শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মন্তব্য প্রতিবেদন- এশিয়া কাপে টি-২০’র আমেজ কই?

প্রকাশের সময় : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রেজাউর রহমান সোহাগ : ক্রিকেট খেলা যাতে দর্শকদের কাছে কখনোই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে না পারে সেই বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ২০০৫ সালে ক্রিকেটে ২০ ওভারের টি-২০ ফরম্যাট চালু করে। যাতে দর্শকরা স্বল্প সময়ে ব্যাটসম্যানদের ঝড়ো গতির ব্যাটিং দেখে মুগ্ধতায় ক্রিকেটের প্রতি আরো বেশি মাত্রায় আকৃষ্ট হয়। দর্শকদের প্রত্যাশা ও আনন্দের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আইসিসি’র গৃহীত টি-২০ ক্রিকেটের প্রচলনের সিদ্ধান্তটি যে সঠিক এবং সময়োপযোগী তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই টি-২০ ক্রিকেট দারুণভাবে জনপ্রিয় ও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে দর্শকদের কাছে।
আর এই টি-২০’কে ঘিরে দর্শকদের সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ও উপভোগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাটসম্যানদের ঝড়ো গতির ব্যাটিং। অথ্যাৎ টি-২০ ক্রিকেট মানেই ব্যাটিং তা-ব, রানের বন্যা। শুরু থেকে হয়েও আসছে তাই। ২০০৫ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেট শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রচুর রান বন্যাও দেখছেন ক্রীড়ামোদীরা। কেনিয়ার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার ২৬০, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার ২৪৮ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ২৪১ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৩৬ রানের ইনিংস এখনও স্মৃতিতে অম্লান ক্রীড়ামোদীদের। এই পর্যন্ত টি-২০ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৪২টি ইনিংস ২০০ রান অতিক্রম করেছে, যা টি-২০ ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের দুর্দান্ত পার্ফরম্যান্সেরই প্রমাণ বহন করে। অথচ সেই টি-২০ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক আসর চলছে ঢাকায় এশিয়া কাপে। যেখানে ব্যাটসম্যানদের কোনো পার্ফরম্যান্সই নেই! দর্শকদের মনেও কোনো প্রাপ্তি নেই। প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত টি-২০ এশিয়া কাপে রোববার পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মোট ৫টি ম্যাচের ১০ ইনিংসে রান হয়েছে মাত্র ১১৮৫! যেখানে এই ফরম্যাটে হরহামেশাই ইনিংস প্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ রান উঠছে, সেখানে এবারের এশিয়া কাপে ইনিংস প্রতি গড় ১১৮.৫! যা রীতিমতো টি-২০ ক্রিকেটের জন্য বিস্ময়কর। অথচ ঢাকায় অনুষ্ঠানরত টি-২০ এশিয়া কাপকে ঘিরেও ভয়াবহ ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদীরাও। খুবই আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং তা-ব দেখার। কিন্তু সে প্রত্যাশার অনেকটারই ইতোমধ্যে মৃত্যু ঘটেছে। প্রতিটি ম্যাচেই একরাশ হাতাশা আর প্রচ- বিরক্তি নিয়েই মাঠ ছাড়তে হচ্ছে দর্শকদের। কোনো ম্যাচেই রান পাচ্ছেন না ব্যাটসম্যানরা। শুধু মিরপুর স্টেডিয়ামের উইকেটের কারণে টি-২০ এশিয়া কাপ ক্রিকেট ব্যাটসম্যানদের পরিবর্তে পরিণত হয়েছে বোলারদের টুর্নামেন্টে! প্রতিটি ম্যাচেই শুধু বোলারদের দাপোট। অথচ দর্শকদের প্রত্যাশা কিন্তু পুরোটাই বিপরীতমুখী। অর্থাৎ ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং নৈপুণ্য যা একেবারেই অনুপস্থিত এবারের এশিয়া কাপে। বহুল আকাক্সিক্ষত পাকিস্তান (৮৩) আর ভারতের (৮৫) ম্যাচে দুই দল মিলে রান করেছে মাত্র ১৬৮! যা স্বপ্নে ভাবাও কঠিন। সবচেয়ে হতবাকের বিষয়, এই ম্যাচে কোনো ছয়ের মারই ছিল না। আর বাউন্ডারি হয়েছে মাত্র ১৮টি। পাকিস্তান-ভারত টি-২০ ম্যাচের এমন রূপ, যা কল্পনাকেও হার মানায়। দর্শকরা দারুণভাবে বঞ্চিত হয়েছে উপভোগ্য একটি ম্যাচ দেখার প্রত্যাশা থেকে। টি-২০ ক্রিকেটে যেখানে দর্শকরা মাঠেই যায় ব্যাটসম্যানদের চার ও ছক্কার মার দেখার আশায়, সেখানে এবারের এশিয়া কাপের রানের ক্ষরা রীতিমতো হতাশায় ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ ও বিশ্বের ক্রীড়ামোদীদের।
স্বভাবতই অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, টি-২০ টুর্নামেন্ট হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের পার্ফরমেন্সের জন্য- এটা যেনোও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কেন বোলারদের সহায়ক উইকেট তৈরি করলো? বোলিং সহায়ক উইকেট তৈরির কারণে গতকাল পর্যন্ত ৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলেও, একটিও দর্শকদের মন ভরাতে পারেনি। বিশ্ব ক্রিকেটের চার পরাশক্তি পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও খেলার নৈপুণ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিয়ে কোনো দলই দর্শকদের মন ভরাতে পারছে না। মিরপুরের উইকেট নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অনেক ক্রিকেট বোদ্ধাদের মনেও। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একটি আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে টি-২০ টুর্নামেন্টে এই ধরনের একপেশে বোলিং সহায়ক উইকেট তৈরির যৌক্তিকতা নিয়েও। দর্শকদের আনন্দ প্রাপ্তির বিষয়টি এভাবে উপেক্ষিত রাখা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য নেতিবাচক হয়ে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা ইনকিলাবকে বলেন, “আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি! কেন এবারের উইকেটে এতবেশি ঘাস রাখা হলো? এই উইকেট তো সম্পূর্ণরুপে তৈরি করা হয়েছে শুধু বোলারদের জন্য এবং এ ধরনের উইকেটে রান করা খুবই কঠিন। কোনো টেস্ট ম্যাচের উইকেটেও তো এখন এত ঘাস রাখা হয় না! আমি মনে করি, এ ধরনের উইকেট বানিয়ে টি-২০ ক্রিকেটের আনন্দ পাওয়ার সুযোগ থেকে দর্শকদের বঞ্চিত করা হয়েছে।”
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ লিপু এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, “টি-২০ ক্রিকেটের যে চরিত্র সেটা যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে নিঃসন্দেহে সেটার সাথে মিরপুর স্টেডিয়ামের এবারের উইকেট সম্পূর্ণ বেমানান। কয়েকদিন পরেই বাংলাদেশ টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে যাবে। সেখানে কী ধরনের উইকেট হতে পারে সেই কন্ডিশনের কথা চিন্তা করেই এবারের এশিয়া কাপের উইকেট তৈরি করা উচিত ছিলো। সবকিছু যেনেও এ ধরনের উইকেট তৈরি করা হলো কেন সেটা বিসিবি ভালো বলতে পারবে। তবে আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ধর্মশালা কেন বাংলাদেশের ভেন্যু হলো-সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে সামনে দাঁড়াতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য।”

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আরমান ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:১০ এএম says : 0
গতকালকের খেলাটা কিন্তু উপভোগ্য হয়েছে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন