শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

হাকালুকি হাওরে মরা মাছ আর পচা ধানের দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস

| প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস এম উমেদ আলী : চলতি বছর টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাকালুকি হাওর, কাউয়াদিঘির হাওর, হাইল হাওর, বড় হাওরসহ এলাকার ছোটবড় হাওরসহ বিস্তীর্ণ কৃষিভূমির বোরো ধান। তবে ধানের ক্ষতির পর হাওরাঞ্চলের দ্বিতীয় সম্বল মাছও এখন ক্ষতির সম্মুখীন।

মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা অংশে হাওরে নিমজ্জিত বোরো ধান পচে পানিতে সৃষ্টি হয়েছে বিষক্রিয়ার আর এর ফলে বড় মাছের পোনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ মারা যাচ্ছে। কৃষি ও মৎস্য সম্পদ সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এ বছর হাওরে আগাম বন্যা দেখা দেওয়ায় আধাপাঁকা বোরো ধান ও মাছ পচে গিয়ে এতে (গাঁজন) সৃষ্টি হয়। এতে পানি দূষিত হয়ে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।’ গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওর এবং তীরবর্তী এলাকার বোরো ধান তলিয়ে যায়। এতে হাওরের বোরো ধান নষ্ট হয়ে যায়।
হাকালুকি হাওরের চকিয়া বিলের দক্ষিণ হাকালুকি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির লোকজন জানান, চৈত্র মাসের অকাল ঢলে ২৫ সহস্রাধিক হেক্টর জমির বোরো ধানের পাশাপাশি হাকালুকি হাওরের ছোটবড় ২৩৭টি বিলও তলিয়ে যায়। জলমহালগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগে হাওরময় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ধান রোদে পচন ধরে। এতে পানি দূষিত হয়ে ব্যাপকহারে মাছে মড়ক লেগেছে। হাওরের চকিয়া বিলে ৩ বছরের জন্য ইজারা নেয়ায় ইজারাদার সেখানে ১৫ লাখ টাকার পোনা মাছ অবমুক্ত করেন। কিন্তু মাছের মড়কে সেই তারা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে স্থানীয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ.ক.ম শফিকুজ্জামান সরেজমিন সোমবার হাকালুকি হাওর পরিদর্শন করেন। মাছ মরার কারণ হিসেবে জানান, অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়া আধাপাকা ধান ও ধানগাছ পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট করেছে। ধান গাছে এবং ঘাস নিধনের বিষের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব। এ অবস্থা আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত হাওরে সকল ধরনের ফিশিং বন্ধ রাখা হয়েছে। এ জন্য স্থানীয় জনসাধারণকে, মাছ মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে মাইকিং করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে হাওরের পানিতে চুন ছিটানো হচ্ছে। হাওর সংলগ্ন এলাকায় জনসচেতনতা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় লোকজনের সহায়তা একান্ত প্রয়োজন। হাকালুকি হাওর তীরের ভাটেরা ইউনিয়নের কবির আহমদ, নোমন আহমদসহ বেড়কুড়ি, দক্ষিণভাগ গ্রামের মানুষ জানান, হাওর থেকে যখন বাতাস আসে তখন দুর্গন্ধে যেন নাড়ি-ভূড়ি ছিড়ে বমি আসে। মাছ আর ধান পচে একাকার। দুর্গন্ধে এলাকায় বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কৃষি ও মৎস্য বিভাগ জানায় হাকালুকি হাওরে প্রচুর মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখা যায়। ভেসে উঠা মরা মাছের মধ্যে ছিল পুটি, টেংরা, ভেদা, বাইলা, বোয়াল মাছ, বোয়াল মাছের পোনা, চান্দা, পাবদা এবং রুই জাতীয় মাছের ছোট পোনা মরে ভেসে উঠছে। তলিয়ে যাওয়া ধান ও পচা মাছের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে হাওর জুড়ে। হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, হাকালুকি হাওর কেবল এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর নয়, দেশের সর্ববৃহৎ মিঠা পানির মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। এখানে ২-৪ বছরের ব্যবধানে পাহাড়ী ঢলে অকাল বন্যা হয়। কিন্তু এবারের মত চৈত্র মাসে কখনও বন্যা হয়নি। এই অকাল বন্যায় ধানের পচনে মাছেও মড়ক লেগেছে। ফলে মিঠা পানির এই মৎস্য প্রজন্ন কেন্দ্রটিতে মৎস্য প্রজনন হুমকির মুখে পড়বে। সঙ্কট সৃষ্টি হবে মাছেও। এমনিতে নেই ধান আর সেই সাথে যদি মাছও না থাকে তাহলে হাওর তীরের মানুষের জীবন জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন