসের দ্বিতীয় আসর শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। যার নামকরণ হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ্য পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের নামে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের খেলা শেষে শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের চূড়ান্ত পর্ব ঢাকায় শুরু হয় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এই ডিজিটাল যুগেও বিওএ এনালগেই রয়ে গেছে! চূড়ান্ত পর্বে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিকদের যে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়েছে গেমসের মিডিয়া সেল, সেই কার্ডে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের নাম, প্রতিষ্ঠান ও পদবী হাতে লিখে দেওয়া হয়েছে! যা সবার কাছেই দৃষ্টিকটু লেগেছে। বর্তমানে বিশ্বের কোন দেশে এমন হাতে লিখে কার্ড দেওয়া হয় না। এ বিষয়ে বিওএ’র অন্যতম সহ-সভাপতি, যুব গেমস অ্যাক্রিডিটেশন কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের সভাপতি লে. জেনারেল (অব.) মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নামের বানানই ভুল লেখা হয়েছে। কাকে বলবো? দেখুন গেমস উপলক্ষে স্টিয়ারিং কমিটি রয়েছে। তাদের কাজ হলো প্রতিটি সাব-কমিটির চেয়ারম্যাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সভা করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় একটি সভাও করেনি কেউ। কোথায় সমস্যা রয়েছে তা কাকে বলবো ? কথা শোনার কেউ নেই।’ মঈনুল অভিমানের সুরেই জানান, বিওএতে এমন একজন আছেন যিনি সব কিছুই করতে চান। কাউকে পাত্তাও দেন না। গেমস চালাতে হলে সবার সমন্বয় প্রয়োজন হয়। কিন্তু তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আর্মি স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে বসা অতিথিদের কাছে দেয়া হয়েছিল একটি করে স্যুভেনির। কিন্তু সেই স্যুভনিরে মারাত্বক ভুল করা হয়েছে। স্যুভনিরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর বানী অনেক পিছনে ছাপা হয়েছে। এটা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন ভিআইপিতে বসা অতিথিরা। কারোই চোখ এড়ায়নি এ ভুলটি। বিষয়টি টের পেয়ে বিওএ কর্তারা তড়িঘড়ি করে সবার কাছ থেকে বইটি নিয়ে যান। তখন বিওএ থেকে বলা হয়, সংশোধন করে পরে স্যুভেনির দেওয়া হবে। সূত্র আরও জানায়, এই ভুলটি হয়েছে স্যুভেনির বাঁধাইয়ের সময়ে। প্রশ্ন উঠেছে যারা এই কমিটির দায়িত্বে আছেন তাদের কাজ কি ছিল ? অথচ অনেকে কমিটিতে থাকার জন্য লবিং করে থাকেন।
এদিকে যুব গেমস উপলক্ষে একটি শক্তিশালী মিডিয়া সেল গঠন করা হলেও চূড়ান্ত পর্বের চতুর্থদিন পর্যন্ত চরম হ-য-ব-র-ল অবস্থা এই সেলের। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা গেমসের তথ্য জানতে চেয়ে সহযোগিতা পাচ্ছেন না। এছাড়া ভুলেভরা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তো আছেই। ২৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিসপ্লে করেছে ‘ভারতেশ্বরী হোমস’। কিন্তু আগেরদিন মিডিয়া সেল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছিল ডিসপ্লে করবে ‘ভারতীয় হোমস’ লিখে। অন্যদিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারী দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশে ‘মিডিয়া কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তি’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে দেয়া হয়নি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করার কার্ড। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিডিয়া সেলে সত্যিই একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রাখা হয়েছে। যিনি ২০১০ সালের ২৫ নভেম্বর চীনের গুয়াংজুতে এশিয়ান গেমস কাভার করতে গিয়ে চীনের এক সাংবাদিকের ‘ল্যাপটাপ’ চুরির দায়ে দেড় হাজার ডলার জরিমানা দিয়েছিলেন। তার কারণে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অন্য সাংবাদিকরা তখন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। এই ব্যক্তি ওই সময় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এখনও তিনি এই সংস্থায় চাকুরিরত আছেন। তার ‘ল্যাপটপ’ চুরির ঘটনায় পরেরদিন দৈনিক জনকন্ঠ এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ২৪ ডটকম-এ সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সর্বশেষ ২০২১ সালের অক্টোবরে দেশে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু ৫ম সাউথ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা শেষে সাংবাদিকদের গিফটগুলো এই ব্যক্তি সংশ্লিষ্টদের না দিয়ে তা নিজে রেখে দিয়েছিলেন। এছাড়া মিডিয়া সেলে কাজ করা আরেকজন ব্যক্তি সার্টিফিকেট জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত বলে জানা গেছে। এমন ব্যক্তিদের যুব গেমসের মতো বড় আসরের মিডিয়া সেলে জায়গা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে বিওএ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন