শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

তামীমকে পেয়ে যুদ্ধ জয়ের ছক বাংলাদেশের

প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : দু’জনই বাঁ হাতি ফাস্ট বোলার, গতির চেয়ে বড় অস্ত্র তাদের সুইং এবং কাটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেকে মুস্তাফিজুর নিজেকে চিনিয়েছেন। ৯ মাস আগে তার সেই জাত চেনানো ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলের নাম পাকিস্তান। কাটার অস্ত্র প্রয়োগে আফ্রিদি, হাফিজকে শিকারে নিজেকে চিনিয়েছেন। তার পারফরমেন্সেই টুয়েন্টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের বৃত্ত ভেঙ্গে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। বিস্ময় বোলারে আবির্ভূত হয়ে কাটার মাস্টার উপাধি পাওয়া মুস্তাফিজুরের পরের অধ্যায় তো সবারই জানা। স্পট ফিক্সিং অভিযোগে ৫ বছর সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হয়ে সেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেছেন আমির গত সেপ্টেম্বরে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ফেরার রাস্তাটা কিন্তু দেখিয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়াল লীগ (বিপিএল)। বিপিএল ‘থ্রি’ তে মুস্তাফিজুর ভার্সেস আমিরের লড়াইয়ে জেতেনি কেউ, ঢাকা ডায়নামাইটের মুস্তাফিজুর বনাম চিটাগাং ভাইকিংসের আমিরের লড়াইটা ১৪-১৪ তে সমতা। পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) এ লাহোর কালান্দার্সে বিক্রি হয়ে বিসিবি’র অনাপত্তিপত্র পাননি মুস্তাফিজুর। তাই দুবাইয়ের ওই আসরে করাচী কিংসের আমিরের সঙ্গে লাহোর কালান্দার্সের মুস্তাফিজুরের লড়াইটা দেখতে পারেনি কেউ। চলমান এশিয়া কাপে সবুজ পিচের সুবাদে স্পটলাইটে যেহেতু পেস বোলিং, তাই বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে এই দুই গতির বোলারের উপভোগ্য লড়াই দেখার অপেক্ষায় ছিল ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু হচ্ছে না তা দেখা। শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে ডান পাঁজরের পেশির চোট এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে ফেলেছে মুস্তাফিজুরকে। মুস্তাফিজুরের এশিয়া কাপ শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকক থেকে উড়িয়ে আনা তামীমের উপর পড়ছে এখন বাংলাদেশ দলের সব আলো!
আগামী ৯ মার্চ ধর্মশালায় টুয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বরাদ্দ থাকা ২টি অনুশীলন ম্যাচের একটিও পাচ্ছে না বাংলাদেশ দল। ৩ তারিখে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পূর্ব নির্ধারিত অনুশীলন ম্যাচটি অনেক আগেই আইসিসি দিয়েছে বাদ। এশিয়া কাপে ৩ ম্যাচ শেষে এখন যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, তাতে আগামী ৫ মার্চে নির্ধারিত থাকা হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের অনুশীলন ম্যাচটিও ঘোষনা দিয়ে বাদ দিয়েছে আইসিসি। মিডিয়া রিলিজে জানিয়ে দিয়েছে তা। পরিস্থিতির মুখে এখন বাংলাদেশ দলকে এখন ৭ তারিখের ফ্লাইট ধরে ধর্মশালায় যেতে হচ্ছে। এবং ৮ তারিখে হালকা অনুশীলন করে পরদিন টুয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপে অবতীর্ন হতে হচ্ছে, এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার এবং সাবেক অধিনায়ক খালেদ মেহমুদ সুজনÑ‘ এখন তো ফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছি আমরা। যদি পাকিস্তানের কাছে হেরে যাই, তখনও তো ৪ তারিখের ম্যাচ পর্যন্ত অংকের হিসেবে আমাদের সম্ভাবনা থাকবে। তাই ৭ তারিখে চাটার্ড ফ্লাইটে ধর্মশালায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মুস্তাফিজুরের পরিবর্তে তামীমকে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলে অন্তভর্’ক্ত করার দাবিটা গত সোমবার দুপুরে করেছিল বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। টেকনিক্যাল কমিটি ওই রাতেই সে আবেদনে দিয়েছে অনুমোদন। এই অনুমোদন পেয়ে তামীমকে নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ জয়ের ছক আঁকছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। মুস্তাফিজুর নেই দলে, তা নিয়ে এতটুকু হাহাকার নেই দলে। বরং সব আলো এখন তামীমের উপর। পর পর ২টি টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেট আসরে ধারাবাহিক পারফরমেন্স তামীমেরÑ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ‘থ্রি’ তে ৯ ম্যাচে ২৯৮ রান (গড় ৩৭.২৫), পাকিস্তান সুপার লীগে সেখানে ৬ ম্যাচে ২৬৭ (৬৬.৭৫)। টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহককে ছাড়া এশিয়া কাপে খেলবে কি করে মাশরাফিরা? তারপরও তামীমকে ছাড়াই এশিয়া কাপের দল ঘোষনা করতে হয়েছিল বিসিবিকে। এবং তামীমকে ছাড়াই এশিয়া কাপে ৩ ম্যাচ পার করে দিয়েছে বাংলাদেশ দল। সন্তান ভুমিস্ট হবে বলে তামীমের পিতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন মঞ্জুর করায় এশিয়া কাপে খেলা থেকে তামীমকে রেখেছিল বিসিবি বিরত। সেই তামীমই কি না সন্তানের মুখ দর্শন করে সন্তান ভুমিস্ট হওয়ার ২৪ ঘন্টা পর উড়ে এসেছেন ঢাকায়! এশিয়া কাপের মাঝপথে যোগ দিয়েছেন দলের সঙ্গে! গত সোমবার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে সোজা লাগেজ নিয়ে সরাসরি শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এসে অনুশীলনে নেমে পড়েছেন এই বাঁ হাতি ওপেনার। মঙ্গলবার অনুশীলনে সবার মধ্যমনি এই বাঁ হাতি। বাবা হওয়ায় টিমমেটদের অভিনন্দন পর্ব অনেক বেশি চাঙ্গা রেখেছে তামীমকে। তবে ২ দিন বয়সী ছেলেকে ব্যাংককে রেখে তামীমকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার একমাত্র কারন কিন্তু মুস্তাফিজুরের ইনজুরি নয়, মঞ্জুর হওয়া ছুটি শেষে ১ মার্চে ঢাকায় ফেরার শর্তটা ছিল বিসিবি’র। ইনজুরিতে পড়ে এশিয়া কাপের দল থেকে মুস্তাফিজুরের ছিটকে পড়ায় অবশ্য এক দিন আগে ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। এ তথ্যই দিয়েছেন টীম ম্যানেজার খালেদ মেহমুদ সুজনÑ ‘টুয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপের আগে তো ধর্মশালায় অনুশীলন ম্যাচ খেলা হচ্ছে না আমাদের। তাই তামীমকে এশিয়া কাপে অন্তত: একটি ম্যাচে খেলানোর সুযোগ পেলাম। ওকে এমনিতেই আসতে হতো। দলের সঙ্গে অন্তত: অনুশীলন করতে হতো। ছুটি নিয়ে ব্যাংককে যাবার আগে বলা হয়েছিল সম্ভব হলে সন্তান ভুমিস্ট হওয়ার পরপরই যেনো চলে আসে।’
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান তামীম । এক আসরে ৪ ম্যাচের চারটিতে ফিফটির রেকর্ডটাও তার। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬টি ওয়ানডে ম্যাচে তার রেকর্ড ঈর্ষনীয়Ñ ৪ হাফ সেঞ্চুরি, এক সেঞ্চুরি। এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সর্বশেষ ৫ ইনিংসের একটিও ফিফটিহীন কাটেনি তামীমের। সর্বশেষ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটা তো ছিল তামীমের সিরিজÑ ১৩২, ১১৬’র পর ৬৪! টেস্টে ক্যারিয়ারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিটাও (২০৬) তামীমের পাকিস্তানের বিপক্ষে। ৯ মাস আগে তামীমের এমন পারফরমেন্সেই পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। এমন ইনফর্ম ওপেনারকে পেয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ জয়ের ছঁক আকছেন হাতুরুসিংহেÑ ‘ওপেনিং নিয়ে এখন আর কোন দূর্ভাবনা নেই। তামীম সরাসরি ওপেনিংয়ে নামবে। গত বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাজার রান করেছে, উপরের দিকে সে ই আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান। এ ধরনের মানসম্পন্ন ব্যাটসম্যান সব সময়ই উপকারে আসবে।’ তামীমকে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন মাশরাফিÑ ‘তামীমের না থাকা সব সময় আমাদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর ব্যাপার। সব ফরম্যাটে সে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। তামিম অনেক দিন ধরে খেলছে, সে অনেক অভিজ্ঞ।’
ওয়ানডে ফরমেটের ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে টি-২০’র বাংলাদেশের বড্ড অমিল। আইসিসি’র র‌্যাংকিং সে ব্যবধান নির্নিত করলেও টি-২০ ফরমেটের নুতন এশিয়া কাপ মঞ্চে ফাইনালে চোখ বাংলাদেশ কোচ হাতুরুসিংহেরÑ ‘শেষদিকে এসে টি-২০তে আমরা অনেক কিছু করেছি, যা আগে কখনো টি-২০তে পারিনি। এর আগে কখনো টি-২০তে শ্রীলংকাকে হারাতে পারিনি। আগে যা পারিনি, তা এখন অর্জন করতে পারছি। তাই সব সময় আমাদেরকে ঘিরে আশা থাকছে।’ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের রেকর্ডটা ভাল নয়, ১২টি মুখোমুখি লড়াইয়ের সব ক’টিতে হেরেছে বাংলাদেশ দল। তবে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ৯ মাস আগে পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ করে, টি-২০’র সর্বশেষ দেখায় পাকিস্তানকে হারানোর অতীত থেকে টনিক নিতেই পারে বাংলাদেশ দল। ফিরতি টি-২০ লড়াইয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয়ার সংকল্প তাই মাশরাফির। এশিয়া কাপে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের স্বপ্ন দেখছেন মাশরাফিÑ ‘এটা একটা নতুন ম্যাচ। যারা জিতবে তাদেরই ফাইনাল খেলার সুযোগ বেড়ে যাবে। সুতরাং এখানে আমাদের প্রতিটি জায়গায়ই সুযোগ আছে। প্রতিপক্ষেরও সুযোগ আছে। তারা একবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। আমরা যদি ওদের দিকে না তাকিয়ে আমাদের পরিকল্পনাগুলো ঠিকঠাক প্রয়োগ করি, আমার মনে হয় আমাদের সব সুযোগই আছে।’

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন