শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

রায়গঞ্জে অনুমোদনবিহীন ইটভাটা আর ট্রাকের ছড়াছড়ি

| প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে অনুমোদনবিহীন ৩২টি ইট ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অসংখ্য ট্রাক। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তা, চাকায় পিষ্ট হয়ে মরছে পথচারী, সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় রায়গঞ্জ উপজেলায় নতুন পুরাতন মিলে ৩২টি ইট ভাটা রয়েছে। বৈধ রেজিস্ট্রেশন রয়েছে মাত্র ১৪টির। বাকি ১৮টি ভাটার’ই রেজিস্ট্রেশনসহ বৈধ কাগজপত্র নাই। স্থানীয় কৃষি অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটাগুলো। আর এ জন্যও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজার হাজার একর কৃষি জমি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাটার কর্মরত কর্মচারীরা জানান পরিবেশ অধিদফতর ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকেন। ভাটাগুলোতে মাটি ও ইট বহনকারী বৈধ কাগজবিহীন ট্রাক ব্যবহৃত হয়। ড্রাইভিং সনদবিহীন, অপ্রশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক দ্বারা চালিত হওয়ায় ট্রাক পরিচালনা আইনের বিন্দুবিসর্গ পর্যন্ত জ্ঞান নেই এদের। যে কারণে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে নিরীহ পথচারিদের। গত এক মাসে এক শিশুসহ দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে, মারাত্মক আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে। এ সব ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভাটা কর্তৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট যানবাহন চালকরা। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ , পরিবেশ বিধিমালা -১৯৯৭ , ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০১ এবং শব্দ দূষণ বিধিমালা -২০০৬ অগ্রাহ্য করে নতুন একাধিক ইট ভাটা নির্মাণের কাজ চলছে মহাসমারোহে। অনাবাদি ২একর জমি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও প্রতিটি ইট ভাটা নির্মাণে ১০একরের অধিক দো-ফসলি আবাদি কৃষি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিধিমালা অনুযায়ী ভাটার ১ কিঃমিঃ এর মধ্যে আবাসিক বাড়ি, হাসপাতাল , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ,এলজিইডি’র পাকা রাস্তা থাকা চলবেনা । ভবিষ্যতে কৃষি বিভাগ কর্তৃক ইটভাটার জন্য নির্ধারিত স্থানটি কৃষি জমি হিসেবে দাবি করলে এবং এ অফিস কর্তৃক ইট ভাটা বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করা হলে উদ্যোক্তা ইট ভাটা বন্ধ করতে বাধ্য থাকবে এবং কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না । বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা স্থানীয় কৃষি অফিস দাবি তো দূরের কথা তাদের চোখের সামনে একের পর এক গড়ে ওঠা প্রতিটি ভাটা নির্মাণে ১০একরের বেশি কৃষি জমি ব্যবহার করছে ভাটা মালিকরা। ইট ভাটার জন্য যে স্থান হতে মাটি কাটা হবে ওই স্থানকে পাড় বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ পুকুরে পরিণত করতে হবে যাতে সেখানে মৎস্য চাষ করা যায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে মজা পুকুর , খাল , খাড়ি , দীঘি, নদ-নদী, হাওর-বাঁওড় , চরাঞ্চল বা তৎসমতুল্য জায়গা থেকে ইট তৈরির মাটি সংগ্রহ করার কথা থাকলেও তা যেন শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। এ ভাটাগুলো এ সব নিয়মের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখালেও কর্তৃপক্ষ অজানা কারণে নিশ্চুপ। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পাকা সড়কসহ গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা ব্যবহারে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। কাঁচা রাস্তায় ভাটার কাজে নিয়োজিত যানবাহন গুলোর যাতায়াতের ফলে সাধারণ পথচারী সহ স্কুল-কলেজগামী শিশু কিশোর শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। সকালে স্কুল ব্যাগ নিয়ে পরিষ্কার কাপড় চোপড় পরে বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বিকেলে যখন বাড়ি ফেরে তখন দেখা যায় পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের আদ্যেপান্ত ধুলায় জড়ানো। এতে এ সব শিশুরা আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ কাঁচা-পাকা এই রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যা পুনর্নির্মাণে সরকারের অপচয় করতে হবে প্রচুর অর্থ। এ দিকে যেন তেনভাবে ট্রাক কিনে কাগজ পত্র ছাড়াই সরকারি সম্পদ ধ্বংস করে উপজেলার মধ্যে অবাধে ভাটার ইট, বালি, মাটি বহন করে লাখ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করছে ট্রাক মালিকগণ। ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব , ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি সম্পদ যেমন রাস্তা , ব্রিজ-কালভার্ট। ভোগান্তির স্বিকার হচ্ছে উপজেলার ৪ লক্ষাধিক মানুষ। এ দিকে সম্প্রতি নির্মাণাধীন একাধিক ইট ভাটার একটি তৈরি করা হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স , রায়গঞ্জ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, রায়গঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় , ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা সংলগø নিচু দো-ফসলি জমিতে । এ ব্যাপারে ভাটা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা জানান পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের মৌখিক অনুমোদন সাপেক্ষে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। ইট ভাটাসহ এই সব ট্রাকের বিরুদ্ধে সঠিক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বৃদ্ধিসহ সরকারি সম্পদ রক্ষা হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও প্রশাসনের নিরবতায় বিবেকবান মানুষের মনে জন্ম নিচ্ছে নানা প্রশ্ন ও জনমনে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md Nazmul Huda Abir ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৩৩ এএম says : 0
road er bahal obosta hosse
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন