শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

বাঁশঝাড় উজাড় হয়ে যাওয়ার বিরূপ প্রভাব ঝিনাইগাতীতে

প্রকাশের সময় : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এস কে সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে : ঝিনাইগাতীতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশশিল্পের এখন চলছে চরম দুর্দিন। বাঁশঝাড় উজার হয়ে যাওয়ায় এই শিল্প আজ হুমকির মুখে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে এর সাথে জড়িত শত শত হতদরিদ্র কারিগর। প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব এবং উচ্চমূল্যের কারণে এই শিল্পে চলছে বলতে গেলে চরম দুর্দিন। অথচ শৈল্পিক নৈপুণ্যে তৈরি বাঁশের ডোল, খাঁচা, বেড়, মাছ ধরার চাঁই ইত্যাদি বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র ছাড়া যেন এক মূহূর্তও চলেনা গ্রামবাংলার মানুষের। ঝিনাইগাতী উপজেলার শালচুড়া গ্রামের বড় গৃহস্ত সরোয়ার্দী দুদু মন্ডলসহ ক’জন প্রবীণ ব্যাক্তি জানান, নির্বিচারে কেটে বাঁশঝাড় উজার এবং উৎপাদনও কমে যাওয়ায় এ সবের দামও এখন অনেক বেড়ে গেছে। অথচ ইতোপূর্বে গ্রামবংলায় বাড়ি তৈরির আগেই চিন্তা করা হতো বাঁশঝাড়ের। অনেকে আবার বাড়ি করার আগেই রোপন করতেন বাঁশ। প্রত্যেকটি বাড়ির পেছনের অংশে বাঁশঝাড় ব্যতিত। বাড়ির যেন শোভাই হতো না। সেই সাথে ছিল দুই-চারটি বাড়িতে বেতের ঝাঁড়ও। বাঁশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এসবের দামও এখন বেড়ে গেছে অনেক। কোন কোন সময় টাকা দিয়েও ভালো বাঁশ পাওয়া যায় না। অপর দিকে কঠোর পরিশ্রমে তৈরি বাঁশের পণ্যের নায্যমূল্য না পাওয়ায় এই শিল্পের সাথে জড়িতরা চরম অভাবÑঅনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। তারপরও গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলো বিকল্প কিছু করতে না পেরে আজও বাঁেশর পণ্য তৈরির কাজ করে চলেছেন। এরা ঝুড়ি, কুলা, চালুন, খালই, বুরুং, ভাইর, পলো, ধারাই, উড়া, ডুল, খাচা, ধানের বেড়, মোড়া ইত্যাদি তৈরি করে বিভিন্ন গ্রাম ও হাটÑবাজারে বিক্রি করছে। এই শিল্পের সাথে জড়িতদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, বাঁশের তৈরি পণ্যের বাজার দর একেবারেই কম। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে না পেরে আমরা অনেকেই পারিবারিক পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।
জানা যায়, গোটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার এখনো বাঁশের শিল্পের সাথে সর্ম্পকৃত রয়েছে। তাদের দিন কাটছে অত্যন্ত দুঃখÑকষ্টেই। তার পরও তারা বাপÑদাদার পেশাকে টিকিয়ে রেখেছে অনেক কষ্টেই। ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাঁশঝাড়। আগে গ্রামের আনাচেÑকানাচে প্রচুর বাঁশঝাড় দেখা যেত। কিন্তু এখন আর সেই চিরচেনা বাঁশঝাড় নেই। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাংলার চিরচেনা শিল্পগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। আগের মানুষ নিজস্ব প্রয়োজনে বাঁশ চাষে আগ্রহী ছিল। এক সময় গ্রাম এলাকার প্রায় প্রতি কৃষকের বাড়ির ভিটায় এক কোনায় বাঁশঝাড় ছিল। কিন্তু এখন আর নেই বললেই চলে। ক’বছর আগেও গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত এলাকার আনাচেÑকানাচে বড় বড় বাঁশঝাড় দেখা গেছে। এসব বাঁশঝাড় ছিল অত্যন্ত ঘন, বাঁশগুলোও ছিল লম্বা।
দেখে মনে হতো বাঁশের বাগান গ্রামবাংলার ওই ঝাড় দেখেই পল্লীকবি জসিমউদ্দীন তার ‘কাজলা দিদি’ কবিতায় লিখেছেন ‘বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ’, মাগো আমার শ্লোক বলা কাজলা দিদি কই?’। কবির ওই বাঁশবাগান এখন শুধুই স্মৃতি। সময়ের দিনে দিনে উজার হয়েছে বাঁশঝাড়গুলো। আর উজার হওয়া জায়গাগুলো পরিণত করা হয়েছে কৃষি জমি অথবা বসতবাড়িতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন