স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছেন, বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের কাজ হচ্ছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা। তাই তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চায়। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়ে বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও একই ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভাকে সফল করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে প্রমাণ হয়ে গেছে, নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। কাজেই আজকে বিএনপির হাতিয়ার হচ্ছে ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার নিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, নাসিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে না। তাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেভাবে একটি মতলবি মহল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে চলছে।
কাদের বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে যে বুলেট হত্যা করেছে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু সে বুলেটের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ষড়যন্ত্রকারীদের মনে রাখতে হবে, ১৯৮১ সালের শেখ হাসিনা আর ২০১৭ সালের শেখ হাসিনা এক নয়। বরং হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। তাই এসব ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে ঠেকানো যাবে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যত জনপ্রিয় হচ্ছেন, দিন দিন তত তার শত্রু বাড়ছে, জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। তিনি প্রচ- ঝুঁকির মধ্যে আজ দেশ চালাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটির ঘটনা নিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা এখন পরিষ্কার। ১৯ বার তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এটা ২০তম অপচেষ্টা। নতুন বিমান, নাটবল্টু ঢিলা, এটাও আরেকটা চক্রান্ত।
জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে কাদের বলেন, কোনোভাবে মনে করার কারণ নেই যে তারা শেষ হয়ে গেছে। তারা প্রতিনিয়ত ডালপালা গজাচ্ছে। এর প্রমাণ হলি আর্টিজানের পর কল্যাণপুর ও আশকোনার ঘটনা। সুতরাং পুলিশি এই অভিযানে সন্তুষ্ট না থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আত্মসন্তুষ্টির কোনো কারণ নেই।
দলীয় নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, আগামী নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। এ জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। দলকে একটি সুশৃঙ্খল, কলহ-কোন্দলমুক্ত শক্তি হিসেবে আমাদের তৈরি হতে হবে। দলের মধ্যে কেউ বিপথগামী হলে সংশোধন করা হবে। সংশোধন করা সম্ভব না হলে তাকে দল থেকে বের করে দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। গুঁটি কয়েক কর্মীর জন্য শেখ হাসিনার উন্নয়নকে মøান করতে দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, দেশের জনগণের জন্য রাজনীতি করি। আর জনসভার জন্য জনগণ দুর্ভোগ পোহালে দলের ইমেজের জন্য তা ইতিবাচক হবে না। তাই রাজপথগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখা দরকার যারা জনসভায় আসা মিছিলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে রাস্তার একপাশ দিয়ে নিয়ে আসবে। এতে যান চলাচলে কোন বিঘœ ঘটবে না। এতে জনগণের দুর্ভোগ কম হবে।
এ সময় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রার জন্য সৃষ্ট যানজটের দুর্ভোগ পোহানোর জন্য রাজধানীবাসীর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের জনসভাকে ঐতিহাসিক জনসভায় রূপদানের আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ১০ জানুয়ারি ঢাকার সকল রাজপথ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে মিশে যাবে। আর তাই এ জনসভার জন্য সাধারণ মানুষের যাতে কোন দুর্ভোগ না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই জরুরী। এ জনসভাকে শুধু জনসমাগমের দিক থেকে নয়, শৃঙ্খলার দিক থেকেও ঐতিহাসিক জনসভায় পরিণত করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও নয়াদিল্লী হয়ে দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। এর আগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বিশ্বের ইতিহাসে জঘন্যতম গণহত্যা শুরু করার আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করেছিল।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছারের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ নাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান, শেখ সোহেল রানা, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা প্রমুখ। সভায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশের প্রচারে নিউ মার্কেটে লিফলেট বিতরণ করলেন কাদের
এদিকে, আগামী ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশ সফল করতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল শুক্রবার বিকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে এই প্রচারে অংশ নেন দলটির নেতাকর্মীরা।
এসময় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছিলেন দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও নিউমার্কেট এলাকার নেতারা।
ওবায়দুল কাদের নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারী এবং ক্রেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪৫তম বার্ষিকী এবার আড়ম্বরের সঙ্গে পালন করবে ক্ষমতাসীন দল। এর অংশ হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে দলটি।
এই সমাবেশ সফল করতে গত কয়েকদিন ধরেই নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। নেতারা বলছেন, ওই দিন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম সমাবেশ হবে। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন।
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, শুধু সংখ্যার দিক থেকে স্মরণীয় নয়, শৃঙ্খলার দিক থেকেও এই সমাবেশ হবে স্মরণীয়। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে জনসভার দিন যাতে জনসাধারণের কোনো প্রকার ভোগান্তি না হয় সে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন