মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল এমনই হয়

প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : সিরিজের ট্রফি আগে, না এক ঝাঁক নতুনদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আগে? ১ বছর ২ মাস আগে এমনই এক প্রশ্নে হাতুরুসিংহের উত্তরটা ছিল, আগে সিরিজের ট্রফি, পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ২০১৪’র নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা ৩ জয়ে সিরিজের ট্রফি নিশ্চিত করে চতুর্থ ম্যাচে লেগ স্পিনার জুবায়ের এবং ৫ম ম্যাচে বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ও টপ অর্ডার সৌম্যকে পরখ করে দেখতে তাদের মাথায় ওয়ানডে ক্যাপ ওঠানোর সুযোগটা দিয়েছিলেন হাতুরুসিংহে। ১৪ মাস পর সেই হাতুরুসিংহের পরিবর্তিত তত্ত্বÑ আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পরে ট্রফি জয় ! ঘোষণা দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার এই সিরিজের প্রথম ২ ম্যাচে সোহান পাস করলেও ফেল করেছে শুভাগতহোম। ২-০তে এগিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করাটা যখন প্রধান লক্ষ্য হওয়ার কথা, সেখানে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে মুশফিকুরহীন দলে ফিট তামীম এবং তাসকিন  থেকেও দর্শক! সবাইকে চমকে দিতে এক সঙ্গে ৪ তরুনের টি-২০ অভিষেক!
টেস্ট বোলারের লেবেল খুলে ফেলে পেস বোলার শহীদের আন্তর্জাতিক টি-২০ অভিষেক হয়ে গেল এই ম্যাচে। যে কোন ভার্সনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন দিনে অভিষেক হলো পেস বোলার আবু হায়দার রনি, ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক সৈকত এবং পেস অল রাউন্ডার মোক্তার আলীর! দলের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়ে, অনুশীলন করতে করতে তামীমের বিশ্রামে টি-২০তে প্রত্যাবর্তন হলো এদিন ইমরুল কায়েসেরও। ২০০৬’র ২৮ নভেম্বর খুলনায় টি-২০ অভিষেকের ৮ মাস পর ২০০৭ এ কেনিয়ার বিপক্ষে নাইরোবিতে  এক সঙ্গে ৬ ক্রিকেটারের টি-২০ অভিষেক এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেটে রেকর্ড। সেই অতীতটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন গতকাল হাতুরুসিংহে! তরুণদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাটা একটু বেশিই হয়ে গেল এবং তাতে ক্ষতিটাও হলো বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে ৮ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৪২ রানে জয় পাওয়া দলটিই কি না সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ৩১ রানে হেরে সিরিজে ফেরালো জিম্বাবুয়েকে!
তরুণ পেস বোলার আবু হায়দার রনি বিপিএলের আবিষ্কার, ২১ উইকেট পেয়ে আলোচনায় উঠে আসা ডেথ বোলিংয়ের এই বোলারের অভিষেক ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু জাতীয় লীগে চার দিনের ম্যাচে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি করে, জিম্বাবুয়ে সফরে তিন দিনের ম্যাচে বাংলাশে ‘এ’ দলকে সময়োচিত ব্যাটিংয়ে জিতিয়ে মোসদ্দেকের টুয়েন্টি-২০তে অভিষেকের কি ব্যাখ্যা দিবেন হাতুরুসিংহে? ইনিংসের মাঝপথে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯ বলে ১৫ রানÑ তাও আবার ওভারপ্রতি আস্কিং রান রেট যখন ১২’র কাছাকাছি, তখন এমন ব্যাটিংয়ে এই তরুণ যে নিজেই দিয়েছেন প্রশ্নের উত্তর। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠেয় ইনচন এশিয়ান গেমসকে সামনে রেখে মোক্তার আলীর দলে সুযোগ পাওয়াটা ছিল না কোন চমক। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সেঞ্চুরির ইনিংসে রেকর্ড ছক্কায় এশিয়ান গেমসের স্কোয়াডে থাকাটাই ছিল তার প্রাপ্য। ইনজুরির কারনে খেলা হয়নি তার এশিয়ান গেমসে। সেই মোক্তার আলী সম্প্রতি কোন লেভেলের ঘরোয়া ক্রিকেটে আহামরি পারফর্ম না করেও টি-২০ ম্যাচে হয়ে গেল আন্তর্জাতিক অভিষেক! আর বিপিএলএ ১৪ উইকেট শিকারের সুবাদে শহীদেরও হয়ে গেল টি-২০তে অভিষেক।
পরীক্ষা-নীরিক্ষা বেশি করার ফলটাও পেলেন হাতে-নাতে টিম ম্যানেজমেন্ট। দ্বিতীয় ওভারে মাসাকাদজার হাতে চার চারটি বাউন্ডারি খেতে হলো শহীদকে। অনিয়ন্ত্রিত প্রথম স্পেলে (২-০-২০-১) প্রতিপক্ষকে ফুলে ফেঁপে ওঠার পথ তৈরি করে দিলেন এই পেসার। সঙ্গে যোগ হলো তার ওভার থ্রোতে বাউন্ডারি!! মাহমুদুল্লাহ’র বলে ১২ রানে থেমে যাওয়ার কথা ছিল সিন উইলিয়ামসের, পয়েন্টে মোসাদ্দেক ক্যাচ ফেলে সেই উইলিয়ামসকে ৩২ পর্যন্ত স্কোর টেনে নেয়ার উপায়টাও করে দিলেন। আবু হায়দার রনি প্রথম স্পেলে মার খেয়ে (২-০-২৪-০) ফিরেছেন দ্বিতীয় (১-০-৬-০) এবং তৃতীয় সেপলে ১-০-১০-২)।
বুলাওয়েতে ৩ বছর আগে ১৬৮/৫ স্কোর ছিল এতদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের টি-২০তে সর্বোচ্চ। যে কোন প্রতিপক্ষের ৮ম সর্বোচ্চ স্কোরের জবাবটা দিতে পারলে চেজ করে জয়ের সেরা রেকর্ডটা হয়ে যেতো গতকাল। ইনিংসের প্রথম ওভারে অন সাইডে খেলতে যেয়ে ইমরুল কায়েসের বোল্ড আউটের পর দ্বিতীয় জুটিতে সাব্বির-সৌম্য’র ৪২ বলে ৬৭ দিয়েছিল ভরসা। কিন্তু ক্রেমারকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে খেলতে যেয়ে সৌম্য ২৫ এ ফিরে গেলে সাব্বির ছাড়া আর কারো ব্যাটিংয়ে যে লড়াইয়ের কোন ইচ্ছাই যে প্রতিফলিত হয়নি। ৪৬,৪৩*’র পর ৩২ বলে ৫০Ñ এমন ইনিংসে ৯টি চার সাব্বিরের। তিন নম্বরে এমন ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান টি-২০তে বাংলাদেশ এবারই যে প্রথম দেখল। বোলিংয়ে ছন্দ (৩/৩২) খুঁজে পাওয়া সাকিব হতাশ করেছেন ব্যাটিংয়ে (১১ বলে ৩ রান)। ফলে শেষ ৩০ বলে ৭৯ রানের টার্গেটটা পাড়ি দেয়া হয়নি বাংলাদেশ দলের। সুযোগ পেলে সোহান বড় বড় শট খেলতে পারেন, তা জেনে যাওয়ার পরও অভিষিক্ত মোসাদ্দেককে ৪ এ পাঠিয়ে  সোহানকে নামানো হয়েছে ৮এ! ১৭ বলে ৫ চার এ ৩০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে কোচের ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন সোহান। আত্মকেন্দ্রিক ইনিংসে ১৫ বলে ১৯ রানে মোক্তার আলীও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই মুহূর্তে প্রস্তুত নন বলে দিয়েছেন জানিয়ে। সিরিজের ২য় ম্যাচে ৪৫টি ডট বলে সে কি অনুশোচনা, সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে সিঙ্গলে জোর দেয়ার অঙ্গীকার করে ডট বলের সংখ্যা সেখানে ৪৮টি! কথা তো রাখেনি কেউ। খুলনায় সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে স্বাগতিকদের প্রথম হার ও যে দেখল দর্শক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন