বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করছে

গবেষণা রিপোর্টের ফলাফল

| প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ও শিক্ষাগত অবস্থানের কারণে অবিবাহিত কিশোর-কিশোরীরা তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিঃসঙ্কোচে কারো কাছে বলতে পারে না। বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে অধিকাংশ মা-বাবা তাদের সন্তানদের সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করেন না। এমনকি স্কুলের শিক্ষকরা পাঠ্যপুস্তকের যৌন ও প্রজনন বিষয়ক পাঠ্যগুলো ক্লাসে আলোচনা না করে এড়িয়ে যান। আর তাই বাংলাদেশের অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও সঠিক ধারণা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগে বাল্যবিবাহের হার ৫৯ শতাংশ (বিডিএইচএস-২০১৪)। এ কারণে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক কিশোর-কিশোরী বিশেষ করে কিশোরীরা বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করার মধ্যদিয়ে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁঁকিতে পড়ছে।
গতকাল পপুলেশন কাউন্সিলের এডোলসেন্ট ফ্রেন্ডলি হেলথ্ কর্নার (এএফএইচসিএস) ইন সিলেকটেড গভর্নমেন্ট হেলথ ফ্যাসিলিটিজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণা রিপোর্টের ফলাফলে এসব বিষয় উঠে এসেছে। রাজধানীর স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশের পাঁচটি জেলা-  মৌলোভীবাজার, ঠাকুরগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালি এবং কক্সবাজারে অবস্থিত মাতৃ ও শিশু সেবাকেন্দ্র (জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে) এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র (ইউনিয়ন পর্যায়ে) ১০টি কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা প্রদানের গুনগত মান মূল্যায়ন করা হয় এই গবেষণায়। এই কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরকে সহায়তা করেছে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী- ইউএনএফপিএ। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন সেবাকেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কর্নার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে কিশোর-কিশোরীরা স্বচ্ছন্দে এবং নিঃসঙ্কোচে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সেবাগুলো গ্রহণ করতে পারবে। দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন ১২৭টি সেবাকেন্দ্রে কৈশোরবান্ধব কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। এই কার্যক্রম স¤প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. কাজী মোস্তফা সরোয়ার। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর এমএনসিএএইচ ডা. জাহাঙ্গীর আলম সরকার এবং পপুলেশন হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন, ইউএসএইড বাংলাদেশের উপ-পরিচালক মিরান্ডা ব্যাকম্যান। সভাপতিত্ব করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (এমসিএইচ) এবং লাইন ডিরেক্টর (এমসিআরএএইচ) ডা. মোহাম্মদ শরীফ।
গবেষণায় বলা হয়Ñ অবিবাহিত কিশোরীদের জন্য  কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্র একটি সফল মডেল হিসেবে কাজ করেছে। বিবাহিত কিশোরীদের পাশাপাশি অবিবাহিত কিশোরীরাও এই কেন্দ্রে সাধারণ রোগের চিকিৎসা থেকে শুরু করে যৌন ও প্রজনন বিষয়ক সেবা নিতে আসে।
গবেষণায় দেখা যায়, কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্র একই সঙ্গে মা ও শিশু কল্যাণ এবং পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে অবস্থিত তাই বেশির ভাগ স্থানীয় মানুষ তাদের অবিবাহিত কিশোরীদের এ কেন্দ্রেসেবা নিতে পাঠাতে সঙ্কোচ বোধ করেন। কেননা এ কেন্দ্রগুলোকে ‘পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক’ বলে মনে করা হয় এবং এর সাথে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণাও থাকে। এক কিশোরীর মতে, আমি শুনেছি  যে কোনো কিশোরী যদি কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সেবা নিতে আসে তাহলে আশেপাশের  লোকজন মনে করে তার কোনো গর্ভজনিত কিংবা এ বিষয়ক কোনো সমস্যা হয়েছে। কোনো স্বাস্থ্যকর্মী যদি বাসায় আসে তখনো খারাপ ধারণা করা হয়। মানুষ ভাবে, মেয়ের বাজে কোনো অভ্যাস আছে। এ ছাড়া সেবাকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ কম থাকায় স্থানীয় মানুষ সেবাকেন্দ্রগুলোতে আসতে অনীহা প্রকাশ করে। এ ছাড়া অবিবাহিত কিশোরীরা এ সকল সেবাকেন্দ্রে গোপনীয়তা উন্নত করার বিষয়ে মতামত জানায়। অনেক কিশোরী তাদের জন্য আলাদা অপেক্ষার স্থান থাকার সুপারিশ করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন