বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালের পথে বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:৩২ এএম, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

বাংলাদেশ ১৪৭/৭ (২০.০ ওভারে)
শ্রীলংকা : ১২৪/৮ (২০.০ ওভারে)
ফল : বাংলাদেশ ২৩ রানে জয়ী।
শামীম চৌধুরী : অতীত রেকর্ড ভেঙে নুতন ইতিহাস রচনার নেশাই যেনো পেয়ে বসেছে বাংলাদেশ দলের। যে দলটির বিপক্ষে টুয়েন্টি-২০তে অধরা ছিল জয়, ৪ ম্যাচের সব ক’টিতে হারকে নিয়তি বলে নিতে হয়েছে মেনে। সর্বশেষ ২টি লড়াইয়ে চট্টগ্রামে কেঁদেছে বাংলাদেশ দল, সেই কান্নাকেই হাসিতে পরিণত করেছে মাশরাফিরা গতকাল ২৩ রানে শ্রীলংকাকে হারিয়ে। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে বৃষ্টি-বিঘিœত ম্যাচে শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালের নাগাল পেয়েছে বাংলাদেশ, পরিবর্তিত ফরমেটের (টি-২০) এশিয়া কাপেও সেই শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। ভারতের কাছে ৪৫ রানে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের এশিয়া কাপ মিশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৫১ রানে হারিয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া বাংলাদেশ দল শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল।
তামীমের শূন্যতা বড্ড ভাবিয়েছে, সেই ভাবনা থেকে তামীমকে কি দারুণ উপহারই না দিয়েছে মাশরাফিরা। ম্যাচের আগে এই বাঁ হাতি ওপেনারের পুত্র সন্তান হওয়ার আনন্দ বার্তায় পুরো দলই হয়ে উঠেছিল উৎসবমুখর। মাঠের লড়াইয়ে শ্রীলংকাকে হারিয়ে প্রথম সন্তানের জনক তামীমকে অভিনন্দনটা জানিয়ে দিল টিমমেটরা। টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিক তামীমের সেই ৮৮ রানের ইনিংসকে শ্রদ্ধা করেই থেমেছেন ম্যাচ উইনার রুম্মান (৮০)।
যে পিচে ভারতের ১৬৬’র জবাবে বাংলাদেশ থেমেছে ১২১-এ, আরব আমিরাতের মতো পুচকেদের সঙ্গে শ্রীলংকার ১২৯, বাংলাদেশের ১৩৩ নিরাপদ স্কোর, প্রথমে ব্যাট করে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান অল আউট ৮৩’তে, সেই পিচ থেকেই গতকাল বাংলাদেশের স্কোর ১৪৭/৭! তারপরও কিন্তু দিনের শুরুটা ছিল অলুক্ষনে। প্রথম ওভারে হতভাগ্য তাসকিন, সেকেন্ড স্লিপে চান্দিমালের সহজ ক্যাচ ফসকে গেল সৌম্য’র হাত থেকে। ০ রানে লাইফ পেয়ে সেই চান্দিমালেই (৩৭) লড়ল শ্রীলংকা। পরের ওভারে আল আমিনের বলে দিলশান গেল বেঁচে, ১ রানের মাথায় স্লিপে তার ক্যাচটি পড়ে গেল মাহামুদুল্লাহ’র হাত থেকে। সেই ব্যর্থতাই যেনো তাতিয়ে দিল এই দুই ফিল্ডারকে। সাকিবের প্রথম বলে ডিপ মিড অফে পেছনে দৌড়ে সৌম্য’র নেয়া দিলশানের ডাইভিং ক্যাচটি অবিশ্বাস্য। ৩য় উইকেট জুটিতে ৫৬ রানের পার্টনারশিপে নেতৃত্ব দেয়া চান্দিমালকে মাহামুদুল্লাহ’র বলে (৩৭) পয়েন্টে তাসকিনের অসাধারণ ক্যাচে ম্যাচে ফিরলো বাংলাদেশ। শেষ ১০ ওভারে ৮২ রানের লক্ষ্যমাত্রা পাড়ি দেয়ার পথটা রুদ্ধ করলো বোলার ফিল্ডাররা। ১১তম ওভার থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেটের মিছিল। ডেথ বলে ভয়ংকর আল আমিনের শিকার ৩টি (৩/৩৪), সাকিবের শিকার সেখানে ২টি (২/২১)। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের (৪-০-১৯-১) উপর্যুপরি বিস্ময় ডেলিভারিতে হতবাক শ্রীলংকা। মাশরাফি (১/১৭), আর মাশরাফিতে নুতন প্রাণের ছন্দ পাওয়া মাহামুদুল্লাহও সফল (১/১৪)। এমন বোলিংয়েরই যে হয়েছে জয়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বোলিং ছড়াচ্ছে ভীতি, সেই জুজুতেই হতে হলো শ্রীলংকাকে কুপোকাত।       
ইনজুরির কারণে একাদশে নেই মালিঙ্গা, তা দেখেই ম্যাচে মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ দল। তবে মালিঙ্গাবিহীন পেস অ্যাটাককেও শুরুতে বড্ড বেশি সমীহ করেছে বাংলাদেশের ২ ওপেনার। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ম্যাথুউজকে ফ্রন্ট ফুটে ডিফেন্স করতে যেয়ে মিঠুন এলবিডাব্লু (০)। পরের ওভারে কুলাসাকেরার বলে মিড অনে খেলতে গিয়ে মিড অফে দিয়ে এলেন সৌম্য ক্যাচ (০)! সেখান থেকে দায়িত্ব নিয়ে মুশফিকুরও রাখতে পারেননি অবদান (৪), শর্ট কাভারে বল পুশ করে রান আউটে অপমৃত্যু তার। স্কোর শিটে ২৬ উঠতে তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়েও ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ এবং তা সম্ভব হয়েছে সাব্বির রহমান রুম্মানের ঝড়ো ইনিংস (৫৪ বলে ১০ চার ৩ ছক্কায় ৮০ রান), রুম্মান-সাকিবের ৪র্থ জুটিতে ৮২ রানের পার্টনারশিপ। যে পার্টনারশিপে বাংলাদেশের সবচেয়ে টি-২০ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিবের অবদান যেখানে ২২, সেখানে রুম্মানের ৫৮। এমন দিনে সেঞ্চুরিটি তার প্রাপ্য ছিল। নিজের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ছাড়িয়ে যেভাবে এগুচ্ছিলেন, তাতে ৪ বছর আগে এই মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তামীমের হার না মানা ৮৮ টপকে টি-২০তে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসের দিকে চোখ রাখাই ছিল স্বাভাবিক রুম্মানের। তবে চামিরাকে স্কয়ার লেগ এর উপর দিয়ে ছক্কায় মাতিয়ে, পরের বলেও একই শটে হয়েছেন প্রলুব্ধ। ডেলিভারিটি ছিল শ্লোয়ার, মিস টাইম হয়ে ডিপ মিড উইকেটে পড়েছেন ধরা। ৫৪ বলে ১০ চার ৩ ছক্কায় ৮০ রানের ইনিংস শেষে পেয়েছেন বাহাবা।
লংকান পেসার কুলাসাকেরার দ্বিতীয় ওভারে ৪,৬,৪,৪=১৮ রানে মাতিয়েছেন শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম। তিসারা পেরেরাকে প্রথম ওভারে শিক্ষা দিতে মেরেছেন তিন তিনটি বাউন্ডারি। সিহান জয়সুরিয়া নামের অফ স্পিনারকে একটু বেশিই বাগে পেয়েছিলেন। তার প্রথম বলে স্বাগত ছক্কায় ৩৮বলে টি-২০ ক্যারিয়ারে তৃতীয় ফিফটি উদাপনে বীরকে দাঁড়িয়ে জানিয়েছে অভিনন্দন দর্শক। ভাগ্যটা আসলেই বীরদের সহায়ক হয়, ওই ছক্কার শটটি ডিপ মিড উইকেটে বাউন্ডারি রোপের বড়জোর এক গজ সামনে দাঁড়িয়ে ক্যাচে পরিণত করতে পারেননি কাপুগেদারা। সেখানেই হেসেছে বাংলাদেশ। ফিনিশ করে আসতে পারেননি সাকিব। লংকান পেসার চামিরার বাউন্সারে উইকেটের পেছনে দিয়ে এসেছেন ক্যাচ (৩৪ বলে ৩২)। তবে শ্লগের আগ্রাসী রূপটা এই ম্যাচেও দেখিয়েছেন মাহামুদুল্লাহ। তার  ১২ বলে ২৩ রানের নট আউট ইনিংসে বাংলাদেশ ইনিংস টেনে নিয়েছে ১৪৭/৭ পর্যন্ত। ১২১,১৩৩’র পর ১৪৭Ñ এশিয়া কাপে ব্যাটিংয়ের ক্রম উন্নতির দৃষ্টান্ত এটাই। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে টিমমেট ব্যাটসম্যানদের হয়ে দিয়েছিলেন কথা, রেখেছেন সেকথা রুম্মান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
আবির ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ৪:৫৮ এএম says : 0
এগিয়ে যাও দামাল ছেলেরা.........................
Total Reply(0)
ফয়সাল ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ৪:৫৯ এএম says : 0
এবার এশিয়া কাপ বাংলাদেশের হাতে দেখতে চাই।
Total Reply(0)
Sojib Hashibul ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:৫৭ এএম says : 1
বাংলাদেশ জিতবে সবসময় এটাই চাই। এগিয়ে যাও বাংলাদেশ। অভিনন্দন টাইগারদের।
Total Reply(0)
Himu ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:০৩ এএম says : 0
Well done Bangladesh team
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন