শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ক্যান্সারের কাছে হেরে গেলেন লড়াকু ক্রো

প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৫৩ এএম, ৪ মার্চ, ২০১৬

ইমরান মাহমুদ : অকল্যান্ড শহরটি গতকাল কি একটু বেশিই শান্ত ছিলো? সারি সারি ওক গাছগুলোতে পাখিরা কিচির মিচির কি বন্ধ রেখেছিলো? আস্তাবলের ঘোড়াগুলো কি মাহুতের আশায় বসে না থেকে নিজেই বেড়িয়ে পড়েছিলো চারণভূমিতে? এর কোনটিই না হলেও প্রায় ১৫ লাখ মানুষের আবাসস্থলটি আজ বড্ড শূন্য, বড্ড বিষাদে, একটি মানুষের প্রস্থানে- মার্টিন ক্রো। গতকাল মরণব্যাধি ক্যান্সারের কাছে হেরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন নিউজিল্যান্ডের এই ক্রিকেট কিংবদন্তি। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইটা তাঁর চলছিল অনেক দিন ধরেই। একটা সময় চিকিৎসায় বেশ ভালো ফলই পেয়েছিলেন। ২০১২ সালে চিকিৎসকেরা বলেছিলেন যে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু মরণব্যাধি তাঁর পিছু ছাড়েনি। ২০১৪ সালের শেষ দিকে লিম্ফোমা আবার ফিরে আসে তাঁর শরীরে। দ্বিতীয় দফায় এই ব্যাধি আর নিরাময়যোগ্য ছিল না। এবার ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে আর ‘নট আউট’ থাকতে পারলেন না নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক। ক্রিকেট দুনিয়াকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে বিদায় নিলেন পরপারে। অকল্যান্ডে নিজ বাড়িতেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর সময় পরিবারের সব সদস্যের সান্নিধ্যেই ছিলেন তিনি।
আশি ও নব্বইয়ের দশকে তাঁকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবেই মনে করা হতো। নিজের অনন্য ব্যাটিংশৈলী দিয়েই তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন নিজের এই পরিচয়। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৭৭টি টেস্ট ও ১৪৩টি ওয়ানডে খেলা ক্রো’র ক্রিকেটকে দেয়ার ছিল আরও অনেক কিছুই। কিন্তু মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই চলে গেলেন এই কিউই কিংবদন্তি। সেই বিষাদে গতকাল এক টুকরো অকল্যান্ড হয়ে গেল যেন মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটও। এশিয়া কাপের ভারত-আরব আমিরাত ম্যাচের আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হলো এই মাঠের লড়াকু সৈনিককে। উপলক্ষ্যটি আরো আবেগী হয়ে ধরা দিলো এই ম্যাচে ম্যাচ রেফারীর দায়িত্ব পালন করতে আসা মার্টিনোর বড় ভাই জেফ ক্রের কাছে। টি-২০’র জনককে শ্রদ্ধা জানাতেই কি এবারের এশিয়া কাপ ক্ষুদ্র ফরম্যাটে? কাকতালীয়ও হতে পারে। বিধাতা অনেক উপলক্ষ্যই তো রাখেন সৃষ্টিকে বিস্মিত করতে!
টেস্ট ক্রিকেটে ৪৫.৩৬ গড়ে তাঁর রান ৫ হাজার ৪৪৪। এর মধ্যে শতক আছে ১৭টি, অর্ধশতক ১৮টি। ১৯৯১ সালে ওয়েলিংটনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৯৯ রানই তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ১৪৩টি ওয়ানডে খেলে তাঁর রান ৪ হাজার ৭০৪। গড় ৩৮.৫৫। ৪টি শতক আর ৩৪টি অর্ধশতক সমৃদ্ধ তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ঘটনা ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালেও। নয় ম্যাচে ৪৫৬ রান করে সে বিশ্বকাপে তিনি হয়েছিলেন সেরা খেলোয়াড়। অধিনাক হিসেবে এমন নজির নেই আর কারো। তার আগে ১৯৮৫ সালে উইজডেনের ক্রিকেটার্স অব দ্য ইয়ার তালিকায় স্থান পান মার্টিন ক্রো।
হাঁটুর চোটে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৬ সালে অবসরে যান নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। এরপর থেকেই জড়িয়ে ছিলেন ক্রিকেট বিষয়ক লেখালেখি ও টেলিভিশন ধারাভাষ্যে। হাঁটুর চোটে পড়ে ১৯৯৬ সালে অবসরে যাওয়ার পর টেলিভিশনের ধারাভাষ্যকার হিসেবে মার্টিন ক্রোকে পেয়েছে  ক্রিকেট। সেই সঙ্গে করেছেন লেখালেখি। ওই সময় তিনি ওভার কমিয়ে এনে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, জমজমাট এক ক্রিকেট সংস্করণের পরিকল্পনা করেন, যার নাম দেন ক্রিকেট ম্যাক্স। সেই পথ ধরেই পরবর্তী সময়ে ক্রিকেট পায় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
অবসরের পর দীর্ঘদিন নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট সংগ্রহ, সর্বাধিক টেস্ট রান, সবচেয়ে বেশি অর্ধশতক ও শতরানের রেকর্ড তাঁর অধিকারেই ছিল। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডটা এখনো তাঁরই। এত্তাসব অর্জনের ঝুলিটা অপূর্ণ থাকতো একটি আক্ষেপে। সেটা ক্রোর নয়, আইসিসিরই হতো যদি সময় আর সুযোগমত ‘হল অব ফেমে’ তার নাম না খেলাতো। নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ, ঘরের ছেলেদের প্রতিপক্ষ তাসমান প্রতিবেশি অস্ট্রেলিয়া- এমন সুযোগ হাতছাড়া করেনি আইসিসিও। ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ তারিখ গ্রুপ পর্বের ঐ ম্যাচের মধ্যবিরতিতে অস্থায়ী মঞ্চে নিয়ে আসা হয় ক্রোকে। অসুস্থ শরীর নিয়েও ক্রিকেটের এই ডাক উপেক্ষা করতে পারেন নি তিনিও। এলেন, আবেগঘন এক মুহূর্তে তার মাথায় উঠলো মর্যাদার ক্যাপ। মার্চে মেলবোর্নে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড লড়াইয়ের আগে ক্রিকইনফোয় এক কলামে ক্রো লিখেছিলেন, ‘অনিশ্চিত এই জীবন নিয়ে আমি আগামীতে আর হয়তো খুব বেশি ম্যাচ দেখার এবং উপভোগ করার মতো বিলাসিতা দেখাতে পারব না। তাই এটাই হয়তো শেষ হতে যাচ্ছে। এটাই শেষ, হয়তো এবং আমি এটা নিয়েই বাকিটা জীবন আনন্দে বাঁচতে পারব।’
ক্রো হয়তো পেরেছেন, কিন্তু ক্রিকেট কি পারবে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Ezaz Akhtar Toufiq ৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:৩০ পিএম says : 0
We will remember you
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন