স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতাসীনদের ভোটকেন্দ্র দখল ও সন্ত্রাসের ঘটনা না ঘটলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ আরো ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতো বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা। তাদের দাবি হচ্ছে, ফলাফল ফেয়ার, নির্বাচন আনফেয়ার হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান পৃথক পৃথক আলোচনা সভায় এই দাবি করেন।
সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, আমি মনে করি, সরকারি দলের দুঃশাসনের কারণে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটেছে। ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে অবাধে সিলমারা, জাল ভোট প্রদানের ঘটনা সেখানে না ঘটলে আমাদের ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বেশি ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতেন।
জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে স্ত্রী হাসনা মওদুদের লেখা একটি কবিতার বই প্রকাশনার অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আগামীতে দেশের অন্যান্য জায়গায় নির্বাচন হলে এরকম ফলাফলই হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ অত্যন্ত প্রাণপণ চেষ্টা করে নৌকার ব্যাজ বুকে লাগিয়ে কোনো রকমে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছে। আমরা জয়লাভ করেছি। তবে একথা বলতে হবে যদি ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হতো, তাহলে কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ পরাজিত হতো।
ভোটে জয়লাভ হলেও ভোট সুষ্ঠু হয়নি, ভোট অবাধও হয়নি। ভোটে জয়লাভ হলে ভোট সুষ্ঠু হয়, অবাধ হয়- এই থিওরি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বিঘেœ জনগণ বিনাবাধায় ভোট দিতে না পারবে, বিনা আতঙ্কে ভোট প্রদান না করতে পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত একটি নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ বলা যায় না। হয়ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ফলাফল ফেয়ার কিন্তু ইলেকশন আনফেয়ার হয়েছে- এই কথাটা স্বীকার করতে হবে।
তিনি বলেন, কুমিল্লায় অতীতে ২/৩টি আওয়ামী লীগের গ্রæপ ছিলো- এটা সত্য। এবারকার কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের বিবাদ ছিলো না। তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছেন, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে পরাজিত হয়েছে।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি পরামর্শ রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমি বলব, ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশনকে এখান থেকে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ করতে ভোটারদের নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে কি কি পদক্ষেপ নেবেন, তাদের একটা প্র্যাকটিস থাকা দরকার এবং প্রচেষ্টা থাকা দরকার। আমাদের কথা একবারই বলছি, শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি কখনো নির্বাচনে যাবে না।
জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা সভাপতি প্রলয় স্নাল-এর সভাপতিত্বে আলোচনায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফজাল এইচ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, এলবার্ট পি কস্টা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের স্বাধীনতা মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের বিষয়ে আজকে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে- কীভাবে ক্ষমতাসীনরা ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে, ভোট কেন্দ্র দখল করেছে। আমাদের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুও ভোটকেন্দ্র দখলের কথা বলেছেন। এখন বলতে পারেন সিল মারার পরও কীভাবে ধানের শীষ জিতলো? সিল মারার পরও জেতা যায়, কৌশলে জিতা যায়। নৌকার মার্কা বুকে নিয়ে সেখানে ধানের শীষে ভোট দেয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর ছিলো না। এই কৌশলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনগণ ধানের শীষ প্রার্থীকে জিতিয়েছে।
এবার কুমিল্লার নির্বাচনে আমাদের দেশের মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের নেতা-কর্মীরা কৌশল অবলম্বন করে জয়লাভ করেছে, ভবিষ্যতে সেইভাবে কৌশল নির্ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাবো। জয় আমাদের হবেই।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সিইসির যে বক্তব্য প্রথম থেকে বলেছিলেন, কোনো অবস্থাতেই কোনো কিছুতেই আমি মাথা নত করবো না। তিনি তার কথা কোনোভাবে রক্ষা করতে পারেন নাই। নির্বাচনে আমরা জিতেছি, সেটা ঠিক। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা ৩০ হাজারের বেশি ভোটে জিততে পারতাম।
সংগঠনের সভাপতি এম জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মিসেস সাবিরা নাজমুল, ফরিদ উদ্দিন, ভিপি ইব্রাহিম, কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মঞ্জরু হোসেন ঈসা, মুসা ফরাজী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন