শ্রীলংকা ১ম ইনিংস : ৩৩৮/১০ (১১৩.৩ ওভারে )
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ঃ ২১৪/৫ (৬০.০ ওভারে)
(২য় দিন শেষে )
শামীম চৌধুরী, কলম্বো (শ্রীলঙ্কা) থেকে : পড়াটা টানা তৃতীয় ইনিংসেও দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। গল এ প্রথম ইনিংসে ১১৮,দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৮’র পর পি সারায় ৯৫ ! কিন্তু দায়িত্বটা যে এই ওপেনিং পার্টনারশিপের কাঁধে পড়ছে বেশি, সেই দায়িত্ব পালন করতে পারল কই এই জুটি ? শততম টেস্টে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ হলো না, রিভিউ আপিলে তামীমের ১ রানের জন্য ভাগ্যাহত হওয়ায় তামীমের হতাশ হতে হলো। শ্রীলংকার ৩৩৮’র জবাব দিয়ে লিডের সম্ভাবনা দেখানো জুটির ৯৫’র পর , সৌম্য-ইমরুলের বোঝাপড়ায় দ্বিতীয় জুটিতে ৩৫ রানের পার্টনারশিপ। অথচ, দিনের শেষ ১৭ মিনিটে চায়নাম্যান সান্দাকান পেসার লাকমালের এক স্পেলে সেই বাংলাদেশই কি না স্বাগতিকদের মুখে ফুটিয়েছে হাসি! ১৯২/২ থেকে ১৯৮/৫Ñ৭ বলে ৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ! দিনের খেলা ২০ বল বাকি, তখন যেখানে নিজেদের নিবৃত্ত রাখার কথা,সেখানে নিজেরাই নিজেদের মেজাজ হারিয়ে ফেলেছে । যেভাবে লংকান বোলারদের রিদম ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা,তাতে লিডের জন্য অবশিষ্ট ৫ উইকেট জুটিতে ১২৫ তাই দুরূহ মনে হচ্ছে।
গল এ ৪ নম্বরে ব্যাটিংয়ে পাঠানো মুশফিকুরকে বাংলাদেশের শততম টেস্টে পাঠানো হলো ৭ নম্বরে, কাকতালীয়ভাবে শততম টেস্টে সুযোগ দেয়া সাব্বিরকে লোয়ার অর্ডার থেকে প্রমোশন দেয়া হলো ৪ নম্বরে। হোল্ডিং ব্যাটসম্যান মুমিনুলকে বাদ দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারে প্রশ্ন। এলোমেলো ব্যাটিংয়ে ৪২ রানে সাব্বিরের গায়ে লাগেনি বেশি অপবাদ। কিন্তু টানা তৃতীয় ইনিংসে ফিফটিতে (গল এ ৭১ও ৫২, পি সারায় ৬১) বাহাবা পাওয়ার পরিবর্তে, ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে না পারায় সৌম্য’র আত্মতুষ্টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। দেশের হয়ে প্রথম ইনিংসে ওপেনিংয়ে শততম টেস্টে ফিফটির রেকর্ডে অস্ট্রেলিয়ার কেলিওয়ে (১১৪),দ.আফ্রিকার মিচেল (৯৯), শ্রীলংকার আতাপাত্তুর ( ৭৩) পর সৌম্য’র এই ফিফটি পেয়েছে ঠাঁই। দিনের শেষ ১৭ মিনিটের ঝড়ে অপরাধটা অবশ্য ইমরুলের। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে তাইজুলকে পাঠিয়ে বোকামি, ব্যাটিং অর্ডারে বড় ধরনের রদবদলের শিক্ষাও যে পেয়েছে বাংলাদেশ। চায়নাম্যান সান্দাকান (৩/৬৫) এ আবারো বিপর্যয়।
দ্বিতীয় দিনটি অবশ্য ছিল চান্দিমালের। মোরাতুয়ায় সিরিজ শুরুর আগে একমাত্র ২দিনের অনুশীলন ম্যাচে ১৯০ নট আউট, তাতেই দ.আফ্রিকা সফরের হতাশা ভুলে নুতন ভাবে নিজেকে চেনানোর প্রেরণা পেয়েছেন। গল এ দ্বিতীয় ইনিংসে ৫০ নট আউটে সে আভাসই দিয়েছেন। বাংলাদেশের শততম টেস্টে শ্রীলংকাকে প্রথম ২ দিনে ম্যাচে রেখেছেন এই মিডল অর্ডারই। স্কোরশিটে ৩৫ উঠতে নেই শ্রীলংকার প্রথম তিন ব্যাটসম্যান,সেখান থেকে দলকে একাই নিয়েছেন টেনে। ৫ম জুটিতে ধনঞ্জয়ের সঙ্গে ৬৬ রানে দিয়েছেন নেতৃত্ব, হেরাথের সঙ্গে ৮ম জুটিতে ৫৫ রানের বীরত্বও তারই। মূলত: তার ব্যাটিংয়েই প্রথম ইনিংসে তিনশ’ পেরিয়েছে শ্রীলংকা। তাইজুলকে কভার-পয়েন্টে সিঙ্গলে ক্যারিয়ারের ৮ম সেঞ্চুরি পূর্ন করে মিরাজকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে খেলতে যেয়ে থেমেছেন ১৩৮ এ। প্রথম দিন শেষে ২৩৮/৭ স্কোরের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনে দলের স্কোর তিনশ’ টেনে নেয়াই যেখানে কঠিন মনে করেছে শ্রীলংকা, সেখানে শ্রীলংকার স্কোর ৩৩৮/১০! দ্বিতীয় দিনে শেষ তিন পার্টনারশিপের সমষ্টি কাঁটায় কাঁটায় ১০০ ! যার মধ্যে দ্বিতীয় দিনে চান্দিমালের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৪ রান। শ্রীলংকার প্রথম তিন ব্যাটসম্যান যেখানে ফিরেছেন মাত্র ৩৫ এ,সেখানে শেষ তিন জুটিতে যোগ হয়েছে শ্রীলংকার টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক ১৪৩। ক্রমেই টেস্টে বাংলাদেশের সেরা বোলারে পরিনত হওয়া অফ স্পিনার মিরাজ প্রথম ইনিংসে ছড়িয়েছেন দ্যুতি বোলিংয়ে (৩/৯০)। তার কৌশলেই বন্দি সেরা উইকেট চান্দিমাল। তারপরও শততম টেস্টে বড় পরীক্ষার মুখে এখন ৬ষ্ঠ জুটির ২ ব্যাটসম্যান মুশফিক (২), সাকিব (১৮)। দ্বিতীয় দিনের শেষ ১৭ মিনিটে সাকিবের ৮ বলে ১৮ রানের অক্রিকেটিয় ব্যাটিংটাও যে রাঙাচ্ছে চোখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন