বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ইসলামে সংলাপ ও এর প্রয়োজনীয়তা

প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. মাছউদুর রহমান

॥ দুই ॥
আল্লাহর দিকে আহ্বানের ক্ষেত্রে, সত্যের দাওয়াত ও এর সাহায্যে বাতিলকে মেটাতে, একে পরাজিত করতে সংলাপ হচ্ছে সবচেয়ে সফল মাধ্যম। যেমন, মহান আল্লাহ বলেনÑ
বল, ‘হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত না করি। (সূরা আল ইমরান : ৩ : ৬৪) মূলত দাওয়াত পুরোটাই সংলাপ। যেমনটি অনেক জ্ঞানীরা বলে থাকেন : আল কোরআন হচ্ছে হক আর বাতিলের মাঝে, ঈমানদার আর বেঈমানের মাঝে, উপকারী সত্য কথা আর বিভ্রান্ত অপবিত্র কথার মাঝে সংলাপধর্মী উৎকৃষ্ট গ্রন্থ।
সংলাপের গুরুত্ব এবং দাওয়াতের ক্ষেত্রে এর উপকারিতা এভাবে প্রকাশিত হয় যে, সংলাপ হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে যারা কুৎসা রটায়, বিভিন্ন সংশয়-সন্দেহ ছড়িয়ে দিতে চায়, সম্মেলন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সভা-সামাবেশ, গ্রন্থ রচনা, লিফলেটের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না, তাদের ভ্রান্তি গোমরাহী দূরীকরণে, সন্দেহ নির্মূলে, সুস্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা তাদের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা উন্মোচনে, সংলাপই হচ্ছে সবচেয়ে সফল কার্যকরী মাধ্যম।
চিন্তা সাধনার মধ্যে সমন্বয় সাধনে, ভুল থেকে শুদ্ধকে বের করে নিয়ে আসতে সংলাপই উপযুক্ত প্রক্রিয়া। সংলাপে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে অন্যের প্রমাণাদির দিকে তাকালেই কেবল এটি সম্ভব। বলা হয় যে, সুচতুর জ্ঞানী ব্যক্তি কখনো তার শত্রুদেরও প্রশংসা করে। কারণ শত্রুরা যখন তার কোন ক্রটির দিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট করে, তখন তারা কোনো ভালো নিয়তে নয় বরং তার দোষ রটিয়ে দেয়ার জন্যে খোলা বাজারে তাকে লজ্জা দেবার উদ্দেশ্যে করে থাকে। কিন্তু সে তার ভুল ধরে দেয়ায় যখন তাদের প্রশংসা করে বসে, এতে ফল হয় উল্টো। লোকেরা তার উদারতায় মুগ্ধ হয়। অনেক ক্ষতিকারক জিনিস উপকারী হয়ে ধরা দেয়। এভাবেই কখনো কখনো আল্লাহ তা‘আলা তার মুমিন বান্দার সেবায় কাফেরকে বরাদ্দ করে দেন।
বর্তমান এ সময়ে যখন ইসলামের আলোচনা তুঙ্গে পৌঁছেছে, এর পরিধি বিস্তৃতি লাভ করেছে, এ মুহূর্তে সংলাপের গুরুত্ব আরো অনেক বেশি বেড়ে গেছে। অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে যে, ইসলাম তার ভাষ্যকারদেরকে চিন্তা-চেতনায় যারা তাদের বিরোধী তাদের নিকট পাঠাবে। শত্রুদেরকে তাদের প্রাচীন গোমরাহী আর উত্তরাধীকারী সূত্রে পাওয়া মুর্খতা, ইসলাম এবং এর দা‘ঈদের ব্যাপারে ভ্রান্ত-ধারণা পোষণের ওপর ছেড়ে দেবে না। বরং তাদের হাতে সত্যের এমন মশাল ধরিয়ে দেবে, যা তাদের পথকে আলোকিত করবে।
ইসলামী চিন্তাবিদদের জন্যে সময় এসেছে আত্মভোলা অবস্থা পরিহার করার, নিস্তেজতা থেকে বেরিয়ে আসার, তার অনুসারীদের সাথে নিয়ে সকল বিরোধীদের সাথে সংলাপে বসার। শুধু তাই নয়, বরং যারা শুত্রুতা ও হিংসা পোষণ করে তাদেরকে নিয়েও বসার।
আশা করা যায়, জ্ঞানগর্ভ, গঠনমূলক সঠিক পথ নির্দেশক সংলাপ, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করবে, দোদুল্যমান ব্যক্তি সন্তুষ্ট হবে, ভীতু প্রশান্তি লাভ করবে, আর বিভ্রান্ত স্থির হবে। এমন হতে পারে, শত্রু এবং বিদ্বেষীও তার শত্রুতা এবং বিদ্বেষ কমিয়ে দেবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন- ‘এটি অসম্ভব কিছু না যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের এবং যাদেরকে তোমরা শত্রু ভাবাপন্ন দেখছ পরস্পরে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন, আল্লাহ তা‘আলা সবই করতে পারেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা মোমতাহিনা : ৬০ : ৭)
সফল ও সার্থক সংলাপ করতে হলে আমাদেরকে সংলাপের মূলনীতি ও আদবগুলো ভালোভাবে জানতে হবে। নি¤েœ এ বিষয়ে কিছু কথা তুলে ধরা হলো।
১ম মূলনীতি : অভিমত ও বক্তব্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে এবং দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন, আধুনিক গবেষণার অনুসৃত পদ্ধতিসমূহ অনুসরণ করা। যেমন, দাবির সপক্ষে সরাসরি দলিল পেশ করা, দলিলের বিশুদ্ধতার বিষয় বিবেচনায় রাখা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ একটি মূলনীতি হচ্ছেÑ ‘কোনো বিষয়ে কারো নিকট থেকে বর্ণনা করলে তার বিশুদ্ধতা অপরিহার্য। আর যদি নিজস্ব অভিমত হিসেবে দাবি করা হয়, তাহলে তার পক্ষে দলিল দিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন