বসন্তের ম্রিয়মানতা
শাহরিয়ার সোহেল
মান্যবর, আপনি চলে যান
আমাকে ফেলে সুদূর নীহারিকা
সূর্যের আলো থেকে করেন বঞ্চিত
একরাশ কালো মেঘ ঘিরে থাকে সর্বদা
সেই ছোটবেলা থেকেই
সম্ভাবনার সব দরজা উন্মুক্ত
সামনে পাহাড়সম বাধা
দেখতে পাই সামনেই উত্তরণ
পৌঁছুতে পারি না কখনো
ঘন কালো মেঘ ঘিরে থাকে অবিরাম
দু’চোখে ধুয়াশা ধূসর বসন্তের ম্রিয়মানতা
মান্যবর, আপনি চলে যান বহুদূরে
যোজন যোজন পথের পরিক্রমা
কখনো কখনো পেয়েছি ঈষৎ আলো
বাকি সব তীব্র অন্ধকার
আকাশব্যাপী নক্ষত্রের মেলা
আমার চারপাশে শুধুই অন্ধকার
পেশা, নেশা, অভিভাবকদের গোঁড়ামি
তীব্র দেয়াল আমাকে ক্রমশ সঙ্কুচিত করে
চারপাশ থেকে দেয়াল এগিয়ে আসছে
প্রশ্বাসে বাড়ছে তীব্র কষ্ট, ব্যাকুল আর্তনাদ
আমি কার কাছে যাবো?
কে দেবে আমায় সশব্দে বিশ্বাসী ছায়া
মুঠো মুঠো ভালবাসার স্বর্ণালি বীজ
সমুদ্র জোছনায় অগণন অনিকেত
আমি কার কাছে যাবো?
যখনই কোন উত্তরণ খুব কাছে আমার
মান্যবর, আমাকে ফেলে আপনি চলে যান দ্বিধাহীন
অসংখ্য সাপের ছোবলে রক্তাক্ত আমি
ঊর্ধ্ব থেকে নেমে যাই গহীন পাতালে
আমি কোন দিকে যাবো?
উত্তর না দক্ষিণ, পূর্ব না পশ্চিম?
সবদিক অবরুদ্ধ হয়ে আসে
মাথার ওপর কালো ডানা মেলে উড়ে যায় চিল
ফিরে আসুক বসন্ত আবার
আবু ইসহাক হোসেন
কত দিন শুনি না কোকিলের গান
বিরান বাগান ভুলেছে ফুল ফোটানোর সুখ
চৈত্রের দাবদাহে চৌচির সজলা পাথারের বুক
এ তল্লাটে কে আর শুনাবে বৃষ্টির আজান।
গাছগুলো ঝরাপাতার শোকে মুহ্যমান
ছিনতাই হয়ে গেছে অনাগত কিশলয়
সবুজ পল্লব লুটে নিয়েছে লুটেরা সময়
শৃঙ্খলিত বিবেক অসহায় নজরবন্দি জবান।
তবুও মন স্বপ্ন দেখে এই হীরক রাজার দেশে
কোনো এক গোপী গাইন বাঘা বাইনের গানে
বসন্ত আসবেই জানি ফিরে আবার অবশেষে
জানি না কখনÑ তবে আসবেই কোন এক ফাল্গুনে।
হয় তো তখন থাকবে না এই সুরভোলা ভোরের পাখি
অসহায় মনে সেই সুখ সময়ের ছবিটি গেলাম আঁকি।
স ম তুহিন
নীরেন চক্রবর্তীর গদ্যের সাথে
এবারের বসন্তটা
কাটাব নীরেন চক্রবর্তীর গদ্যের সাথে
কলকাতাকে কবি বলেছিলেন,
‘কলকাতা, রণবিধ্বস্ত মুখের উপরে পাউডার বুলিয়ে
তুমি তোমার জলা-জঙ্গলের দিনগুলিকে ভুলতে চেয়েছিলে?
এবারে তোমার আচ্ছারকম শিক্ষা দেব !’
আর আমি গদ্যের লাইন ভেঙে কবিতার মতো সাজিয়ে
কবিতাকে আচ্ছারকম শিক্ষা দেব বলে বলে যাইÑ
‘আমি কখনও আড়ালে যাইনি।
সবসময় আমি সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছি
আমার সীমাহীন অক্ষমতা সাথে নিয়ে।
তাতে আমার লজ্জা নেই,
এই অক্ষমতাই হয়তো আমার নিয়তি।
যাদের লক্ষ্য করে আমি কথা বলতে চাই,
তাদের সকলকেই আমি নিজের বলে জেনেছি।
তাদের কাছে আমার কিসের লজ্জা?
আমি সবসময় তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে চেয়েছি,
তোমরা আমার প্রতিটি ব্যর্থতার সাক্ষী রইলে।
বলতে চেয়েছি, এই ব্যর্থতার সঙ্গে সংগ্রামের শেষে,
রক্তাক্ত শরীরে, টলতে টলতে যখন আমি
মঞ্চ থেকে নেমে আসব, তখনও তোমরাই সাক্ষী থাকবে।
বলেছি, তোমাদের শোনা ও দেখা থেকে কিছুই আমি গোপন করিনি।
আমার বলা প্রতিটি আকুতি তোমরা শুনেছ।
দুর্বল অস্ত্রখানির প্রতিটি অক্ষম আস্ফালন তোমরা দেখেছ।
আমি আমার প্রতিটি ভুল-উচ্চারণ তোমাদের শুনতে দিচ্ছি,
আমি আমার রণকৌশলের প্রতিটি পরিবর্তন ও প্রস্তুতি
তোমাদের দেখতে দিচ্ছি।
কবে আমার উচ্চারণ নির্ভুল হবে?!’
কালরাতে আলোর প্রার্থনা
কাজী রিয়াজুল ইসলাম
এখন একটা মহাদুর্দিনের কালগ্রহ করছে প্রদক্ষিণ,
হৃদয়ের ভাবনা থাকলেও জুড়ে অসীম আসমান
চারদিক শুধু হিং¯্র হায়ওয়ান, তাই ঘরেই অন্তরীণ;
প্রতিবাদ কঙ্কাল, অদৃশ্য বৃত্তের মাঝে বন্দি এ জবান।
‘চলো বেড়াতে যাই’ একথা আপাতত এনো না মুখে
শান্তি এখন শতকোটি বছর আগের বিলুপ্ত প্রজাতি
শ্বেতপায়রারা বিষাক্ত তীরাঘাতে মরছে ধুঁকে ধুঁকে
এই বুঝি এলো কালখেয়া, জীবনের পাঠ যাবে চুকে।
কী করে বলি কাক্সিক্ষত সুদিন আদৌ আসবে কি না
কিংবা কখন বাজবে আবার জীবনের কাক্সিক্ষত বীণা;
পূর্ণিমা দেখিÑ যদিও কাঁপছে প্রার্থনারত দুটি হাত
হাল ছাড়লে কোথায় নেবে ঠাঁই আগামীর আওলাদ!
প্রিয়তমা, ঠিকই একদিন মেটাব তোমার সাধ,
ভেঙো না ভেঙো না শাশ্বত স্বপ্নসাগরের ধৈর্যের বাঁধ।
বর্ষ বিদায়
(বিদায়ী বাংলা ১৪২৩ সনকে স্মরণ করে)
আনোয়ারুল ইসলাম
যাচ্ছো নীরবে ছড়িয়ে সিথানে কিছু স্মৃতি কিছু কথা
শুকনো পাতার নূপুরের ধ্বনি ভাঙে সেই নীরবতা।
তোমাতে সৃষ্টি তোমাতে ধ্বংস তোমাতে আশার বাণী
নিশীথ আঁধারে জ্বালাও তুমি যে আলোকের ঝল্কানি।
না বলা কথার মর্ম-বেদনা ধারণ করেছো বুকে
পুরনো প্রাসাদে ভৈরবী বাজে অমলিন সুখে দুখে।
কেউ তো জানে না তোমার মাধুরী চিরকাল অ¤øান
শেষের কবিতা বিভেদ ঘোঁচায় সে তোমার অবদান।
তুমি কল্যাণী আগামীর কথা শোনাও সবার মাঝে
তাই ফিরে দেখা নিজেকে সতত প্রতিটি সকাল সাঁঝে।
দিবস যামিনী আপনি পুড়ে যে হয়েছো বিধুর ধূপ
ত্যাগের মহিমা তোমার বিভাতে হেসে ওঠে অপরূপ।
নিত্য দহনে চিত্ত-পিপাসা সৃষ্টির কলতানে
মুখরিত হয় তোমার দুয়ারে জীবনের আহবানে।
বোলো না বিদায়, আসবো আবার নতুনের বেশ ধরে
পুণ্য গাহনে জাগ্রত আমি পৃথিবীর ঘরে ঘরে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন