শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

ইসলামে সংলাপ ও এর প্রয়োজনীয়তা

প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. মাছউদুর রহমান

॥ তিন ॥
মহান আল্লাহ তা’আলা এ প্রসঙ্গে সুস্পষ্ট করে বলেছেনÑ
‘বল তোমরা তোমাদের প্রমাণ দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা আল বাক্বারা : ১ : ১১১)
২য় মূলনীতি : দাবি বা বক্তব্যকে ভিন্নভাবে দলিল হিসেবে পেশ না করা। কারণ এতে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ও কথা কাটাকাটির কৌশল গ্রহণ করা হয়।
৩য় মূলনীতি : নিজ বক্তব্য বা দাবির মধ্যে সাংঘর্ষিক কথা বা দাবির বিপরীত ও পরিপন্থী কোন বক্তব্য না থাকা। যেমনÑ কাউকে পাগল সাব্যস্ত করার পর তাকে বুদ্ধিমান হিসেবে আখ্যায়িত করা, কারো বক্তব্য অস্বীকার করে তার দলিল মেনে নেয়া ইত্যাদি
৪র্থ মূলনীতি : প্রবৃত্তির অনুসরণ, গোঁড়ামী পরিহার করে সত্যের অনুসন্ধান করা এবং সংলাপের সকল শিষ্টাচার মেনে নেয়া।
সংলাপের ঙনলবপঃরাব বা উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট থাকতে হবে। সত্য উন্মোচিত হলে সেটাই সংলাপের টার্গেট হবে। প্রবৃত্তির অনুসরণকে সংলাপের টার্গেট নির্ধারণ করলে সে সংলাপ অনর্থক বিবাদ ছাড়া আর কিছুই না।
গোঁড়ামী ও বাড়াবাড়ি ইসলামে একটি নিন্দনীয় বিষয়। এটি হকপন্থী বা সত্যে অনুসারীদের বৈশিষ্ট্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হামেদ আল গাজ্জালী বলেন, “হক অনুসন্ধানে পরস্পর সহযোগিতা দ্বীনের অন্যতম দাবি, তবে এর জন্য কিছু শর্ত ও আলামত রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে হক বা সত্য লাভে আমাদেরকে হারানো সম্পদ অনুসন্ধানকারীর মত হতে হবে। এক্ষেত্রে সে তার সাথীকে সহযোগী মনে করবে। শত্রু বা বিপক্ষ মনে করবে না, যখন তার ভুল তাকে ধরিয়ে দিবে তখন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।” এ ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর একটি প্রসিদ্ধ বহুল আলোচিত কথা রয়েছে, তিনি বলেন, যখনই আমি কারো সাথে সত্য প্রকাশে কথা বলেছি, আমি তার জন্য পছন্দ করেছি সে যেন এক্ষেত্রে তাওফীক লাভ করে, সঠিক দিশা পায় এবং সাহায্য প্রাপ্ত হয়। তার উপর আল্লাহ তা’আলার পৃষ্ঠপোষকতা ও হেফাযত অবতীর্ণ হয়। আমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলে আমি চাইতাম তার বক্তব্যে অথবা আমার বক্তব্যে সত্যের প্রমাণ প্রকাশিত হোক।
৫ম মূলনীতি : সংলাপের যোগ্যতা ও উপযুক্ততা অর্জন করা। সংলাপের প্রকৃত যোগ্যতা হচ্ছে ইলম। জ্ঞানগত যোগ্যতা না থাকলে শুধু বাকপটুতা সংলাপের যোগ্যতা নয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, কোনো বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নয়, এমন ব্যক্তি বিশেষজ্ঞের বক্তব্যের প্রতিবাদ করা অথবা অস্বীকার করা। এ কাজটি সংলাপের ক্ষেত্রে মোটেও শোভনীয় নয়।
৬ষ্ঠ মূলনীতি : স্বীকৃত ও অপরিবর্তনীয় বিষয়সমূহে প্রথমে পরস্পর ঐকমত্যে পৌঁছা। এর মাধ্যমে সংলাপের আগেই মতৈক্যের বিষয়গুলো সকলের কাছে প্রকাশিত হয়ে যাবে এবং মতানৈক্যর বিষয়গুলো খুব সহজে নির্ধারণ করা যাবে। মতৈক্যের বিষয়গুলো জানার মাধ্যমে সংলাপে লিপ্ত উভয় গ্রুপ অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে নিজেকে জড়িয়ে পড়া হতে মুক্ত রাখতে পারবে। এর ফলে মতানৈক্যের বিষয়গুলো সঙ্কুচিত হয়ে কমে আসবে। কোনো পক্ষ যদি স্বীকৃত বিষয়গুলো অস্বীকার করে সেখানে সংলাপ অহেতুক বা অপ্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে যাবে। যেমনÑ কেউ যদি সুন্নাহ অস্বীকার করে, তার সাথে কোরআন ও সুন্নাহর বিষয় নিয়ে সংলাপে লিপ্ত হওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা থাকবে না।
৭ম মূলনীতি : সংলাপের ফলাফল অকাট্য হওয়ার চেয়ে তুলনামূলক সত্য বা সত্যের কাছাকাছি হতে পারে।
সংলাপের মাধ্যমে কোন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারলেই মনে করতে হবে এ সংলাপ বহুলাংশে সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে। সংলাপ যদি নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতির ঐক্যের দিকেও আমাদেরকে পৌঁছায় তাহলেও তা তুলনামূলকভাবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে ধাবিত হয়েছে মনে করা যাবে। তা হচ্ছে প্রকৃত ব্যর্থ সংলাপ যা ঝগড়া-বিবাদ, শত্রুতা, ষড়যন্ত্র, হানাহানির দিকে ধাবিত করে। যাতে একে অপরকে কাফের, ফাসেক ও বিদ‘আতি সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে।
৮ম মূলনীতি : সংলাপের ফলাফল সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া; এক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন বা বাড়াবাড়ি না করা। সংলাপের ফলাফল মেনে না নিলে সংলাপে লিপ্ত হওয়ার কোনো অর্থ নেই, বরং এ ধরনের সংলাপে লিপ্ত হওয়া অনর্থক কাজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন