ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে প্রায়শয়ই তলানির দলের বিপক্ষে বড় দলগুলোকে হোচট খেতে হয়। পরশুরাতে আর্সেনালের বিপক্ষে ঠিক তেমন কিছুই ঘটতে যাচ্ছিল। বোর্নমাউথের বিপক্ষে ম্যাচের ১০ সেকেন্ডে গোল হজম করা গানাররা এক পর্যায়ে পিছিয়ে পড়ে ২-০ ব্যবধানে। তবে দীর্ঘ দেড় যুগ পর আবারও লিগ শিরোপার স্বপ্নে বিভোর আর্সেনাল সেখান থেকে ঘুরে দাড়িয়েছে। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে জয় নিশ্চিত করেন রিস নেলসন। ঘুরে দাঁড়ানোর রোমাঞ্চকর এক কাহিনীর জন্ম দিয়ে ম্যাচটা আর্সেনাল জিতে নিয়েছে ৩-২ ব্যবধানে।
এমিরেটস স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৫৭ মিনিটে দ্বিতীয় গোল হজম করার পরই ঘুরে দাঁড়ায় আর্সেনাল। স্বাগতিকদের খেলায় ফেরায় দুই বদলি খেলোয়াড়ের কল্যাণে। ম্যাচের ৬২তম মিনিটে প্রথম ব্যবধান কমান ঘানাইয়ান ফুটবলার টমাস পার্টি। মাত্র ৭ মিনিটের ব্যবধানে গানারদের সমতায় ফেরান উইলিয়াম হোয়াইট। তবে তাদের আক্রমণের ধার বজায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল পইয়েন্ট ভাগাভাগি করেই মাঠ ছাড়তে হবে মিকেল আর্তেতার শিষ্যদের।
কারণটাও অনুমেয়। প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও প্রিমিয়ার লিগের কোনো ম্যাচ জিতেছিল আর্সেনাল। উত্তর লন্ডন ডার্বিতে ২০১২ সালে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫-২ ব্যবধানে তারা উড়িয়ে দিয়েছিল টটেনহামকে। মাঝে গানাররা এই ধরনের পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে ৬৫ বার, পরশু যখন মনে হচ্ছিল সংখ্যাটা ৬৬ হতে যাচ্ছে তখনই বাঁ-পায়ের বুলেট গতির শটে দলকে অসাধারণ এক জয় এনে দেন দলে অনিয়মিত হয়ে যাওয়া নেলসন। অবিশ্বাস্য জয়ের পর আর্তেতা জানান, ‘প্রথম গোলের জন্য আমাদের ক্ষুধা ছিল। এরপর আবহ পাল্টে যায়। চোটের কারণে রিস খুব বেশি খেলার সুযোগ পায়নি। এই ম্যাচে সে মাঠে নামল এবং নিজেকে মেলে ধরল। স্টেডিয়ামে দর্শকদের সঙ্গে এমন ম্যাচের আবেগ অনুভব করতে পারাটা অবিশ্বাস্য।’
একইরাতে ফিল ফোডেন এবং বদলি হিসেবে নামা বের্নার্ডো সিলভার গোলে লিগের লড়াই জমিয়ে দিল ম্যানচেস্টার সিটি। পেট্রো ডলারের জোরে বড় দলের তকমা পাওয়া নিউক্যাসলের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পায় পেপ গার্দিওলার দল। সাম্প্রতিক সময়ে ফিল ফোডেন দারুণ ফুটবল খেলছেন, তবে এরপরও প্রিয় শিষ্যকে আরও তাড়িত করতে করতে গার্দিওলা বলেন- মাঠে নেমে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে ২২ বছর বয়সী ইংলিশ ফরোয়ার্ডকে। পরশু ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ম্যাচের ১৫ মিনিটে ফোডেনের অনবদ্য গোল যেন ছিল গুরুর ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। রদ্রির বাড়ানো বল ধরে গতিতে চার ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে ডান পায়ের শটে তিনি করেন দৃষ্টিনন্দন এক গোল। ম্যাচের পরে উল্লসিত গার্দিওলা বলেন, ‘আমি ফোডেনের থেকে এমন আগ্রাসনই আশা করি। জ্যাক গ্রিলিশের সঙ্গে ওর বোঝাপড়া অনেক শানিত হয়েছে, সেটা আমাকে স্বস্তি দিচ্ছে। তাছাড়া ইপিএল যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেখানে প্রত্যেকটি ম্যাচে আমাদের এমনই আক্রমণাত্মক এবং পরিকল্পিত ফুটবল খেলতে হবে। এই জয় আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ ইপিএলে শীর্ষে থাকা আর্সেনালের পয়েন্ট ৬৩, অন্যদিকে সিটির সংগ্রহ ৫৮ পয়েন্ট। উভয় দলই খেলেছে ২৬টি ম্যাচ।
ফরাসি লিগ ওয়ানে পিএসজির হয়ে আগেই এদিনসন কাভানিকে ছুঁয়ে ফেলেছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। উরুগুয়ের স্ট্রাইকারকে ছাড়িয়ে পিএসজির সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার জন্য দরকার ছিল মাত্র এক গোল। পরশু ঘরের মাঠে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে নতের বিপক্ষে গোল করে রেকর্ডটিকে এককভাবে নিজের করে নিলেন ফরাসি ফুটবলের যুবরাজ। তার নামের পাশে এখন ২০১ গোল। এমবাপের রেকর্ড গড়ার রাতে ৪-২ গোলে জিতেছে পিএসজি।
ফিফা বর্ষসেরার পুরষ্কার জিতে মাঠে নেমেই ম্যাচের ১২ মিনিটে পিএসজিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। লিগে ওয়ানে এটি আর্জেন্টাইন তারকার ১৩তম গোল। পাঁচ মিনিট পরে স্বাগতিকরা আবারও এগিয়ে যায় আত্মঘাতী গোল থেকে। তবে ম্যাচের প্রথামার্ধেই দুই গোল শোধ করে খেলায় ফিরে আসে নতে। কিন্তু তারকা খচিত পিএসজির কী পয়েন্ট ভাগাভাগি করলে হয়! ৬০ মিনিটে এগিয়ে যায় পিএসজি। যে গোলের উৎসে ছিলেন এমবাপে। বক্সের বাইরে থেকে তার শূন্য ভাসিয়ে দেয়া বলে হেড করে গোল করেন দানিলো পেরেইররা। আর ম্যাচের যোগ হওয়া সময়ে এই মোউসুমে লিগের ১৮তম গোলটি করে পিএসজির রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান এমবাপ্পে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন