মহসীন আলম শুভ্র
আমার মৃত্যুর ঠিক দু’বছর আগে
আমাদের ভালোবাসা তুমি হত্যা করেছিলে সে বালিশ চেপে
যে বালিশে আমাদের প্রথম ও শেষ রাত মাথা রেখেছিল।
সেই রাতে আমাদের ভালোবাসা মাঝরাত জেগেছিল
হেলে পড়া আকাশে হলুদমাখা চাঁদ
জানালার পাশে খোলা বারান্দায়
আমাদের ভালোবাসা জেগেছিল দীর্ঘসময় নির্ঘুম চোখে।
উঠানে ছায়া ফেলে জোৎস্না-বিধ্বস্ত একটি পেঁচা
উড়ে যাচ্ছে খুব দ্রæত
রাতজাগা ঝিঁঝিঁ হাই তুলছে ঘন ঝোপের ভেতরÑ
এমন সময় আমাদের ভালোবাসা খুন হলো।
নৈঃশব্দে তার ঢলে পড়ার শব্দ আমি নির্বাক দেখেছিলাম
তুমি শেষ বলেছিলে, দারুণ উপভোগ্য, তাই না!
মশাল জ্বালিয়ে
এনামুল হক টগর
পৃথিবীর বৃক্ষ মুকুলগুলো অযতেœ ঝরে পড়ে
আর পাপী দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়
একসময় কবর দেশের পোকাগুলো তাকে খায়
আমরা ক্ষণিক জীবন ও সংসার নিয়ে বেঁচে থাকি
যন্ত্রণাদগ্ধ মন হাঁটতে থাকে সিদ্ধ জ্ঞানের আশায়
তোমার পথে হাঁটতে হাঁটতে কতো কাঁটার যন্ত্রণা
কতো বিচ্ছেদের জ্বালা দুর্বিষহ রক্তাক্ত মাটি
তারপরও তোমার প্রতি ব্যাকুল স্মরণ মিলনের আকাক্সক্ষায়
আমি এক অমৃত ভালোবাসা ও স্বর্গরাজ্যের দিকে হেঁটে যাই।
হুরবিহীন মশাল জ্বালিয়ে ঝর্ণার স্রোতে আমি ভাসতে থাকি
প্রাণের মহান সুজন প্রেমিক শুধু তোমাকে খুঁজি
চির ভাস্বর পাক পাঞ্জাতন নূরের আত্মদর্শনে।
প্রার্থনা
মো. মোজাহিদুল ইসলাম
একুশ শতকের এই প্রথম প্রহরে
চিটচিটে ঘামে ফুটন্ত স্বপ্নগুলোর শরীর ভিজে
জেগে ওঠে দুঃস্বপ্নের প্রেতাত্মা
চোখের জলে রচিত হয় অথৈ নীলনদ।
অবারিত সুখের রাজ্যে হানা দেয়
পাষÐ দৈত্য-দানবের বিষাক্ত ফসিল
কালের তরে দুঃখের সাগরে ভাসে
স্বপ্নময় আলোকিত রঙিন ভুবন।
এ কেমন ঝড়, কেমন অবিচার
ধ্বংসলীলায় মাতে নিষ্ঠুর সময়
কেতন উড়ায়ে চলে মিথ্যার বংশধর
শির তুলে হুঙ্কার ছাড়ে মানুষের জমিনে।
অন্ধকার ভেদ করে সূর্যের আলো আশায়
পথ চেয়ে অপেক্ষায় থাকি এ ক্ষণে
একান্ত মনে ধ্বনি তুলি বাড়ায়ে দু’হাত প্রার্থনায়
স্বর্গ সুষমায় ভরে উঠুক অসময়ে এ আলয়।
শিক্ষক আমি
তানজিলা রহমান
শিক্ষক আমি
স্ত^ব্ধ তাকিয়ে দেখি
ছাত্রের ঠোঁটে ধোঁয়ারকুÐলী
ছাত্রীর অশালীন জামার বর্ধিত অংশের ঝাড়–
দ্বগ্ধ অপমানেও নিশ্চুপ বিবেকের বেঁচে থাকার লড়াই।
সেলফির ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা, ভাসমান সঙ্গী হওয়ার
তীক্ষè তীব্রতায় ভগ্ন নৈতিকতার অসহনীয় ব্যথা,
ডিজিটাল নকলে শতভাগ অ + প্রাপ্তশিক্ষার্থীদের
চোখে দ্বিধা কবে স্বাধীনতা দিবস? গনগনে সূর্যের
দিকেই কারাসের লোলুপ দৃষ্টি, সবাই দ্রæত ধাবমান
গন্তব্যÑ কৃষ্ণগহŸর।
সুফিকোষ কাব্য-১
সৈয়দ মো. মোতাহার হোসেন
সুফি মানে অশুদ্ধকে শুদ্ধ করার প্রচেষ্টা
শাশ্বত সত্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া
যেন এক চিরন্তন সূর্য শিখা।
সুফি মানে স্বরূপ; নর;
নিজেকে খোঁজে পাওয়া।
বিচ্ছিন্ন সত্তার ছিন্নত্ব কাটিয়ে...
অবিচ্ছিন্ন ধারার সঙ্গে এক হওয়া।
ভেদ-ঘুচিয়ে অভেদ
দ্বৈত থেকে অদ্বৈতে
বহুত্ব থেকে একত্বে।
দৃষ্টির সীমা ডিঙ্গিয়ে দ্রষ্টায়
ক্ষণকাল থেকে অখÐকালে;
‘অক্ষর-শব্দ’ ভেদ করে
অক্ষরাতীত রাজ্যে অনুপ্রবেশ।
ভাগ্যের ফুল
সৈয়দ রনো
ভেড়ার দুগ্ধ আর চাউলের স্নানে ভোজন
কাকের দেহসৌষ্ঠবে গর্বিত স্বদেশ
ক্ষমতার ধারালো তলোয়ারে দ্বিখÐিত মস্তক
তন্দ্রাচ্ছন্ন জাতীর কপালে তকমা লাগায়
কিছু স্বার্থবাদী মুখস্ত মানুষ
তাইতো ভাগ্যে জোটে না মোটেও পান্তা ইলিশ
পোষমানা কাঙ্খায় জাগ্রত রাত
কামনার বিলাপে ঝরে ঝড়বরিষান
এক পায়ে দাঁড়িয়ে কাটে পুলকিত দিন
কষ্টের কাঁখে বাজে ত্রিকালের ঢোল
বকাদেয় বকুনি ভাবে শুধু মন
ও সব মিথ্যে ডাহা দখলের রোগ
কুকুর খেপেছে হায় কামড়ে দিলে
এখন আর দেয় না ভ্যাকসিন নাভিটার মূলে
সজনে ডাটায় আর রাধে না তো ডাল
তা হলে কি সব ছিলো কৌশলে ভুল
ফুটেও ফোটে না আর ভাগ্যের ফুল
মেঘের পোয়াতি শরীর খুলে রাখে চুল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন