মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

চরফ্যাশনে সার্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষে মহাবিপ্লব

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এম আমির হোসেন চরফ্যাশন থেকে : চরফ্যাশন এখন কৃষি বিপ্লব এলাকা। এক সময় সবজির জন্য হাহাকার ছিল চরফ্যাশনের ক্রেতা-সাধারণের। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমদানিকৃত সবজি চড়া মূল্যে এখানের ক্রেতাগণ ক্রয় করে তাদের চাহিদা মিটাত। ২০০৮-২০০৯ সালের পর সরকারী সহায়তায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চরফ্যাশনের সার্বিক তত্ত্ববধানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সবজি চাষাবাদে আগ্রহী হয় সাধারণ কৃষকগণ।
কৃষি অফিসের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থ বছরে শাক-সবজি আবাদ ২৭৫০ হেক্টর, তরমুজ ৪৫০০ হেক্টর এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ২৫০০ জন কৃষককে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে শাক-সবজি আবাদ ৫২৮৫ হেক্টর, তরমুজ ১০৭০০ হেক্টর এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ২৭০০ জন কৃষককে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শাক-সবজি আবাদ ৮৫৮৫ হেক্টর, তরমুজ ১০৮০০ হেক্টর এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ৫৫৫০ জন কৃষককে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শাক-সবজি ৯৯৬০ হেক্টর, তরমুজ ৯২৫০ হেক্টর, প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ৫৪৬০ জন কৃষককে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শাক-সবজি আবাদ হয় ১০২৫০ হেক্টর, তরমুজ ৮৫৪৫ হেক্টর এছাড়াও ১০৩৫ জন কৃষক প্রশিক্ষিত হয়ে জমিতে সবজি চাষাবাদ করছে।
২০১০-১১ অর্থবছর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত মোট কৃষক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ১৭ হাজার ২৯৫ জন কৃষককে। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা অর্জন করে গড়ে তোলা হয়েছে কৃষকদেরকে। কৃষকগণ আজ প্রশিক্ষিত হয়ে চরফ্যাশনে সবজি চাষাবাদে বিপ্লব ঘঠিয়েছে। এছাড়াও চরফ্যাশন কৃষি অফিসের উদ্যোগে আইএফএমসি, সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের মাধ্যমে উপজেলার ২৩টি আইএফএমসি স্কুলের মাধ্যমে মোট ১১৫০ জন কৃষক প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তাদেরকে কৃষক প্রশিক্ষক (এফ.এফ) গণমৌসুম ব্যাপী হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন।
এখানে নানান রকমের সবজি চাষাবাদ হয়- তার মধ্যে রয়েছে সীম, শশা, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধা কপি, গাজর, কাঁচামরিচ, লাউ, পুঁইশাক, করল্লা, বেগুন, মুলা, লালশাক, পালংশাক, ধনিয়া, মিষ্টিকুমড়া ও বরবটি ইত্যাদি উল্লেখ্য।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোতোষ সিকদার জানান, ২০১৩ সালের ২ জুলাই তারিখে আমি যোগদান করেছি। কৃষি বিভাগের সহায়তায় আইপিএম ও আইসিএম নামক বেশ কয়েকটি কৃষক ক্লাব গঠন করা হয়। তার মধ্যে আদর্শ চাষী উন্নয়ন সমিতি, মধ্য হালিমাবাদ আইসিএম কৃষক ক্লাব এবং মূলাদীকান্দী কৃষক ক্লাব অন্যতম। কৃষি অফিসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ তত্ত্ববধায়নে তাদেরকে সার্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষ, বিষযুক্ত শাক-সবজি, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সহনীয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে লাভবান করা যায় সে বিষয়েও কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়া অত্র এলাকার কৃতি সন্তান পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি নিরলস প্রচেষ্টায় অসংখ্য পাকা রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, খাল-খননসহ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন করার ফলে চরফ্যাশন উপজেলার কৃষকগণ সবজি চাষসহ অন্যান্য ফসল আবাদে উদ্ভুদ্ধ হয়ে চাষাবাদের মহাবিপ্লব ঘটিয়েছেন।
কৃষি দপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ছানাউল্যাহ আজম এ প্রতিনিধিকে জানান, চরফ্যাশন উপজেলার সবজি চাষাবাদের সংবাদ ছড়িয়ে পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ী, ঢাকা পর্যন্ত। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সাইদ আলী ২০১০ সালে এবং মো: হামিদুর রহমান, ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারী ভোলার চরফ্যাশনের সার্জন পদ্ধতির সবজি খামার পরিদর্শন করে মনোমুগ্ধ হয়। এছাড়া উপ-পরিচালক ডিএই ভোলা ২০১৬ সালে কয়েকটি সার্জন পদ্ধতির সবজি বাগান পরিদর্শন করেন।
আদর্শ কৃষক সোলায়মান পান্নু বলেন, বর্তমানে দেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু নিরাপদ খাদ্যের অভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশি গাছ, লতা-পাতা, ফলমূল প্রকৃতিক উপাদানে তৈরী ভেজষ বালাই নাশক ব্যবহারে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছি। যা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি চরফ্যাশন উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর সমাজের সুধীজন, জ্ঞানীগুণি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রশংসা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগ, বে-সরকারি সংস্থা কোষ্টট্রাস্ট ও আইডি বাংলাদেশের সহযোগিতায় ইতিপূর্বে ২০১২ সালে ফিলিপাইনে ১৪ দিন ও ২০১৬ সালে থাইল্যান্ডে ২১ দিন কৃষি কাজ অর্গানিক এবং ভেষজ কীটনাশকের উপর দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সুধী সমাজের প্রস্তাবে এই উদ্যোক্তার কাজে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে দেশ নিরাপদ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। ‘খাদ্য আমার জীবন গঠন, খাদ্য আমার শক্তি, খাদ্য আমার মরণফাঁদ আমরা চাই মুক্তি’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সুপ্তজীবন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে প্রত্যয় আমরা...।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ দাস বলেন, বর্তমানে সার্জন পদ্ধতি সবজি চাষাবাদের ফলে চরফ্যাশন সাধারণ মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক ভর্তি করে টনে টনে রফতানি করা হচ্ছে। এতে চরফ্যাশনের কৃষকরা সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছে। তারা সরকারের কাছে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে সরকার এই সকল কৃষকদের জন্য প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় বিনামূল্যে সার বীজ প্রদান করেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দু’টি মৌসুমে ৩৩শ’ ৭০ জন ও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এক মৌসুমে ১৬৪০ জন কৃষককে সরকারি এই সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সরিষা, ডাল, চিনাবাদাম, খেসারী, মুগ ও ফেলান ডাল ইত্যাদিসহ মৌসুমী রবিশস্য দেয়া হয়। সাথে সরকার সার ও সেচ সহায়তা ও আগাছা নাশকের জন্য নগদ ৪০০ টাকা ব্যংকের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন বলে নবগঠিত আহম্মদপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফরিদাবাদ গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Kasem ১৯ মার্চ, ২০১৭, ৪:০৮ এএম says : 0
It could be a example for us
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন