শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তানোরে

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মমিনুল ইসলাম মুন তানোর (রাজশাহী) থেকে ঃ রাজশাহী তানোরের কামারগাঁ ইউপির শ্রীখ-া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে উত্তরে সরিষার বিশাল খেত থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌ খামারিরা। উৎসুক জনতা সে মধু সংগ্রহ দেখতে ভিড় করছেন। সেই সাথে অনেকে আসছেন সংগ্রহ করা খাঁটি মধু নিতে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের উত্তরে শ্রীখ-া থেকে বাতাসপুর শ্মশান ঘাট যাওয়ার রাস্তার পূর্ব দিকে বিশাল জমির খেতে চাষ করা হয়েছে সরিষার। জমিগুলোতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। কিন্তু সর্বনাশা বন্যায় ফসলি জমির ধান ডুবে যায়। একবার নয় কয়েকবার বন্যার কবলে পড়ে ওই এলাকার চাষিরা। জমি থেকে পানি নামার সাথে সাথে ব্যাপকভাবে রোপণ করা হয়েছে সরিষা। প্রতিটি গাছে হলুদ ফুলে ভোরে গেছে। সেই হলুদ ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করার জন্য পাশের উপজেলা মোহনপুর কেশর হাট থেকে সততা নামের মৌ খামার এসেছে মধু সংগ্রহ করতে। সততা মৌ খামারের তিনজন খামারি গত ৫ জানুয়ারি থেকে মধু সংগ্রহ শুরু করেছেন। চারদিকে শুধু সরিষার হলুদ ফুল আর ফুল। ফুলে বসানো হয়েছে মৌমাছি। চারদিকে শুধু মৌ মৌ ডাক। সরিষার খেতে এক হাত পর পর দেওয়া কাঠের রঙের বক্স। বক্সের ভিতরে আছে ফ্রেম। সেই ফ্রেমে থাকে মৌমাছি। একটি করে ফ্রেমে অন্তত ১ হাজারটি মৌমাছি থাকে। ফ্রেম থেকে মৌমাছি বের করে মধু ভর্তি ফ্রেম দেওয়া হচ্ছে রিফেন্ড মেশিন। দুই থেকে তিনটি করে ফ্রেম ঢুকানো হচ্ছে মেশিনে। হাত দিয়ে ঘুরিয়ে মেশিনের নিচে পাইপ দিয়ে চলে আসছে মধু। তিনজন এ কাজের সাথে সংযুক্ত। তারা নিকটাত্মীয় সততা মৌ খামারের পরিচালক আলফোর জানান, ২০১২ সাল থেকে এভাবে মধু সংগ্রহ করে আসছি। এসএসসি পাস করে দিনাজপুর বিসিক এলাকায় মধু সংগ্রহের যাবতীয় কার্যক্রম সফল করতে নিয়েছি এক বছরের ট্রেনিং। সে জন্য গত বছর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তবে এবারে দিবেন। প্রথম অবস্থায় মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করে বর্তমানে তার পুঁজি প্রায় ২ লাখ টাকা। সে সাফ জানিয়ে দেয়, চাকরি করার কোন ইচ্ছে নেই। তার সাথে ফ্রেম উঠানো নামানোসহ যাবতীয় কাজে সহযোগিতা করছে তার বড় ভাই দেলফোর। আর দুলাভাই কামরুল রিফেন্ড মেশিন ঘুরিয়ে বের করছেন মধু। মেশিনটি রাখা হয়েছে রাস্তার পাশে মশারির ভিতরে। অদ্ভুত ব্যাপার অনেকক্ষণ থাকার পরও কোন মৌমাছি আঘাত করেনি শরীরে। তবে আলফোর পরিয়ে দেয় মশারির মতো মাথা, মুখ রক্ষার্থে এক জাতীয় রক্ষা কবজ। তারাও পরেছিলেন এমন রক্ষা কবজ। হাতে দেওয়া আছে মোজা, পায়ে জুতা। শরীরের কোন জায়গায় যেন আঘাত না করতে পারে মৌমাছি। আফলোর বক্সের মধ্যে থেকে ফ্রেম বের করছিল। সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলে নিষেধ করে। তিনি এসে এ প্রতিবেদকের মাথায়-মুখে মুখোশ পরিয়ে সাবধানে কার্যক্রমগুলো দেখান। আলফোর আরো জানান, শুধু সরিষা ফুলে নয় এখান থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে মধু সংগ্রহের জন্য যাবেন নাটোরে। সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে কালজিরা চাষ হয়। মার্চে যাবেন দিনাজপুর লিচু বাগানে। তিলের জন্য বিখ্যাত পঞ্চগড় জেলায় গিয়ে মে ও জুনে মাসে মধু সংগ্রহ করবেন। তারা এ পর্যন্ত সরিষার খেত থেকে চার থেকে পাঁচ মণ মধু সংগ্রহ করেছেন। কথা বলতে বলতে আসেন ১৫ বছর ধরে মধু সংগ্রহ করছেন কেশরহাট এলাকার মৌমাছি খামারের মালিক কামরুজ্জামান। এ সরিষা থেকেই মিলছে খাঁটি তেল, গরুর স্বাস্থ্যকর খাবার, খৈল, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সরিষার গাছ। আধুনিকভাবে চলছে মানবদেহের অন্যতম সুষম খাবার মধু সংগ্রহ। মধুতেই শিশু থেকে শুরু করে অনেকের অনেক রোগবালাই দূর হয়। তাইতো কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় উপজেলাজুড়ে ব্যাপকভাবে হয়েছে সরিষা চাষ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন