শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আবারো ফাইনাল ট্র্যাজেডী

প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:৩৮ এএম, ৭ মার্চ, ২০১৬

বাংলাদেশ : ১২০/৫ (১৫.০ ওভারে)
ভারত : ১২২/২ (১৩.৫ ওভারে)
ফল : ভারত ৮ উইকেটে জয়ী।
শামীম চৌধুরী : চার বছর আগে স্বপ্নের ফাইনালে ট্রফির প্রায় কাছাকাছি পর্যন্ত পৌছে গিয়ে তা ফসকে যাওয়ায় মুশফিক। পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরে সাকিবদের কান্নায় ভারী হয়েছিল শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম। এশিয়া কাপের মতো বড় আসরে ট্রফির লড়াইকে সামনে রেখে তাই  আবেগটা সংযত করে নিজেদের সেরাটা খেলার বার্তা টীমমেটদের পৌছে দিয়েছিলেন মাশরাফি। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হওয়া স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকের সমর্থনটাও ছিল মাশরাফিদের সঙ্গে। তবে এশিয়া কাপের ইতোপূর্বের ১৩ টি আসরের ৯ টি ফাইনালে খেলার অতীত যাদের, আছে ৫ বার ট্রফিতে হাত রাখার গর্বÑতাদের কাছে ফাইনাল নুতন আর কি? বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আবেগ ভার্সেস পেশাদার মেজাজের ক্রিকেটের লড়াইয়ে জয়টা হয়েছে টি-২০তে পেশাদারী ক্রিকেটের। টি-২০ র‌্যাংকিংয়ে ওয়ান ভার্সেস টেন এর লড়াইয়েও জিতেছে ফেভারিটরা। আল আমিনকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ধোনীর  ছক্কায় ৭ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটে জিতে এশিয়া কাপে ৬ষ্ঠবারের মতো ট্রফি জয়ের উৎসব করেছে ভারত। এশিয়া কাপে হয়নি বাংলাদেশের ট্রফির স্বপ্নপূরন।
ফাল্গুনের সন্ধায়  মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ঝড়টাই যেনো সব এলোমেলো করে দিয়েছে। ২ ঘন্টা বিলম্বে শুরু হওয়া ম্যাচ ৫ ওভারে নেমে আসার পর  টসে হারটাও মাশরাফিদের গেম প্লানকে দিয়েছে ধাক্কা। ওভার কমে গেলে উইকেট নিয়ে দুশ্চিন্তাও যায় কমে। উইকেটে থিতু হতে ভাবনার সময়টাও থাকে না। এখানেই সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটের মেজাজ রপ্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফিল্ডিং রেস্টিকশনের প্রথম ৫ ওভার, এমনকি ১০তম ওভার পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু ব্যবধানটা নির্নিত হয়েছে বাংলাদেশের মাত্রারিক্ত সিঙ্গল, ডাবলসে রান তোলার প্রবনতায়। পুরো ইনিংসে বাংলাদেশ যেখানে চার-ছক্কায় তুলেছে ৬০ রান, সেখানে ভারতের চার ছক্কায় এসেছে ৭৮। বাংলাদেশের ৪০ টি সিঙ্গলের বিপরীতে ভারতের সিঙ্গল ৩৩Ñএখানেই হয়েছে দু’দলের ব্যবধান। উইনিং কম্বিনেশনটা ভেঙ্গেও বড্ড ভুল করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। পেস বোলার আবু হায়দার রনি যেখানে ইতোপূর্বের ৪ ম্যাচে দর্শক, সেখানে তাকে ফাইনালে নামিয়ে এশিয়া কাপে অভিষেক ঘটিয়ে লাভ হয়নি। কোহলীর আক্রমনে এক ওভারে ১৪ রান খরচায় শেষ তার বোলিং! প্রথম চার ম্যাচে দর্শকের কাতারে রেখে ফাইনালে নাসিরকে নামিয়েও একই ফল পেতে হয়েছে। তার তৃতীয় ওভারে তিন বাউন্ডারিতে ১৫ রানেই জয়ের কাছাকাছি পৌছে গেছে ধোনীর দল।  টি-২০তে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার সাকিব এদিনও খলনায়ক। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে রোহিতের ক্যাচ পয়েন্টে ড্রপ করে অপরাধী সাকিব। গতকাল প্রয়োজনীয় সময়ে দলকে বোলিং সার্ভিসটা সে অর্থে দিতে পারেননি এই বাঁ হাতি স্পিনার। ১ ওভার করে ২টি স্পেল, প্রথম ওভারে খরচা ১৫, দ্বিতীয় ওভারে ১১।
১৫ ওভারে ১২০/৫। ওভারপ্রতি রান ৮ করে স্কোরকে চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। তবে পিচের রিডিংটা এদিন সেভাবে করতে পারেনি বাংলাদেশ বোলাররা। প্রচুর হাফভলি এবং শর্ট বলের ছড়াছড়ি দিয়েছে এদিন বোলাররা। আল আমিন নিজের তৃতীয় ডেলিভারীতে রোহিতকে স্লিপে ক্যাচের ফাঁদে ফেলতে পেরেছেন ঠিকই, কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ধাওয়ান-কোহলীর ৬৭ বলে ৯৪ রানের পার্টনারশিপ বাংলাদেশের সব আশা ভরসা করেছে শেষ। তাসকিনের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ধাওয়ান যখন ফিরেছেন (৪৪ বলে ৯ চার ১ ছক্কা) তখন ১৪ বলে ভারতের প্রয়োজন ছিল ২২ রান। শেষ ১২ বলে সেখানে ভারতের টার্গেট ১৯ রান। আল আমিনের শেষ স্পেলের ৫টি বলেইওই টার্গেট পাড়ি দিয়েছে ভারত। কোহলীর বিরাট হওয়ার স্বাক্ষ্য বহন করা ইনিংসটি নট আউট ৪১ (২৮ বলে ৫ চার)। ধোনী সেখানে ছিলেন অবিচ্ছিন্ন ৬ বলে ২০ রানের ঝড়ো ইনিংসে। ফাইনালে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে টি-২০ বিনোদন যা ছিল, তা শেষ ২০ বলেই। বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ দিকে এসেও দেখেছে দর্শক ঝড়, যে সেশনে শেষ ৩০ বলে উঠেছে ৫২ রান। এমন একটি ম্যাচে সাব্বির-রুম্মানের ২০ বলে ৪৫ রানের অবিচ্ছিন্ন ৬ ষ্ঠ জুটি ঠিকই দিয়েছে বিনোদন।
ফিল্ড রেষ্টিকশনের প্রথম ৫ ওভারে ওভারপ্রতি ৬’র বেশি রান তুলতে না পারায় আছে আক্ষেপ। অভিজ্ঞ অফ স্পিনার অশ্বিনকে খেলতে তামীমের অস্বস্তিবোধ, দারুন শুরুর পর বুমরাকে ক্রস খেলতে যেয়ে এলবিডাব্লু, নেহরাকে মিড অফে দিয়ে সৌম্য’র ক্যাচ (৯ বলে ১৪) দিয়ে ফেরা, অশ্বিনের থার্ড স্পেলের প্রথম বলে ফাইন লেগে সাকিবের  ক্যাচ (১৬ বলে ২১)। কোনটাই ছিল না সুখকর।  বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে সবার আগে টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরির মাইলস্টোনের দিনটি সেভাবে উদযাপন করা হয়নি মুশফিকুরের। ১২ তম ওভারে জাদেজাকে ডাবলস নিতে যেয়ে ঝাপ দিয়েও রক্ষা হয়নি মুশফিকুরের। কাঁটা পড়েছেন রান আউটে (৪)। বিগ শট নিবেন বলে ব্যাটিং অর্ডারে মাহামুল্লাহ’র জায়গায় নেমে শুন্যতে গেছেন  ফিরে  মাশরাফি!
প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত টি-২০ ফরমেটের এশিয়া কাপের শুরু থেকেই ছন্দে আছেন সাব্বির-মাহামুদুল্লাহ। গতকালও চেনা ছন্দে এই জুটিতে দেখেছে দর্শক। এদিন সাব্বিরের চেয়ে বেশি ইতিবাচক ব্যাটিং করেছেন মাহামুদুল্লাহ। নেহরাকে স্ট্রেইট বাউন্ডারি দিয়ে শুরু তার বিগ শট প্রদর্শনী। ১৪তম ওভারে পান্ডেকে একটু বেশিই বাগে পেয়েছিলেন মাহামুদুল্লাহ। যে ওভারের প্রথম বলে এক্সট্রা কভার দিয়ে বাউন্ডারি, দ্বিতীয় বলে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কাটি আছড়ে পড়েছে গ্যালারির ফেন্সিংয়ে, চতুর্থ বলে সেখানে ট্রেড মার্ক পুল শটে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা! এক ওভারে ২১ রান। ২৯ বলে ২ বাউন্ডারিতে ৩৩ রানের হার না মানা ইনিংসে এশিয়া কাপের এই আসরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রাহক সাব্বির (১৭৬ রান, গড় ৪৪.০০)। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৭ রানে আউট হবার পর মাহামুদুল্লাহকে আর আউট করতে পারেনি কেউ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৩৬,শ্রীলংকার বিপক্ষে ২৩,পাকিস্তানের বিপক্ষে ২২, ফাইনালে সেখানে ভারতের বিপক্ষে ১৩ বলে ২ চার ২ ছক্কায় ৩৩Ñসবগুলোই নট আউট। এশিয়া কাপে ১২১ রানের পুরোটাই তার এভারেজ! স্ট্রাইক রেট ১৬৫.৭৫Ñআদর্শ টি-২০ ব্যাটসম্যানের প্রমানই যে রেখেছেন এই ব্যাটিংয়ে। ট্রফির স্বপ্নপূরন না হলেও টি-২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এশিয়া কাপে চেনাতে পেরেছেন এই দুই ব্যাটসম্যানÑ এটাও কিন্তু কম নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Abir ৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:২১ পিএম says : 0
Go ahead Bangladesh Team
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন