নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ভাবে নিরপেক্ষ। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হবে। বিএনপি যতই নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করুক শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেই। কারণ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপি’র কোন অস্থিত্ব থাকবেনা। জনপ্রিয়তা হারিয়ে যখন ভোটে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই তখন কেবলমাত্র নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য বরাবর টালবাহানা করে থাকেই। এটি বিএনপি’র স্বভাব সুলভ আচরন।
তিনি সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় এই কথাগুলো বলেছেন। নওগাঁ নওযোয়ান মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপত্বি করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল মালেক এমপি।
স্মরণসভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় সংসদের হুইপ মো. শহিদুজ্জামান সরকার এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি, মো. ইসরাফিল আলম এমপি, সলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম এমপি, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ কিউ এম ওয়াহিদুজ্জামান খান বাদশা, কাজী রেজাউল ইসলাম, নির্মলকৃষ্ণ সাহা, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহনাজ বেগম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুল হক কমল, আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ দত্ত দুলাল, নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. এনামুল হক, নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহম্মেদ শিষান, জেলা যুবলীগের আহবায়ক অ্যাড. খোদাদাদ খান পিটু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ওমর ফারুখ সুমন এবং ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায় বক্তব্য রাখেন।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি’র সমালোচনার প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মাননীয় রাষ্ট্রপতি সকল রাজনৈতিক দলের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর সার্চ কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত তালিকা থেকে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে-তারপরও বিএনপির বিষোদগার। নির্বাচন কমিশন মানিনা মানবোনা। এক্ষেত্রে তিনি বিএনপিকে বাংলাদেশ নালিশ পার্টি বলে উল্লেখ করেন।
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিলের স্মৃতিচারণ করে বলেন, তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাংগঠনিক, মানবদরদী এবং বিনয়ী। তাঁকে নওগাঁর মানুষ যে কত ভালো বাসেন এই স্মরণসভায় হাজার হাজার নারী পুরুষের ঢল দেখে তাই প্রমাণ করে। তা নাহলে এই প্রখর রোদের মধ্যে দুঃসহ গরম সহ্য করে এত মানুষ মাঠে বসে থাকতে পারতোনা। মৃত্যুর পরও মানুষ তাঁকে হৃদয়ের মাঝখানে রেখেছেন।
আব্দুল জলিলের আদর্শ অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, অন্যের জমি দখল করে, মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। তৃণমুল কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের ইচ্ছামত পকেট কমিটি গঠন করতে দেয়া হবেনা। দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন কিছু মওসুমী পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে আসে। বসন্তের এসব কোকিলদের চাপে কর্মীরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। ক্ষমতা চলে গেলে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও এসব মওসুমী পাখির খোঁজ পাওয়া যায় না। নেতাদের এরকম সিন্ডিকেট করতে দেয়া যাবেনা। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। সবকিছুই হবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিগত ৮ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে বিশ্বে বাংলাদেশ অনেক দুর এগিয়ে গেছে। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের ১০ জন নেতার মধ্যে নিজেকে একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে ভোটের কোন ঘাটতি হবে না।
মন্ত্রী বলেন নওগাঁ জেলায় ৪২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সান্তাহার হতে নওগাঁ-নওহাটার মোড়-রাজশাহী বিমানবন্দর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহা-সড়কের উন্নয়ন কার্যক্রম এবং ২০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নওগাঁ-আত্রাই-নাটোর মহা-সড়কের অসমাপ্ত কাজ শীঘ্রই শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই দু’টি প্রকল্প প্রি-একনেকে অনুমোদন লাভ করেছে।
এই স্মরণসভায় পার্শ্ববর্তী রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নাটোর এবং বগুড়া জেলা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এদিন সকাল থেকেই জেলার ১১টি উপজেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মীর কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয় স্মরণসভার স্থল নওগাঁ নওযোয়ান মাঠ। সভার নির্দিষ্ট সময় বেলা ১১টার মধ্যে মাঠে আর কোন তিল ধারনের ঠাঁই ছিলনা।
ওবায়দুল কাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টারের জরুরি অবতরণ
এবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টার জরুরি অবতরণ করেছে। ওবায়দুল কাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় গতকাল জরুরি অবতরণ করে।
তাড়াশ থানা-পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিলের স্মরণসভায় যোগ দিতে নওগাঁ যাচ্ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ঘন কুয়াশা ও মেঘের কারণে সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের খিরসিন আদিবাসী পল্লী এলাকার পতিত জায়গায় অবতরণ করে হেলিকপ্টারটি। কুয়াশা কেটে গেলে ৪০ মিনিট পর ১১টার দিকে হেলিকপ্টারটি নওগাঁর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ওবায়দুল কাদেরের সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
দেশীগ্রাম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো: আবদুল কুদ্দুস জানান, আকস্মিকভাবে হেলিকপ্টার অবতরণ করতে দেখে আমরা ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ রয়েছেন। পরে তারা হেলিকপ্টার থেকে নেমে জনগণের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন, দলের খোঁজখবর নেন এবং দলকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করতে নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন।
ইউপি চেয়ারম্যান জানান, ওবায়দুল কাদের ও জাহাঙ্গীর কবির নানক স্থানীয় নেতা-কর্মীদের জানিয়েছেন, ঘন কুয়াশা ও মেঘের কারণে পাইলট দিক নির্ণয় করতে না পারায় হেলিকপ্টারটি জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিল্লুর রহমান জানান, আকাশে ঘন কুয়াশার কারণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টার সিরাজগঞ্জে জরুরি অবতরণ করেছিল। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে আমি নিজে তাড়াশ থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে দ্রæত ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হই। তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউপির খিরশিং এলাকার একটি আবাদি জমিতে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। তিনি আরো জানান, হেলিকপ্টারটিতে কোনো যান্ত্রিক ত্রæটি হয়নি বলে জেনেছি। কুয়াশা না কাটা পর্যন্ত মন্ত্রী হেলিকপ্টার থেকে নেমে আশপাশ এলাকায় অবস্থান করেন। পরিস্থিতি স্বভাবিক হলে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে হেলিকপ্টারটি আবার উড্ডয়ন করে চলে যায়।
হেলিকপ্টারটি জরুরি অবতরণ করায় স্থানীয় লোকজন সেখানে ভিড় করে। খবর পেয়ে সংবাদকর্মী ও দলীয় নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হলেও কারো সাথেই মন্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন