শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শিশু অপহরণ সিন্ডিকেটে নারী সদস্য

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঘনবসতি এলাকা-গরীব পরিবার ও স্টেশনগুলোই টার্গেট : মুক্তিপণ আদায়ের মধ্যস্থতায় স্থানীয় দালাল : ঘটনার সাথে সাথেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পরামর্শ : সবার আগে জনসচেতনা জরুরী
হাসান-উজ-জামান : পাশেই বিচরণ করছে অপহরণ সিন্ডিকেন্ডের সদস্যরা। এদের কেউ কেউ অতি পরিচিতও। শিশু অপহরণে মূল ভূমিকায় রয়েছে চক্রের কতিপয় নারী সদস্য। অন্তরালে রয়েছে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা। কৌশল হিসেবে এ চক্রের সদস্যরা বেছে নিয়েছে নিম্ন আয়ের বসবাসকারী ঘনবসতি এলাকা। মুক্তিপণ আদায়ে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রয়েছে দালাল চক্র। যাদের প্রধান কাজ মুক্তিপণের টাকা আদায়। একইসাথে অপহরণের ঘটনা পুলিশকে অবহিত করতে নিরুৎসাহিত করা। সম্প্রতি পুলিশ ও র‌্যাব দুই অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার হয় অপহরণকারী চক্রের ২ নারী সদস্যসহ কয়েকজন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন তালুকদার বলেন, অপহরণের ঘটনা ঘটলে তা সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। আর সব চেয়ে আগে সচেতন হতে হবে সকল শিশুর অভিভাবককে।   
কেস স্ট্যাডি-১
পিলখানার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের এসএসসি পরক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম শুভ। সপরিবারে বসবাস করেন হাজারীবাগ থানাধীন শেরেবাংলা রোডের ৯ নং হোল্ডিংস্থ ৫ম তলার ফ্ল্যাটে। এসএসসি পরীক্ষা শুরুর মাত্র ১ দিন আগে গত ৩১ জানুয়ারির ঘটনা।
জোহরের নামাজ পড়তে বাসার পাশেই মসজিদের উদ্দেশে বের হয় সে। পথে অস্ত্র ঠেকিয়ে দুই যুবক তাকে তুলে নেয় সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। এরপরে ইনজেকশন পুশ করা হয় শুভ’র শরীরে। ঘটনার দু’দিন পরে শুভ নিজেকে আবিষ্কার করে চলন্ত ট্রাকে। দু’পাশে কয়েকটি ড্রাম। নিজের সর্বনাশ বুঝতে পেরে চলন্ত ট্রাক থেকেই লাফ দেয় সে। পথচারিদের মাধ্যমে শুভ জানতে পারে ওই সময়ে তার অবস্থান সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকায়। খবর পেয়ে শুভ’র বাবা শফিকুল ইসলাম ছেলেকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি মেধাবী এ শিক্ষার্থী।  শফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলে নিখোঁজের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি হাজারীবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। (নং-১৪৮৬)। কিন্তু ছেলে নিজের বুদ্ধিমত্তায় অপহরণকারি চক্রের কাছ থেকে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। শফিকুল আরো বলেন, তার কোন শত্রু আছে বলে জানা নেই। আর অপহরণকারি চক্র ঘটনার দু’দিনের মধ্যে কোন ধরনের মুক্তিপণ চায়নি। তবে ছেলে ফিরে আসার পর বাসার দরজার ফাঁক দিয়ে রাখা একটি চিরকুট দেখতে পাই। তাতে লেখা রয়েছে, তোমার ছেলে-মেয়েরা কোথায় লেখাপড়া করে, কি করে সব আমাদের জানা। তাই পুলিশকে কোন কিছু জানালে খারাপ হবে। এ ধরনের চিরকুট পেয়েই সেখান থেকে বাসা পরিবর্তন করি। আমার মনে হয়, দুষ্টু চক্র আমার বাসা থেকে শুরু করে পরিবারের সকলকেই চিনে। দুর্বৃত্তরা আমার আশপাশেই হয়তো অবস্থান করে। তবে ছেলে ফিরে পেয়েছি, এটিই আমার কাছে সবকিছু। এদিকে হাজারীবাগ থানায় শুভ’র নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডির তদন্ত কর্মকর্তা একই থানার এসআই ফকরুল ইসলাম বলেন, ছেলেটি ফিরে আসার ব্যাপারে থানাকে অবহিত করা হয়েছে। থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শুভ ও তার তার বাবার সাথে কথা বলেছেন। শুভ’র তথ্যমতে এটি অপহরণের ঘটনা।  কিন্তু গতকাল পর্যন্ত রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হয়নি। তদন্তের পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের বের করতে তদন্ত চলছে।  
কেস স্ট্যাডি-২
সাত বছরের শিশু জোনাকি। ঘটনাস্থল রাজধানীর ডেমরা থানার বাঁশেরপুল তাজমহল রোড। গত ১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা। ভাড়া বাসার পাশের রাস্তায় খেলা করছিলো জোনাকি। হঠাৎ নিখোঁজ সে। এ ঘটনায় ডেমরা থানায় ডায়েরি করেন জোনাকির বাবার স্বপন মিয়া। ডায়েরি নং-৪৩। প্রায় ২০ বছর ধরে বসবাস করায় এলাকায় অধিক পরিচিত জোনাকির বাবা স্বপন মিয়া। পরদিন তার মোবাইলে অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোন। সন্তানের মুক্তিপণ হিসেবে দাবি ৫০ হাজার টাকা। শিশুর বাবা এ ব্যাপারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অফিসে অভিযোগ করেন। পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম শিশুটিকে উদ্ধারে মাঠে নামে। পুলিশের চৌকষ দলটি ৩ ফেব্রুয়ারি ঘরভাঙ্গা এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তবে পালিয়ে যায় মূল পরিকল্পনাকারি অপহরণকারি চক্রের নারী সদস্য রাবেয়া। উদ্ধারের পর জোনাকী জানায়, তাজমহল রোডের ভাড়াটিয়া মহিলা রাবেয়া ভ্যান গাড়িতে করে বেড়ানোর কথা বলে তাকে নিয়ে যায়। পরে একটি অন্ধকার ঘরে তাকে আটকে রাখে। সেখানে সে ছাড়াও আরো ২ শিশু ছিল। কান্নাকাটি করলে অপহরণকারীরা তাকে মারধর করে।
পিবিআই সূত্র জানায়, অপহরণকারীর সক্রিয় সদস্য রাবেয়াসহ সিন্ডিকেটের অপর সদস্যরা কম দামে বাসা ভাড়া নেয়। তারা ৫ থেকে ৭ বছরের শিশুদের টার্গেট করে। ওই শিশুর সঙ্গে নিজের সন্তানকেও খেলতে দেয়। টার্গেটকৃত শিশুর পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়। এরপর বেড়াতে বা অন্য কোনো প্রলোভনে টার্গেটকৃত শিশুকে অপহরণ করে। প্রথমধাপের এ কাজটি করে চক্রের নারী সদস্যরা। শিশুটিকে আটকে রাখার পর শিশুকে অজ্ঞাতস্থানে আটকে রাখার দায়িত্ব নেয় সন্ত্রাসীরা।  মুক্তিপণের মধ্যস্থতা করে স্থানীয় দালাল চক্র।
পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী এবং কদমতলী বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের ঘনবসতির সুযোগ নেয় এ চক্র। ওই এলাকায় শিশু অপহরণ নতুন ঘটনা নয়। শিশু অপহরণের জন্য এলাকাটি ভয়ঙ্কর জোন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী থেকে শুরু করে একেবারে নরসিংদী পর্যন্ত বিস্তৃত এদের নেটওয়ার্ক। এরকম অসংখ্য শিশু অপহরণ সিন্ডিকেট রয়েছে এসব এলাকায়। মূল হোতারা শিশু অপহরণে বিভিন্ন নারী সদস্যদেরকে ব্যবহার করে। দালাল চক্র অপহৃতের পরিবারকে মামলা করতে নিরুৎসাহিত করে। সালাউদ্দিন তালুকদার বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। সচেতন হতে হতে সকল শিশুর অভিভাবককে।
এদিকে গত বুধবার রাতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ বিদেশে শিশু পাচারের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের ২ নারী সদস্যসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। উদ্ধার করা হয়েছে এক অপহৃতকে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান জানান, এ চক্রের সদস্যরা চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে শিশু অপহরণ, বিদেশে পাচার এবং হত্যা ও লাশ গুমের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
bilash ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ২:০৮ পিএম says : 0
সরকার,পুলিশ প্রসাশন ,ও জনগণকে এ বিষয় আর সচেতন হতে হবে।
Total Reply(0)
mili ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৪:৩০ পিএম says : 0
ei doroner kaj jara kore tara desh o somajer shotu
Total Reply(0)
bithi ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৪:৩১ পিএম says : 0
kharap lok ra nari der ei kaje bebohar korce besi tai sobi sojak tahte hobe.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন