নিজের ব্যাটিং অনুশীলনের ফাঁকে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ছুটলেন উইকেটের কাছে। তার সঙ্গে এসে জুটলেন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ঠিক তখনই ঘটল অনভিপ্রেত এক ঘটনা। সজোরে হাঁক দিয়ে তামিম গলা হাঁকালেন ‘সাকিব, এই সাকিব’ বলে! মাঠের বাইরে শীতল সম্পর্কের আলোচনা থাকা সত্বেও অধিনায়কের ডাকে ছুটে এলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রান বান্ধব উইকেটের সুনাম আছে। প্রধান কিউরেটর প্রবীণ হিঙ্গারনিকার ও তার ডেপুটি জাহিদ রেজা বাবু বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে হয়ত উইকেটের ধরণ নিয়ে ধারণা দিচ্ছিলেন। দুই কিউইরেটের সঙ্গে তাদের আলাপ চলল খানিকক্ষণ। এই আলাপের বিষয়বস্তু আঁচ করতে অসুবিধা হবার কথা নয় কারোরই। দুই ম্যাচ হেরে চট্টগ্রামে তামিমদের সামনে যে রানপ্রসবা সাগরিকায় হোয়াইটওয়াশ লজ্জা এড়ানোর চ্যালেঞ্জ। আজ বেলা ১২টায় এখানেই শেষ ওয়ানডেতে নামবে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড।
সিরিজের প্রেক্ষিতে আজকের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডের গুরুত্ব সেভাবে নেই। মিরপুরেই যে সিরিজ জেতার কাজটা সেরে ফেলেছে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ দলের জন্য অবশ্য গুরুত্বটা অন্য দিক থেকে। ২০১৪ সালের পর ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশের তেতো অভিজ্ঞতা হয়নি। এর বাইরেও অন্তত শেষ ম্যাচটা জিতলে নিজেদের সামর্থ্যের একটা জানান দেওয়া হয়। গুরুত্বহীন ম্যাচেরও তাই একদিক থেকে অধীক গুরুত্ব থাকা অনুমিত। তবে মিরপুরে যে কাজ হয়নি, সেটা চট্টগ্রামে হওয়ার আশা বেশ কঠিন। সিরিজ শুরুর আগের মাঠের বাইরের বিতর্ক মিলিয়ে বাড়তে পারে চাপ। নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে উঠা প্রশ্নও এই ম্যাচ হারলে দূর করা হবে কঠিন। সেসব বাস্তবতায় চিন্তাটা তাই প্রবল। প্রচুর রান হওয়ার খ্যাতি আছে এখানে। চিন্তার জায়গা জুড়ে আছে বাইশগজও।
গত ডিসেম্বরে এই মাঠে হওয়া সব শেষ ম্যাচে ৪০৯ রান করে ফেলেছিল ভারত। ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ইশান কিশান। ইংল্যান্ড এই মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দল। তাদের বিপক্ষে পাটা উইকেটে খেলার ভয়টা কোথায় বলে দেওয়ার দরকার নেই। সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক তামিম অবশ্য জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই সিরিজের শেষ ম্যাচটা চট্টগ্রামে রেখে নিজেদের কঠিন চ্যালেঞ্জে বাজিয়ে নিতে চান তারা। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে হোয়াইটওয়াশের সামনে থাকায় সেই চিন্তা কি এখনো আছে? হেরাথের কন্ঠে সেই চিন্তা থেকে সরে আসারই সুর। অন্তত ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের মতোন উইকেট মনে হচ্ছে না হেরাথের, তাই এখানে আবার তেমন কিছু (৪০০ রান) হওয়ার পরিস্থিতিও দেখছেন না তিনি, ‘এটা ভিন্ন রকম উইকেট (ভারত সিরিজ থেকে)। কাজেই আমরা এই পিচে একই জিনিস হবে এমনটা ভাবছি না। আমরা দলের জন্য সেরাটা করতে চাইব।’
চট্টগ্রামে হওয়া সবশেষ ম্যাচটাতে চোখে সর্ষে ফুল দেখেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। কিশানের তান্ডবে সেদিন চারশো ছাড়িয়ে গিয়েছিল ভারত। মিরপুরের মন্থর উইকেটেই ৩২৬ রান করে আসা ইংল্যান্ড এমন উইকেট পেলে কি করবে? এই নিয়ে বাংলাদেশ দলে চাপা অস্বস্তি থাকলে ভুল বলা হয় না। হেরাথও জানিয়ে দিলেন, ভিন্ন রকম উইকেটের কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে চলেছেন টাইগার স্পিনাররা। উইকেট একটু মন্থর হলে, টার্ন করলে, উঁচু-নিচু বাউন্স থাকলে ইংল্যান্ডের মতন দলগুলোর বিপক্ষে সুযোগ থাকে বাংলাদেশের। কিন্তু উইকেট যদি হয় রানে ভরা। সেখানে এক ঝাঁক হিটারদের বিপক্ষে পেরে উঠা শক্ত। হেরাথ বলতে চাইলেন আগের মতন কিছু হবে না এবার, ‘এটা ভিন্ন রকমের উইকেট। আমরা অবশ্যই একই জিনিস প্রত্যাশা করছি না। আমরা দলের সেরাটা বের করতে চেষ্টা করছি। তুলনা করলে মিরপুরে স্পিনাররা বেশি সুবিধা পায়।’
চট্টগ্রামের উইকেটে সব সময় থাকে ভিন্নতা। এখানে স্পিনারদের এত সুবিধা সাধারণত থাকে না। সাগরিকার উইকেটে সাধারণত থাকে ব্যাটারদের সুবিধা। কাজেই শুধু স্পিনার নয় পেসারদেরও কঠিন চ্যালেঞ্জ দেখছেন হেরাথ, ‘স্পিনার ও পেসারদের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। উইকেট শুস্ক মনে হচ্ছে। এক্ষেত্রে পেস বোলাররাও চ্যালেঞ্জে পড়বে। স্পিনারদের জন্যও ব্যাপারটা তাই।’ লঙ্কান স্পিন কোচ তাই এক্ষেত্রে ব্যাটারদের এগিয়ে আসার ভূমিকা দেখছেন বড় করে, ‘ব্যাটার হিসেবে আমাদের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে।’
ইংলিশ পেসার মার্ক উডের কথায়ও মিলল অভিন্ন আভাস। উইকেটের মাঝে হেঁটে তার সেটা মিরপুর থেকে বেশ শক্ত মনে হয়েছে। পেসারদেরও তা সাহায্য করবে বলে মনে করে না উড। এমন উইকেট দেখে নিজেদের দলের ব্যাটারদের রোমাঞ্চিত দেখছেন তিনি, ‘সম্ভবত পেসারদেরও সাহায্য করবে না। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে উইকেট কীভাবে আচরণ করে, সেভাবেই মানিয়ে নিতে হবে। তবে হেঁটে মনে হয়েছে বেশ শক্ত। মিরপুরের উইকেট একটু চেটচেটে, কিছুটা নরম। হয়ত এটা পেস বোলারদের জন্য একটু স্পোর্টিং হবে। যদি ঘূর্ণি উইকেটও হয়, আমরা মানিয়ে নিতে পারব। ভারতে গিয়েও হয়ত এরকম উইকেট পাব আমরা। আমরা সেখানে যাব এবং চাইব বিশ্বকাপ জিততে। আমাদের ব্যাটিং ইউনিট নিশ্চয়ই রোমাঞ্চিত হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন