শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

এলজিএসপি প্রকল্পে অ্যাম্বুলেন্স তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : মা ও শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ইউনিয়নে ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তায় দ্বিতীয় লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-২)-এর জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স ইজিবাইক (ব্যাটারি চালিত চার্জার) সরবরাহ করা হয়। আর এ অ্যাম্বুলেন্স তৈরিতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য বাজেটে দেখিয়ে বাকি টাকা পকেটস্থ করা হয়। স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আটটি ইউনিয়নে অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তথ্য সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দকৃত অর্থ হতে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে একটি করে ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহের জন্য প্রকল্প দাখিল করা হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় আড়াই লাখ টাকা। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেয়া হয়। বাজেট অনুযায়ী ইতোমধ্যে অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ হয়েছে।
একই প্রকল্পে জেলার সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় বাজেট ধরা হয়েছে দুই লাখ টাকা। এসব উপজেলায় বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে অভিজ্ঞ কারিগর দ্বারা অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করে সরবরাহ করা হয়। সেসব অ্যাম্বুলেন্সের গুণগত মান অনেক ভাল। অথচ বদলগাছীতে অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করা হয়েছে স্থানীয় কারিগর দ্বারা। ওইসব অ্যাম্বুলেন্সের তুলনায় কাজের মান খারাপ। অথচ বাজেটও ধরা হয়েছে বেশি।
অ্যাম্বুলেন্সের ছাদে ঘূর্ণায়মান লাল আলোর বিচ্ছুরণের জন্য সাইরেন হর্ন লাগানো রয়েছে। আর ভেতরে দুই ছিটের গদিআঁটা আসনে সাহায্যকারী ও প্রসূতি শুয়ে-বসে থাকার সুব্যবস্থা করে সৌন্দর্য দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের রূপ দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে জরুরি প্রয়োজনে ফোন নাম্বার দেয়া আছে।
বর্তমান বাজারে একটি ব্যাটারি চালিত চার্জারের মূল্য ১ লাখ হতে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এসব চার্জারে অতিরিক্ত ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ করে ছাউনি, হর্ন ও ছিট লাগিয়ে অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করা সম্ভব। সর্বসাকুল্যে যার খরচ হতে পারে ১ লাখ ৪০ হতে ৪৫ হাজার টাকা। অথচ এ প্রকল্পে ব্যয় দেখানো হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পল্টন হোসেন ও কোলা ইউপির দুলাল হোসেনসহ অন্যান্য ইউপির কয়েকজন বলেন, একটি চার্জার অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করতে মোটেও এতো টাকা খরচ হতে পারে না। প্রশাসন ও চেয়ারম্যানের যোগসাজশে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ বাজেট করে অতিরিক্ত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
পাহাড়পুর ইউপি চেয়ারম্যান কিশোর হোসেন বলেন, এ প্রকল্পের জন্য বাজেট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উপজেলা প্রশাসন হতে করে দেয়া হয়েছে। আর অ্যাম্বুলেন্সটি তৈরি করা হয়েছে রাজশাহী থেকে। তবে খরচ কত হয়েছে তা বলতে গেলে মিথ্যা বলা হবে। এ জন্য খরচের কথা বলা যাবে না।
কোলা ইউপি চেয়ারম্যান এসকেন্দার মির্জা বাচ্চু বলেন, এসব বাজে প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। এখন ব্যস্ত আছি। আমাকে এসব প্রশ্ন না করে অর্থমন্ত্রীকে বলুন বিশ্বব্যাংকের টাকায় সরকার ভ্যাট বসিয়েছে কেন?
অ্যাম্বুলেন্স নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সরদার পরিবহন সার্ভিস এর প্রোপ্রাইটর বেলাল হোসেন বলেন, আমার কাছে অ্যাম্বুলেন্স  তৈরি করলে প্রতিটির খরচ এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা লাগবে। আর কাগজপত্র স্বাক্ষর করতে স্যারকে যা দিতে হয় আমি দেখব। আজকাল টাকা ছাড়া কাগজে স্বাক্ষর হয় না। নানা সমস্যা ধরে বসে। কাজটি পাইয়ে দিলে অ্যাম্বুলেন্স প্রতি ৫ হাজার টাকা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বদলগাছীতে সকল ইউনিয়নে তার প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হয়েছে। দাম ধরা হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। সেখানে কাগজপত্র ঠিক করে সই করতে স্যারকে যা দেবার চেয়ারম্যানরাই নিজে দিয়েছেন। এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুসাইন শওকত বলেন, অ্যাম্বুলেন্স তৈরিতে বাজেট কত ধরা হয়েছিল তা মনে নেই। আমি ফাইল দেখে চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলব। ভাউচার চাইব এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন