এম বেলাল উদ্দিন রাউজান থেকে : গরু, ছাগলের গোশতের দাম এখন আকাশছোঁয়া। সংসারের আয়-ব্যয়ের হিসাব কষে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেক পরিবারে খাওয়া হয় না গোশত।
তবে এদিক থেকে ব্যতিক্রম হচ্ছে রাউজান! এখানকার সব শ্রেণির মানুষ প্রায় প্রতি মাসে কোনো না কোনোভাবে ইচ্ছে মতো খাওয়ার সুযোগ পায় গরু-মহিষের গোশত। আর ক্ষেত্র বিশেষে ছাগলের গোশত। তাও বিনা খরচে টেবিল-চেয়ারে বসে জামাই আদরে। এ খাবার আয়োজন হয় মেজবানের নামে।
এখানে শীত অথবা গ্রীষ্মের দিনের কোনো না কোনো গ্রামে খোলা মাঠে অথবা বাড়ির উঠান বা ঘরের ছাদে বসানো হয় সারি সারি চেয়ার টেবিল। প্রতিবেশীরা দলে দলে এসে যোগ দেয় এসব মেজবানে। সবাই খেতে পারে যার যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে। কারো জন্য থাকে না বাধা। যতক্ষণ না খাবারে তৃপ্তি মিটবে, ততক্ষণ খাওয়া যাবে এসব টেবিলে বসে, ধনী-গরিব সবাই।
খাবার মেন্যুতে থাকে ভাতের সাথে গরু অথবা মহিষের গোশত। সাথে ডাল। ঘনিষ্ঠদের জন্য এসবের পাশাপাশি টেবিলে পরিবেশন করা হয় গামলা ভর্তি করে নলার ঝোল। ক্ষেত্র বিশেষে ছাগল, মুরগি আর মাছ। এ রকম আয়োজন প্রায় প্রতি মাসে চোখে পড়ে রাউজানের গ্রামে গ্রামে।
দীর্ঘকাল থেকে এ রেওয়াজ চলে আসছে সচ্ছল পরিবারসমূহের মধ্যে, মা-বাবার মাগফেরাত কামনায় বার্ষিক মেজবান দেয়ার। আবার যেসব পরিবারে কোনো নারী-পুরুষ মারা যায়, তারাও সাধ্যমতো চেষ্টা করেন মারা যাওয়া ব্যক্তির রুহের মাগফেরাত কামনায় মেজবান আয়োজনের। তবে এখানে প্রতি বছর বড় বড় মেজবান আয়োজন করে থাকেন দেশ-বিদেশে, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা। তারা মেজবানে শত শত মানুষকে খাওয়ানোর পাশাপাশি গ্রামের নারী ও দূরদূরান্তের আত্মীয়-স্বজনকে খাবার পৌঁছে দিয়ে থাকে। এলাকার লোকজনের মতে, রাউজানে বেশিরভাগ বড় মেজবান খাওয়ানো হয়। পশ্চিম গুজরার বদুমুন্সি পাড়া, নোয়াপাড়া, পটিয়াপাড়া, কচুখাইন, উরকিরচর, বড়ঠাকুর পাড়া, গশ্চি, পাহাড়তলী, মোহাম্মদপুর, নোয়াজিশপুর, হলদিয়া, গহিরাসহ বিভিন্ন গ্রামে।
এসব এলাকায় প্রায় প্রতি মাসে কোনো না কোনো বাড়িতে ছোট-বড় মেজবান আয়োজন থাকে। জানা যায়, প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে এরকম মেজবানের আয়োজন করে আসছেন উপজেলার রাউজান ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে বায়েজিদ স্টিল, কদলপুরে শফি মোটরস, পটিয়াপাড়ার ব্যবসায়ী আলহাজ আবু তাহের, ডা. ফজল করিম বাবুল, বদুমুন্সিপাড়ার প্রবাসী আয়ুব খান, জবরুত খান, মোহাম্মদ শফি, বড়ঠাকুর পাড়ার ব্যাংকার মফজ্জল হোসেনের পরিবারসহ আরো অনেকেই।
সম্প্রতি রাউজান সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা গাউছিয়া কমিটির প্রভাবশালী নেতা আলহাজ আনোয়ারুল আজিমের মৃত্যুর চার দিনের মাথায় তার পরিবারের পক্ষে বিশাল মেজবানের আয়োজন করা হয়। এখানে খাওয়ানো হয় কয়েক হাজার মানুষকে। এখানে পৃথক পৃথক আয়োজন ছিল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের খাবার পরিবেশনের। এই উপজেলার আরো বেশ কয়েকটি গ্রামে গত মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে একই রকম কয়েকটি বড় মেজবান। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের মেজবানের ঐতিহ্য এখনো জৌলসের সাথে সমুন্নত রাখা হয়েছে রাউজানে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন