সৈয়দ কামাল হুসাইন
পৌষের বিকাল। অপরূপ সাজে চারপাশ প্রতিভান্বিত। অতি প্রচ্ছন্নতায় হাওয়ার সাথে মিশে সরষে ফুলেরা খেলে, সূর্য নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে দেখে। অচঞ্চল পায়ে সে হাঁটে, একটা নীল পাখি উত্তর দিকে উড়ে যায়। এতো মায়াময় পাখিও আকাশে উড়ে, সে ভাবে। পাখিটিকে এমনভাবে দেখে যেমনভাবে মানুষ ম্যাজিক দেখে। পাখিটি উড়ে যায় দূরে, দৃষ্টির আড়ালে, সে তবুও তাকিয়ে থাকে, পাখি খুঁজে। হয়তো সে জানে না উড়ন্ত পাখি শুধু উড়েই যায়, সে তো দেখে না কে তারে লক্ষ্য করে, প্রগাঢ় ভালোবাসায় কে তারে ভালোবাসে। পাখি উড়ে যায়, বহু সময় কেটে যায়। সন্ধ্যা হয়, তবুও সে তাকিয়ে থাকে। পাখি দেখে। সন্ধ্যার ¤¬ান আলোয় সে তাকিয়ে দেখে কেউ একজন তার পাশে দাঁড়িয়েছে। মৃদু গলায় সে বলে
‘মফিজ উদ্দী যে, কই যাইতেছো?’
মফিজ উদ্দীন তাকে চিনতে পারে। এর নাম রেহমান আলী। ক্লাস সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত একসাথে পড়া হয়েছে। দুজনের ক্লাস জীবনের কিংবা স্কুল ছাড়ার আরো বছর পাঁচেকের স্মৃতি হাসি বেদনার সাক্ষী বুকের কাছাকাছি কোথাও নিভৃতে লুকিয়ে আছে। দুজনে এক সাথে পরীক্ষাও দিয়েছিল, কিন্তু দুজনেই সমান সমান, তিন তিন বিষয় করে ফেইল।
মফিজ উদ্দিন তার কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, ‘পঞ্চানন্দপুর বাজারে, তুমি যাইবানি?’
রেহমান আলী জ্যাকেটের পকেট থেকে হাত সরিয়ে মাফলার ঠিক করে। তার কাঁধে আলতো স্পর্শ করে বলল, ‘কী উদ্দেশ্য?’
মফিজ উদ্দীন ডানে-বাঁয়ে তাকায়। কেউ আসে নাকি লক্ষ্য করো। গোঁফে হাত বোলিয়ে স্থির গলায় বলে, ‘গ্যালে বুঝতে পারবা, যাইবানি কও?’
‘আগে কও হুনি।’
মফিজ উদ্দীন কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে বলে, ‘ক্লাস নাইনের এক ছ্যারি আছে, ওই যে গত সোমবারে দ্যাখছিলাম স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে।’
রেহমান আলীর ঠিক মনে পড়ে হয়তো মনে পড়ে না তবে খুব খুশি হয় সে। আধো অন্ধকারে তার মুখে চাঁদের মতো ¤¬ান দ্যুতি ছড়ায়। মনের গভীরে সবুজ পাখির মতো দীপ্তিময় সুখ ওড়াউড়ি করে। একটু জোর গলায় বলে, ‘যাইতাম না ক্যারে? চল যাই।’
মফিজ উদ্দীন লঘু হেসে রেহমান আলীর একটা হাত ধরে বলে, ‘এইটেতে তুই একপায়ে রাজি হইবি জানতাম, যদি কইতাম আইজ ওইহানে ব্যবসায়িক সমিতির সভা কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠান তবে যাইতি না, এক হাজার টাকা দিলেও যাইতি না।’
রেহমান আলি হেসে হেসে গলায় চুলকায়, তার কালো মুখের উপর ফুস্কুড়ি চিমটিয়ে বলে, ‘ওইসব ভাল্লাগে না, কী করুম ক?’
ওরা হাঁটতে শুরু করে। মফিজউদ্দীন আগে হাঁটে রেহমান আলী পিছে। পুকুর পাড় অতিক্রম করে আলপথে খানিক সময় হাঁটে। একটা টিনশেডের ঘর পার হয়ে ছাতার মতো গোল আম গাছের নিচে দাঁড়ায়। সেখানে আরো তিনজন দাঁড়িয়ে ছিল। মফিজ উদ্দীন সকালেই ওদের বলে রেখেছিল। প্রথম শুনেই অতি আনন্দে মফিজউদ্দীনের গলা জড়িয়ে একজন বলেছিল, ‘দোস্ত, কী খাবি বল? যা খাবি তাই খাওয়ামু।’
মফিজ উদ্দীন হেসে হেসে বলে, ‘ম দিয়ে শুরু এমন একটি পানীয়।’
অন্যজন মিছিল শুরু করেছিল, ‘তোমার ভাই, আমার ভাই মফিজউদ্দীন ভাই।’
তারপর ওখানে চারজনের সাথে যোগ দিয়েছিল আরো দুজন। একজন ব্যাঙ্গের মতো লাফাতে লাফাতে এসে মফিজউদ্দীনের গালে চুমু দিয়ে বলে, ‘তুই দোস্ত তুই আমাদের বস। একমাত্র বস। বিগবস।’
অন্যজন মফিজউদ্দীনের হাতে সিগ্রেট দিয়ে বলে, ‘নে আরাম করে টান দে।’
মফিজ উদ্দীন সিগ্রেট টান দিয়ে বলে, ‘আমি নয় মাস পরে লাইন পাইছি, ওই ছ্যারির কী যে ভাব, কত কষ্ট যে হইলো।’
ওদের মধ্য থেকে একজনের নাম শরাফত। কালো বেঁটে মোটা। মাথায় লম্বা চুল। সে বলে, ‘আইজ এই কষ্টের ফল খাওয়ার রাইত।’
আম গাছের পাতা বেয়ে কুয়াশা পড়ছে। ঠাÐা হাওয়া চিরস্থায়ী দুঃখের মতো শোঁ শোঁ করে উড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদের শরীরে শীত কিংবা হিম হাওয়া ছোঁয় বলে মনে হয় না, প্রত্যেকেই যেন উত্তাপের যন্ত্র। সবাই একটা করে সিগ্রেট ধরায়, একি সাথে টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে গোল হয়ে দাঁড়ায়। মফিজউদ্দীন মুখে সিগ্রেট গুঁজে ডান হাত প্রসারিত করে; সাথে সাথে চারজন মফিজউদ্দীনের হাতের উপর হাত রাখে। মফিজউদ্দীনের হাতের উপর রেহমান আলীর, তার উপরে শরাফত, তার উপরে বাচ্চু, তার উপরে নিলয়ের।
রেহমান আলী বলে, ‘ছ্যারিডারে চিনবার পারছি; ক’দিন আগে ওরে কইছিলাম, তোমার সাথে কথা আছে। ও মা! ও কয় কী --’
শরাফত জিগ্যেস করলো, ‘কী কয়?’
‘চোখ ঘুরিয়ে, বেণিকরা চুল নাড়িয়ে, মুখ ভেংচিয়ে কয় ইতরের সাথে কোনো কথা নাই।’
‘তারপর তুই কী কইলি?’ নিলয় জিগ্যেস করে।
‘আমি কিছু কইনাই, তয় আইজ রাইতে কইমু।’
‘রেহমান আলী রাংরাং পাখির মতো মুখ হা করে হাসতে থাকে। তার হাসির সাথে যোগ দেয় না শুধু মফিজউদ্দীন। ওরা হাসতে ক্লান্ত হয় না তবু। হয়তো হাসির এই ফাঁকে হা করা মুখের ভিতর প্রবেশ করে মশাজাতীয় কোনো পোকা, তা খেয়াল করে না কেউ। মফিজ উদ্দীন যে বিষণœ আকাশের মতো মুখ করে আছে তাও লক্ষ্য করে না কেউ। অবিরত হাতের উপর হাত রেখে হাসতে থাকে।
অকস্মাৎ মফিজউদ্দীন খুব দ্রæত হাত সরিয়ে নেয়। বিপন্ন গলায় বলে, ‘কিন্তু একটু সমিস্যা আছে রেÑ’
রেহমান আলী বিহŸল চোখে তাকায়। স্থির গলায় বলে, ‘কী সমিস্যা রে?’
মফিজ উদ্দীন সামান্য সময় কথা বলে না, হয়তো কথা বলতে ভুলে যায় কিংবা ভুলে না। সন্ধ্যার অন্ধকারে পাঁচ তরুণ পোকাদের শরীরের শব্দ কিংবা মুখের শব্দ শুনে শুনে কী যেন ভাবতে থাকে। এই সময় বাচ্চু স্বীয় বুকের উপর থাপড়াতে থাপড়াতে বলে,
‘কী অইছে ক আমারে, ঠিক কইরালামু।’
মফিজ উদ্দীন লম্বা শ্বাস ছাড়ে। সিগ্রেট টান দেয়। নাক দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে। অকারণে কাশি দিয়ে থুথু ফেলে। এইটে তার বহুদিনের পুরনো স্বভাব। যখন সে খুবই ছোট, তখন একদিন দুপুর বেলা কিংবা সন্ধ্যায় স্কুল থেকে ফিরে দেখে, তার লাগানো ফুল গাছ ছাগল কিংবা গরু অথবা তার চেয়েও ছোট কেউ উপড়িয়ে ফেলেছে, সেই মুহূর্তে সে কাশতে শুরু করে; যদিও তার ঠাÐা ছিল না, তারপর সে ক্রমাগত থুথু ফেলে। এ তার অভ্যাস শিশু দিনের, যখন কোনো কাজ কিংবা খেলায় হেরে যাওয়া অথবা লজ্জিত হওয়া বা অপ্রাপ্তির সম্ভবনা থাকে তখন সে থুথু ফেলে। রেহমান আলী ঠিক বুঝতে পারে।
সে বলে, ‘কী অইছে ক’।
চাপা স্বরে মফিজ উদ্দীন বলে, ‘ওই মাহমুদুল্লেহা।’
বাচ্চু বলে, ‘আমাদের সাথে পড়তো যে সেই মাহমুদুল?’
মফিজ উদ্দীন দুঃখী গলায় বলে, ‘হ, ওই ফর্সা ছ্যারাডা, বড্ড জ্বালায় আমাদের।’
বাচ্চু লম্বা চুলে হাত চালিয়ে বলে, ‘ও একা কিছু করতে পারবো না, কারো সহায়তাও পাবে না।’
‘রেহমান আলী পকেট থেকে ফোন বের করে বলে, ‘দাঁড়া আমি মির্জা কাকাকে ফোন দিচ্ছি।’
তারপর সে আরো দুজনকে ফোন দিয়ে প্রায় একইরকম কথা বলে।
মাহমুদুল হক যখন পঞ্চানন্দ বাজারে পৌঁছালো তখন ফজরের আযান শেষ হয়েছে। রাস্তার দুপাশে দশ পনেরোটা দোকান নিয়ে এ বাজার। সে কারেন্টের খুঁটির নিচে অণুক্ষণ দাঁড়ায়। কোনো মানুষ কিংবা যন্ত্র বা কোনো প্রাণীর হেঁটে চলার শব্দ বা কথা বলার শব্দ শুনতে চেষ্টা করে। পশ্চিম দিকের কোনায় নারকেল গাছের সম্মুখে দুতলা ঘরের নিচতলা থেকে ক্ষীণ আলো ছাড়া অন্যকিছুর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। মাহমুদুল হক সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারে না যে, এই ঘরেই ওরা আছে। সে অমন্থর পায়ে এগিয়ে যায়। তখন সে ভাবে যে, এই পৃথিবীতে ভালো কাজের জন্য শত শত প্রতিবন্ধকতা আর মন্দ কাজের জন্য শত শত উৎসাহ-উদ্দীপনা। তাকে এক মহিলাও বাধা দিলো, মহিলা এই বলে যে, মাহমুদুল, আমাকে একটা বিষের বোতল এনে দাও পি¬জ; আর সহ্য হয় না জীবন। তখন মাহমুদুল হক তাকে বোঝায়, সান্ত¡না দেয়। কেনো জানি তখন তার মনে হয় এই মহিলা তাকে আটকাতে চাচ্ছে এই কারণে যে, মফিজ উদ্দীনরা তাদের কাজে ব্যর্থ না হয়। মাহমুদুল হক এব্যাপারে চৌদ্দজনের সহায়তা চেয়েছে। তারা রাজি তো হয়নি, উল্টো তাকে আটকাতে চেষ্টা করেছে। কেউ বলে যে, ওদের কাজ ওরা করুক, আমরা কারো শত্রæ হতে পারব না, তুমি অযথা গিয়ে শত্রæ হয়ো না। অন্যজন হাসতে হাসতে বলে যে, তুমি পাগল হইলা মাহমুদুল, এরচেয়ে বরং এই নাম্বারে কথা বলো, উনি খুবই ভালো ডাক্তার।’ মাহমুদুল হক থামে না। বিদ্রƒপ ছলনা বাধাকে গ্রাহ্য করে না।
খুব কাছের একজন মানুষ তাকে বলে, ‘আমি বরং মফিজউদ্দীর সাথে কথা কয়ে দেই প্রথম সিরিয়াল যেন তোমাকে দেয়।’
লজ্জা ঘৃণায় যখন সে সহায়তার আশা ছেড়ে একা একাই যাবে বলে দ্রæত হাঁটে তখন বাধা হয়ে দাঁড়ায় হাসান মির্জা। অবশ্য এটা সরাসরি বাধা নয়, মাহমুদুল বুঝতে পারে তা অনেক পরে। হাসান মির্জা তাকে বলে যে, কৃষ্টপুর চৌরাস্তায় ইউক্যালিপ্টার গাছের সাথে তার ছেলেকে বেঁধে রাখে মফিজ উদ্দীন, এই মুহূর্তে মাহমুদুল সহায়তা না করলে হয়তো তার ছেলে আর ফিরবে না কোনোদিন। পিতার বিমর্ষ মুখ দেখে বড়ো মায়া লাগে মাহমুদুলের, মেয়েটির দুর্দিনের কথা ক্ষণ সময়ের জন্য ভুলে যায় হয়তোবা ভুলে না। সে পথ ঘুরে উল্টো দিকে যায় এবং সেখানে গিয়ে দেখে কেউ নেই তখন হাসান মির্জা গদ-গদ গলায় বলে যে, হয়তো অন্যকোথাও, হয়তো অন্য কোথাও। চলো ওই দিকটায় দেখি। দীর্ঘক্ষণ খুঁজেও যখন সন্ধান মিলেনি তখন মাহমুদুল হক বললো যে, আমার একটু তাড়া আছে আসছি আমি। তখন অভিন্ন কায়দায় হাসান মির্জা বলে যে, তোমার পায়ে ধরি বাপ, আর একটু খুঁজি। তারপর আরো ঘণ্টা দেড়েক কেটে যায়। কিন্তু হাসান মির্জার ছেলের সন্ধান মিলে না। এরপর বিষণœ মনে যখন সে ফিরে আসে, তখন হাসপাতালের পেছনের ঘর থেকে তার পরিচিত এক মহিলা বের হয়ে আসে। শীতল আর্দ্র গলায় বলে, ‘বাবা, এইকটু হুনো?’
মাহমুদুল হক দাঁড়াতেই সে মহিলা শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলে, ‘বাবা আর সহ্য হয় না, এইকটু বিষ এনে দাও।’
প্রথমে তার খুব রাগ হয়। মনে মনে ভাবে যে পৃথিবীতে এত্তো মানুষ থাকতে তাকে কেনো বিষ আনার কথা বলে, সে তো তার আপন কেউ নয় একটু আধটু পরিচিত মাত্র, তাকে দুঃখের কথা কেনো বলা। সে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়, কেনো জানি ভয় হয় মনের গোপনে। তাই সে শান্ত গলায় সান্ত¡না দেয়, বুঝাতে চেষ্টা করে। অতঃপর সে যখন পঞ্চানন্দপুর বাজারে পৌঁছুল তখন ফজরের আজান শেষ হয়েছে। নারিকেল গাছের সম্মুখে দুতলা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়। চঞ্চল পায়ে হাঁটে। কাঠের দরজা, দরজায় ছিটকানি লাগানো, তালা খুলা। সে দ্রæত ছিটখানি খুলে। তার কাছে মনে হয় যে ছিটখানি খুলতে চাচ্ছে না, যেন শত সহস্র বছর ধরে ছিটকানি খোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সে ঘরে প্রবেশ করে দেখে যে একটা টেবিলের উপর কয়েকটি ভাঙা বোতল। সে বোতলের ভাঙা অংশ লাল রক্তের মতো। তারপর সে বেডরুমে যায়। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে যে, ফ্যানে লাগানে শূন্য রশি। বিছানোর উপর তাকিয়ে দেখে অর্ধ আচ্ছাদনে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে কেউ, তার লম্বাচুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে আছে।
প্রথমে সে ডাকে, ‘এই যে?’
যেহেতু সে তার নাম জানে না। পর পর তিনবার ডাকে, ‘এই যে?’
তার খুব ভয় হয়। মনে হয় যে আকাশ থেকে অসংখ্য ভাঙা বোতল ঝরে পড়ছে। সে বোতলের আঘাতে মানুষ অন্যান্য প্রাণীরা আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। মাথা থেকে কিংবা শরীর থেকে ছিটকে বের হচ্ছে রক্ত এবং মানুষের পৃথিবীতে ছাদহীন সব ঘর, সে ঘরে বৃষ্টির মতো ভাঙা বোতল পড়ছে। মাটিতে স্তূপ হয়ে আছে ভাঙা বোতলে, কেউ হাঁটতে পারছে না। শুয়ে থাকা মেয়েটির পাশে বসে সে বুঝতে পারে বিছানায় ছড়ানো ভাঙা কাচের সূ² অংশ ফুলের পাপড়ির মতো ছড়িয়ে আছে। অতঃপর সে আলতোভাবে মেয়েটিকে ধাক্কা দিলে নিস্পন্দ দেহ চিৎ হয়। তার দুটো চোখের মধ্যে একটি চোখও নেই সে দেখতে পায়। চোখের ভ্রু কপাল ও নাকের কিছু অংশে মাংস নেই; শুকনো রক্ত জমাট বেঁধে কিংবা রক্ত বেয়ে পড়ার দাগ স্বচ্ছ হয়ে উঠে, সেখানে কয়েকটি মাছি বসে কিংবা উড়ছে। বুক কিংবা গলার অংশে অথবা নাভির উপরে বা পেটের মধ্যে গোল গোল ক্ষত যেখানে মাংস নেই। মেঝেতে ছড়িয়ে আছে কাচের ভাঙা অংশ, রক্তের দাগ, মাংসের টুকরো, ছেঁড়া কাপড়ের অংশ ও দলাপাকানো চুল। মাহমুদুল হক ¤¬ান গলায় বলে, রাক্ষস! রাক্ষস! তার খুব বেশি পিপাসা হতে থাকে খুব বেশি পিপাসা, সে জল খোঁজে। খাটের নিচে সে লক্ষ্য করে সেভেন আপ-এর বোতলে সাদা পানি। সে দ্রæত মুখ খোলে। কোনো শব্দ ছাড়াই পানি গিলে, সে খুব অবাক হয়, জলের স্বাদ নোন্তা নোন্তা পেয়ে। সে ভুল করে চোখের জল পান করে ফেললো না তো? এখানে তো সমুদ্রও নেই যে নোনা জল এনে রাখবে। তার হঠাৎ খুব মনে হয় পৃথিবীর সব সমুদ্রের জল মানুষের চোখ থেকে তৈরি হয়।
দুদিন পর দৈনিকে নিউজ হয় যে, তরুণী অদ্ভুতভাবে আত্মহত্যা করেছে। বিস্তারিত লিখে এভাবে যে, প্রথমে সে ফ্যানের সাথে রশি ঝুলায় কিন্তু কোনো কারণে সে ফ্যানের সাথে না ঝুলে, কাচের ভাঙা বোতল ব্যবহার করে। তার অর্ধশরীর বিবস্ত্র ছিলো এবং কাপড়ের কিছু ছেঁড়া অংশ মেঝেতে পড়েছিল। খুব ধারণা করা হয় যে, মরার পূর্বে সে কাচের ভাঙা বোতল নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে এবং এর আগে হয়তো সে নিজের চুল টেনে ছিঁড়ে এবং সর্বশেষ সে চোখ বরাবর কাচের বোতল দিয়ে আঘাত করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন