প্র ফে স র ড. এ ম, শ ম শে র আ লী : আমি প্রথমেই একটা সমীকরণের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। এই সমীকরণটি কোন জটিল গাণিতিক সমীকরণ নয়, একেবারেই সোজা। যে দেশে এই সমীকরণটি একশত ভাগ সত্য সে দেশ একশত ভাগ উন্নত। আর যে দেশে এই সমীকরণটি মোটেই খাটে না, সে দেশটি উন্নয়নের সর্বনিম্ন ধাপে। সমীকরণটি হচ্ছে :
মানুষের সংখ্যা = জনসংখ্যা
সমীকরণটি হেয়ালির মত লাগতে পারে কিন্তু এর চেয়ে উন্নয়নের পরিপূর্ণ সূচক আর হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ আমাদের দেশে জনসংখ্যা অনেক বেশী কিন্তু মানুষের সংখ্যা কম। এখানে মানুষ বলতে আমরা যা বোঝাচ্ছি তা হচ্ছে ঐ মানুষ যার বিদ্যা আছে, বুদ্ধি আছে, কোন না কোন পেশায় পারদর্শিতা আছে এবং মানবিক গুণাবলীও আছে। ভাবতে অবাক লাগে যে, ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনে মানুষকে বর্ণনা করা হয়েছে আল্লাহর খলিফা হিসেবে। সেই খলিফা কাজ করে খেতে পারবে না, দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করবে, অজ্ঞতার সমুদ্রে হাবুডুবু খাবে আর নিজেকে আশাফুল মাখলুকাত হিসেবে পরিচয় দিবে তা তো হতে পারে না। মানবিক গুণাবলীর কথা বললে একটা সমস্যা এসে পড়ে। পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকেই নানান ধরনের পেশায় দক্ষ হলেও তাদের অনেকেরই মানবিক গুণাবলীর অভাব রয়েছে। তাদের অনেকেরই জীবন নৈতিকতা বিবর্জিত। আগেই বলেছি সমীকরণটি হচ্ছে ১০০ ভাগ উন্নয়নের সূচক। এটা অর্জন করা খুবই দূরূহ কিন্তু এটাই থাকবে উন্নয়নের টার্গেট। আজকে আমরা ঐঁসধহ জবংড়ঁৎপব উবাবষড়ঢ়সবহঃ বলতে যা বুঝি এই সমীকরণে পৌঁছান তারই লক্ষ্য।
মানব সম্পদ উন্নয়নের কৌশল
এ প্রসঙ্গে একটা গল্প বলতে চাই। বছর পনের আগে কুয়েতে ঞযরৎফ ডড়ৎষফ অপধফবসু ড়ভ ঝপরবহপবং (ঞডঅঝ) এর একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঞডঅঝ-এর প্রেসিডেন্ট ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুস সালাম এসেছিলেন সেই সম্মেলনে। ঞডঅঝ-এর একজন ফেলো হিসেবে আমিও সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলাম। কুয়েত বিমান বন্দরে নামামাত্রই দেখি হলুদ পোশাক পরিহিত অনেক বাংলাদেশী কর্মী। দেখে ভালোই লাগল। আমাদের দেশের ছেলেরা এখানে কষ্ট ক’রে কাজ করছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছে, এ তো আনন্দেরই কথা। কিন্তু পরে যখন দেখলাম কুয়েত শহরে যতলোক রাস্তা ঝাঁড়ু দেয় তার প্রায় শতভাগই বাংলাদেশী তখনই মনটা খারাপ হয়ে গেল। কুয়েতে সম্মেলন চলাকালীন সময়ে আমাদের বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত তার বাড়ীতে আমন্ত্রণ করলেন ভোজনের জন্য। আহারের ফাঁকে আমি রাষ্ট্রদূতকে বললাম “কিছু মনে করবেন না রাষ্ট্রদূত সাহেব, আমি মুসলমান বিধায় শ্রমজীবী মানুষকে কোন অংশেই খাটো করে দেখতে পারি না। কিন্তু এ কেমন কথা যে, বাংলাদেশীরা শুধু কুয়েতের রাস্তা ঝাঁড়ু দেবে; আমাদের লোকেরা অন্যান্য পেশাগত কাজে কি একেবারেই অংশগ্রহণ করতে পারে না?” রাষ্ট্রদূত উত্তর দিলেন, “ঠিকই বলেছেন ড. আলী। কী করব বলুন! কয়েকদিন আগে চারজন ইঞ্জিনিয়ার পাঠানোর জন্য দেশে লিখেছিলাম কিন্তু কোন্ চারজনকে কুয়েতে পাঠান হবে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই ডেড লাইন পার হয়ে গেছে। জবসরহফবৎ দিয়েও কোন লাভ হয়নি। তবে আপনার যেমন লজ্জা লাগছে, আমারও তেমনি লাগে কিন্তু তেমন একটা কিছু করতে পারি না।” আরও অবাক কান্ড এইসব শ্রমিকদের যে মজুরি দেখিয়ে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়, বিদেশে যেয়ে আসলে তারা পায় তার চেয়ে অনেক কম। এও এক ধরনের প্রতারণা। এখন কল্পনা করা যাক এই কুয়েতেই যদি বাংলাদেশী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, একাউনট্যান্ট. ইংরেজী ভাষার শিক্ষক ইত্যাদি থাকত এবং পুরোদমে কাজ করত তাহলে বিদেশের মাটিতে আমাদের কতখানি সম্মান বাড়ত। যারা যাওয়া আসার পথে দুবাই নেমেছেন এবং এক-আধ দিন থেকেছেন তারাই দেখেছেন যে, ওসসরমৎধঃরড়হ ও ঈঁংঃড়সং পার হওয়ার পর যে গাড়ীটি আপনাকে হোটেলে নিয়ে যাবে তার ড্রাইভার একজন ভারতীয়। হোটেলে রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে যারা কাজ করছে তাদের মধ্যেও আছে ভারতীয়রা। যদি এক-আধ বেলা আপনাকে শহর ঘুরে-বেড়িয়ে দেখতে হয়, তাহলেও সেই ঞড়ঁৎরংস-এর দায়িত্বেও আছে ভারতীয়রা। আরও মজার কথা ভারতীয়দের ধর্মগ্রন্থের ভাষা আরবী না হলেও তারা আরবীতে বেশ ভালো কথা বলছে এবং ওখানকার জীবনযাত্রার সাথেও তারা বেশ খাপ খাইয়ে নিয়েছে। ভাষা শিক্ষা আধুনিক অর্থনৈতিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এটা এখনও আমরা ভালো করে বুঝে উঠতে পারিনি। ভাষাও যে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখতে পারে তা আমরা এখনও বুঝিনি। এ প্রসঙ্গে আমরা একটু পরেই আলোচনা করব। আপাতত আমরা মানবসম্পদের উন্নয়ন বলতে কী বুঝি তা নিয়ে আলোচনা করব। মানবসম্পদের উন্নয়ন বুঝাতে ঐ উন্নয়নই বোঝাবে যাতে মানুষের পেশাগত দক্ষতা বাড়ে এবং একই মানুষের মধ্যে নানা গুণের সমাহারও ঘটে। এই উন্নয়ন শুধু পুঁথিগত উন্নয়ন নয়, এ উন্নয়ন মাঠে-ঘাটে, ক্ষেত-খামারের উন্নয়ন, কল-কারখানার উন্নয়ন, হাসপাতালের সেবার উন্নয়ন, অফিস-আদালতে কার্যক্ষমতার উন্নয়ন, বিভিন্ন রকমের সেবার উন্নয়ন, ভাষার উন্নয়ন ইত্যাদি সবকিছুই বুঝায়। আর ঐ যে বললাম নানা গুণের সমাহার যে মানুষের মধ্যে আছে সে মানুষের চাহিদা অত্যন্ত বেশী। বিশেষ করে প্রাইভেট সেক্টরে। একই লোক টেলিফোন ধরছে, কম্পিউটারে চিঠি টাইপ করছে, হিসাব-নিকাশ করছে, গাড়ী চালাচ্ছে, ঋরষব গধরহঃধরহ করছে সে আসল অর্থে একের ভিতর বহু এবং সত্যিই তার বাজার দর অনেক। আমাদের দেশের এই একের ভিতরে বহুর উদাহরণ ছেলেদের মধ্যে যতটা না দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে তার চাইতে অনেক বেশী দেখা যায়। মেয়েদের মধ্যে গ্রামের মেয়েরা আবার বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে তাদের গুণের মূল্যায়ন আমরা ভালোভাবে কখনও করি না। এখানে একটি কার্টুন ছবি প্রদর্শিত হলঃ
ছবিটি স্বব্যাখ্যাত বিধায় এখানে কিছুই বলার নেই। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, কায়িক শ্রমের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যতদিন না বদলাবে ততদিন আমরা কলমপেষা লোক হয়ে থাকব। বর্তমান যুগের বহুমাত্রিক দায়িত্ব গ্রহণ করার ক্ষমতা আমাদের হবে না। এখন এই বহুমাত্রিক পেশাগত গুণ কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে অর্জন করতে হবে এ প্রশ্নের উত্তরে প্রাথমিকভাবে শুধু এটুকুই বলা চলে দেশের মাটি, মানুষ ও সম্পদকে সঠিকভাবে ম্যানেজ করতে হলে যেসব ক্ষেত্রে মানবসম্পদ দরকার সেখানেই এই সম্পদ গড়ে তুলতে হবে। এতক্ষণ যে কথাগুলো বললাম সেগুলো শুনে কেউ কেউ হয়ত মনে মনে ভাবছেন এর সাথে দূর শিক্ষণের সম্পর্কটা কোথায়? সম্পর্কটা অত্যন্ত প্রত্যক্ষ ও নিবিড়। যে কোন ক্ষেত্রে একজন যোগ্য মানুষ গড়ে তুলতে হলে একজন ঞৎধরহবৎ বা প্রশিক্ষক দরকার। আমাদের দেশের জন্যও অসংখ্য প্রশিক্ষক দরকার। দুঃখজনক হলেও একথা সত্যি যে আমাদের দেশে দক্ষ প্রশিক্ষকের সংখ্যা অত্যন্ত কম এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশী। এছাড়া আগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশী। এই অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে প্রচলিত পদ্ধতিতে ক্লাসরুমে এনে প্রশিক্ষণ দিতে যত প্রশিক্ষকের দরকার, যত চযুংরপধষ রহভৎধংঃৎঁপঃঁৎব বা অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা দরকার তা আমাদের নেই। আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, একজন দক্ষ শিক্ষককে জাতীয় পর্যায়ে অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে ছড়িয়ে দেয়া আর এখানেই দূর শিক্ষণের চ্যালেঞ্জ নিহীত। এই চ্যালেঞ্জ শুধু যে আমাদের দেশের জন্যই তা নয়, অনেক উন্নত দেশও দূর শিক্ষণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে অনেক আগেই। দূর শিক্ষণকে এখন বলা হয়ে থাকে শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি চধৎধফরমস ঝযরভঃ বা ডধঃবৎ ঝযবফ. আগামী দিনের বিশ্ববিদ্যালয়কে হয়তো অভিহিত করা হবে ঠরৎঃঁধষ টহরাবৎংরঃু হিসেবে। বর্তমানে এই ঈড়হপবঢ়ঃ চালু হয়ে গেছে। শিক্ষককে শেয়ার করার যে কথাটি বলা হলো সেটা একটা উদাহরণের মাধ্যমে ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়া যায়। ধরা যাক কেউ ওইঅ-তে ভর্তি হতে চেয়েছিল কিন্তু চান্স পায়নি। কিন্তু দূর শিক্ষণের মাধ্যমে ওইঅ-এর শিক্ষকগণকেই যে ছাত্র ভর্তি হতে পারল না তার সামনে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। ঐ শিক্ষকগণের লেকচারকে ঈউ-তে ৎবপড়ৎফ করে সেই ঈউ গুলো যদি ছাত্রদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় তাহলে মনে হবে শিক্ষক যেন ছাত্রের বাড়িতে এসে হাজির হয়েছেন। এভাবেই একজন শিক্ষককে বহু শিক্ষার্থী শেয়ার করতে পারে।
এখন মানবসম্পদ উন্নয়নের কৌশল হিসেবে দূর শিক্ষণের সঙ্গে যেসব ঃ বপযহরপধষ দিকগুলো জড়িত আছে সেগুলো সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে চাই। আমি যখন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে কাজ করি তখন যে টেকনোলজি ছিল তা এখনকার তুলনায় অনেক নিম্নমানের। শিক্ষার্থীকে কিছু ঢ়ৎরহঃবফ সধঃবৎরধষ এবং ধঁফরড় পধংংবঃঃব ডাকযোগে পাঠানো হতো। এছাড়া কিছু ারফবড় পধংংবঃঃব পাঠানো হতো ঠঐঝ ভড়ৎসধঃ-এ আর কিছু ঢ়ঁনষরপ নৎড়ধফপধংঃরহমও করা হত টেলিভিশনে। তখন ডডড ততটা প্রচলিত হয় নাই। আজকের টেকনোলজি একটু ভিন্নতর। এখন আমরা পুরো লেকচার মডিউলটা বিন ংরঃব-এ ঢ়ধংঃব করতে পারি এবং শিক্ষার্থী ঢ়ধংংড়িৎফ-এর মাধ্যমে তার নিজের কম্পিউটার থেকে বা ৎবমরড়হধষ পবহঃবৎ-এর কম্পিউটার থেকে ফড়হিষড়ধফ করতে পারেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কিছুটা নম্বরও থাকতে পারে। এরপর পড়হপবঢ়ঃঁধষ ঢ়ৎরড়ৎরঃু-র জন্য শিক্ষার্থীকে কিছু ঈউও পাঠানো হয়। ষবপঃঁৎব সড়ফঁষব এবং ঈউ শুনার পরেও শিক্ষার্থীর কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে যা তিনি সরাসরি সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে করতে পারেন ঊ-সধরষ-এর মাধ্যমে। এতকিছুর পরেও সপ্তাহে একদিন শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের মুখোমুখি করার সুযোগও দেওয়া হয়। যে পদ্ধতিতে আমরা এখন শিক্ষাদান করছি তা ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও অন্যান্য উন্নত দেশে যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে তার সঙ্গে হুবহু এক। আমরা কতটা ব্রড ব্যান্ড ব্যবহার করতে পারছি তার উপর নির্ভর করবে ডাউন লোড করার গতি। দেশে ওঈঞ ব্যবস্থা উন্নত থেকে উন্নততর হলে এই ঃবপযহড়ষড়মু যে যুগের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে তাতে কোনই সন্দেহ নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে দূর শিক্ষণের এই কৌশল অবলম্বন করে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন করা দরকার।
মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলো
যদিও নীতিগতভাবে পৃথিবীতে যেসব মানবিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত তৎপরতা বিদ্যমান তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের মানবসম্পদ গঠন প্রয়োজন, তবে বাস্তবে আমাদেরকে কিছুটা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেসব ক্ষেত্র নির্বাচন করতে হবে। এই ক্ষেত্রগুলো পৎবফরঃ নধংবফ (ডিগ্রী প্রদানমূলক) এবং হড়হ-পৎবফরঃ নধংবফ (ডিগ্রী প্রদান ছাড়াই প্রশিক্ষণমূলক) উভয় প্রকারের হতে পারে।
পৎবফরঃ নধংবফ শিক্ষার ক্ষেত্রসমূহ:
পৎবফরঃ নধংবফ ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে এখন যেসব বিষয়ে জনগণের মধ্যে গভীর আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো হলোঃ
১) গইঅ (গধংঃবৎ ড়ভ ইঁংরহবংং অফসরহংঃৎধঃরড়হ):
বর্তমানে গইঅ ডিগ্রী লাভের জন্য যে হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা কয়েক বছর আগেও তেমন ছিল না। এর প্রধান কারণ সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও সংস্থাসমূহে কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে সবাই জানতে চায় নিয়োগকৃত ব্যক্তি দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংস্থাটি ভালো করে চালাতে পারবে কি না? বিশেষ করে সংস্থায় নিয়োজিত কর্মীদের সাথে তার মানবিক সমীকরণ (যঁসধহ বয়ঁধঃরড়হ) ঠিক হবে কি না? স্বভাবতই সরকারি দপ্তরে নিয়োজিত কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যারা আগে গইঅ করার সুযোগ পান নাই, তারা এখন গইঅ করার সুযোগ পাচ্ছেন। উদ্দেশ্য এই যে, চাকরিতে থাকাকালে অবস্থার উন্নয়ন হতে পারে অথবা চাকরির মেয়াদ শেষে আবার পুনঃনিয়োগ পেতে পারেন। উদ্দেশ্যটা মহৎ এবং দেশের জন্য তা মঙ্গলকর। তবে এই ডিগ্রী প্রদান করতে হলে দূর শিক্ষণ পদ্ধতিতে শুধু কেতাবী জিনিস পড়ালে চলবে না; বাস্তব উদাহরণও দিতে হবে। একটু আগে যে মানবিক সমীকরণের কথা বললাম সেই মানবিক সমীকরণ সম্পর্কে যত ঃযবড়ৎু দেয়া হোক না কেন তাতে লাভ হবে না। বাস্তব অভিজ্ঞতার দিকগুলো তুলে ধরে সব অভিজ্ঞতা ঈউ-তে ধারণ করে গইঅ ছাত্রদের দেখালে তারা উপকৃত হবে। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ে গেল। গল্পটি এমন-একটি কন্সট্রাকশন ফার্মের একজন ইঞ্জিনিয়ার কয়েকদিন আগেই তার ইড়ংং-কে বলেছিলেন যে, স্যার সামনের শনিবারে কিন্তু আমাদের বিফফরহম ধহহরাবৎংধৎু ঐ দিন আমি কাজ করতে পারব না, তাই ছুটি চাই। ইড়ংং তাকে পড়হমৎধঃঁষধঃরড়হ জানিয়ে ছুটি দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে একটি বড় কাজের অফার আসল যা ঐ ফার্মের জন্য ঢ়ৎবংঃরমরড়ঁং ও অধিক লাভজনক। ফলে ইড়ংং তাকে বললেন, না! কোনভাবেই তুমি ঐ দিন কাজ না করে পারবে না। কিন্তু ভদ্রলোক বললেন, আমি পরিবারের সকলকে বলে রেখেছি যে আমি ঐ দিন তাদের নিয়ে চাইনিজ খাব, চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যাব। কিন্তু ইড়ংং বললেন, এটা আমাদের জন্য একটা বড় অফার যা অধিক লাভজনক, তাই কাজ করতেই হবে। ভদ্রলোক একথা বাসায় এসে স্ত্রীকে বললেন। স্ত্রী-স্বামীর কথা শুনে বললেন, কী আর করা! তুমি কাল অফিস করবে। নিরুপায় হয়ে ভদ্রলোক শনিবারে মনের কষ্ট নিয়ে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একনাগাড়ে কাজ করলেন। বাসায় ফিরে এসে দেখলেন পরিবারের সবাই মহা আনন্দে। বিষয়টি আন্দাজ করতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার! সকলেই এমন আনন্দে কেন? তার স্ত্রী বললেন আজ খুব মজা হয়েছে কারণ তোমার অফিস থেকে দুপুরে গাড়ী এসেছিল, আমাদের চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে খাইয়েছে, তারপর গাড়ীতে আমরা সবাই চিড়িয়াখানা ও বিভিন্ন জায়গায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে বেড়িয়েছি, তাই সকলেই খুশী। এসব শুনে অফিসারের মনের সব খেদ দূর হয়ে গেল। তিনি মনে মনে ঠিক করল, এমন ইড়ংং কোন দিন ছাড়া যাবে না। গইঅ ডিগ্রিটা অর্জন করে এমন ধরনের ইড়ংং হলেই শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে যঁসধহ বয়ঁধঃরড়হ ঠিক রাখতে পারবেন, তা বলাই বাহুল্য।
২) ইসলামিক স্টাডিজ
ইসলামিক স্টাডিজে দূর শিক্ষণ পদ্ধতিতে পড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে এই কারণে যে, একটা গঅ ডিগ্রী থাকলে ব্যাংক ও অন্যান্য সংস্থায় প্রমোশন ত্বরান্বিত হয়। ইসলামিক স্টাডিজকে সহজ বিষয় ভেবে এটাতে ডিগ্রী অর্জনে অনেকেই সচেষ্ট হয়। এতে দোষের কিছু নেই; বরং এই ইসলামিক স্টাডিজের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যে ভুল ধারণাগুলো মানুষের মধ্যে গেঁথে আছে সেগুলো দূর করতে পারলে এবং প্রকৃতপক্ষে ইসলামকে অনুসরণ করতে পারলে আমরা সত্যিকার অর্থে একটি দারিদ্র্য, শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে পারতাম। ইসলাম সম্পর্কে সকলের মনে সঠিক ধারণা থাকলে আজকে আত্মঘাতী সন্ত্রাসও এপর্যায়ে আসতে পারত না। ইসলামিক স্টাডিজ যারা পড়ছেন তাদের দায়িত্ব একথাটি প্রতিষ্ঠিত করা যে, যে সমাজে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বিচার ব্যবস্থাগত বৈষম্য বিরাজমান সে সমাজকে কখনও একটি ইসলামিক সমাজ বলা যাবে না। এই অর্থে ইসলামের বায়ে কোন ‘বা’ নেই। অথচ কে বা কারা কখন কোথায় কীভাবে ইসলামকে একটি দক্ষিণপন্থী, পশ্চাৎপদ, অনগ্রসরমান ধর্ম হিসাবে ঢ়ৎড়লবপঃ বা অভিক্ষেপণ করল তা মোটেও বোধগম্য নয়। আমি বাম ও ডানের ভাষায় কথা বলতে চাই না। তবে যদি আদৌও ডান বাম শব্দ ব্যবহার করতে হয়, তাহলে একথা স্বীকার করতে হবে ইসলামের চেয়ে অধিক বামপন্থী কোন ধর্ম পৃথিবীতে থাকতে পারে না। যে ধর্ম বলে সারা রাত নফল নামাজ পড়েও কোন লাভ হবে না যদি তোমার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে, যে ধর্ম বলে ঘাম শুকানোর আগে শ্রমিকের পাওনা মিটিয়ে দাও, যে ধর্ম বলে তোমার সম্পদে অন্যের অধিকার আছে, যে ধর্ম বলে ধন যেন ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়, সেই ধর্মের চাইতে বেশী মানবতাবাদী ধর্ম আর কী হতে পারে? বামপন্থীরা যদি ধর্মে বিশ্বাসী হতেন তবে তারাই সবার আগে এদেশের গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে পারতেন তা বলাই বাহুল্য। ইসলামিক স্টাডিজে যারা ভর্তি হচ্ছেন তারা যদি সর্বক্ষেত্রে ইসলামের ঔঁংঃরপব ও ঋধরৎ ঢ়ষধু এই দুটি কথা মানুষকে বোঝাতে পারেন তবে সমাজে বিদ্যমান ইসলাম সম্পর্কে ধারণার একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু গইঅ-এর মত এখানেও কথা দিয়ে নয়, কাজ দিয়ে সবকিছু প্রমাণ করতে হবে। পবিত্র কোরআনেও বলা হয়েছে আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা গুরুতর অপরাধ এই যে, তোমরা যা বল তা কর না। যারা ইসলামিক স্টাডিজ অধ্যয়ন করবেন তাদের জীবনে যদি এই বলা আর করার মধ্যে ফাঁক না থাকে তাহলে তারা অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন এবং দেশ ও সমাজের জন্য এক বিরাট মঙ্গল বয়ে আনতে পারবেন।
৩) ঘঁৎংরহম বা সেবা
নার্সিং-এর ডিগ্রী থাকলে শুধু যে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক তাই নয়; দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানও উন্নয়ন করা যায়। তবে উন্নতমানের নার্স গড়ে তোলা সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। আমাদের দেশে বেশ কিছুদিন আগ পর্যন্ত মেয়েদেরকে নার্সিং শেখানোর ক্ষেত্রেও এক ধরনের ঞধনড়ড় ছিল, আজকে কিন্তু সেই ঞধনড়ড় অনেকটা ভেঙে গেছে। দেশে নার্স তৈরী হচ্ছে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় বেশী নয়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য নার্সদের ক্যারিয়ার দেশে এবং বিদেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আর একথা সত্যি যে, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পাওয়া নার্সদের বিদেশে চাকরি পেতে ভিসার পেছনে নার্সদের ছুটতে হয় না, বরং নার্সদের পিছনে ভিসা ছোটে। আমাদের দেশে যেসব নার্স ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করতে গিয়েছিলেন তারা সেখানে তাদের সততা ও কর্মনিষ্ঠা দেখিয়ে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তাদের মূলতঃ সমস্যা ছিল রোগীর সাথে, রোগীর আত্মীয়ের সাথে, ডাক্তারের সাথে এবং হাসপাতালের অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সাথে তারা ইংরেজীতে কথাবার্তায় তেমন একটা ভালো করতে না পারা। কিন্তু এ সমস্যাটি অলংঘনীয় সমস্যা নয়। তাদেরকে যদি ভঁহপঃরড়হধষ বহমষরংয-এ ংযড়ৎঃ বা ষড়হম পড়ঁৎংব দিয়ে ভালো করে গড়ে তুলতে পারি, তবে আমাদের নার্সের জন্য বিশ্বব্যাপী একটা চাহিদা থাকবে। দূর শিক্ষণে নার্সিং প্রশিক্ষণ চালু করার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অথবা বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে একটি সবসড়ৎধহফঁস ড়ভ ঁহফবৎংঃধহফরহম স্বাক্ষর করা প্রয়োজন, যাতে আমাদের নার্সরা সরেজমিনে তাদের মেধা ও প্রজ্ঞার ছাপ রাখতে পারে।
৪) ভাষা শিক্ষা
আধুনিক জীবনে ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব যে কত অপরিসীম তা বলে শেষ করা যায় না। নেপোলিয়ান এক সময় বলেছিলেন, “ঙহব ষরাবং ধং সধহু ষরাবং ধং ড়হব শহড়ংি ষধহমঁধমবং” হালে এই কথাটির গুরুত্ব আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলনের দাবি যথার্থই ছিল এবং সেজন্য আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছি কিন্তু যে ভুলটা আমরা করেছি তা হলো স্বাধীনতার পর আমরা ইংরেজীর গুরুত্ব একেবারেই কমিয়ে দিয়েছিলাম যার মাশুল এতদিন আমাদের দিতে হচ্ছে। পৃথিবীতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহু শাখাতে জ্ঞান লাভের জন্য যে সধঃবৎরধষং আছে তার অধিকাংশই ইংরেজীতে লিপিবদ্ধ। যে কাজটা এখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করতে হবে তা হল ভাষা রহংঃরঃঁঃব সহ সকল ঁহরাবৎংরঃু/রহংঃরঃঁঃরড়হ-এ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি ইংরেজী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে তারা যে অক্সফোর্ড বা কেম্ব্রিজের ধপপবহঃ এ খুব চোস্ত ইংরেজী বলবেন তা নয়; তাদের জন্য দরকার ভঁহপঃরড়হধষ বহমষরংয। এ থেকে যে যতটুকু লাভ করবে তার ততটুকুৃই মঙ্গল। ইংরেজী ভাষার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি-বাকরির জন্য আরবী ভাষারও চল আবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। তাই মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করার জন্য আরবী ভাষা জানা অপরিহার্য্য। আরবী মুসলমানদের কোরআনের ভাষা, সে হিসেবেও আরবী ভাষা ভালো করে বুঝা আমাদের জন্য প্রয়োজন। বস্তুতঃ এখন কোন এক শিক্ষিত লোক যদি স্বাচ্ছন্দে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন, সুন্দরভাবে ইংরেজীতে লিখতে ও বলতে পারেন তাহলে তার বাজার দর যে অস্বাভাবিক একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব কথা চিন্তা করেই দূর শিক্ষণ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ভাষা শিক্ষাদান একটা অতীব প্রয়োজনীয় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক লোক প্রথম জীবনে ইংরেজী ভাষার উপরে তেমন গুরুত্বারোপ করেনি। কিন্তু এখন তার পক্ষে আর কোথাও ফুল টাইম ক্লাস করে ভাষা শেখা সম্ভব নয়, অথচ এই লোকটি যদি দুর শিক্ষণ পদ্ধতিতে পাঠ গ্রহণ করেন এবং রিজিওনাল রিসোর্স সেন্টারে ছুটির দিনে ল্যাংগুয়েজ ল্যাবরেটরীর মাধ্যমে তার জ্ঞানটাকে ঝালাই করে নেন তবে খুব শিগগিরি তিনি ইংরেজীতে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
উপরে যেসব ক্ষেত্রগুলোর কথা বললাম সেগুলো কিছু কিছু নির্দেশক ক্ষেত্র মাত্র। সময়ের সাথে সাথে দেশের প্রয়োজনে আরও নতুন নতুন ক্ষেত্র উদ্ভাবিত হতে পারে, যেখানে মানবসম্পদ উন্নয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়বে, সেসব ক্ষেত্রেগুলোকেও আমাদেরকে দূর শিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। এবার আমরা ঘড়হ-পৎবফরঃ নধংবফ ক্ষেত্রগুলো আলোচনা করব।
ঘড়হ-পৎবফরঃ নধংবফ শিক্ষার ক্ষেত্রসমূহ: এই শিরোনামে সেসব বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া উচিৎ যেগুলোতে মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা, সচেতনতা ও শিক্ষা বাড়ে; সেগুলোর কিছু উদাহারণ দিতে চাই ঃ
১) স্বাস্থ্য শিক্ষা
আমাদের দেশে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয় এত অপ্রতুল যে সেটা উল্লেখ করার মত নয়। যদি এই ব্যয়ে আমরা একটা কোয়ান্টাম জাম্প দেই অর্থাৎ আগামী বছরের বাজাটে যদি বর্তমান বাজেটের তুলনায় মাথাপিছু দশগুণও বাজেট বাড়িয়ে দেই তবুও ১৪ কোটি মানুষের এই দেশে সেটা পর্যাপ্ত হবে না। তাহলে সমাধানটা কোথায়? সমাধানটা নিহিত আছে মানুষের অনানুষ্ঠানিক স্বাস্থ্য শিক্ষার মধ্যে। আমাদের দেশে ঢ়ৎবাবহঃরড়হ রং নবঃঃবৎ ঃযধহ পঁৎব এই সূত্রটিকে ধরেই এগুতো হবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে। বর্তমানে ঐওঠ রোগের ক্ষেত্রেও এই সূত্রটি একটি মোক্ষম সূত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। কী করলে কোন রোগ হয় না সেটি যদি সহজ ও সাধারণ ভাষায় সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে দেয়া যায়, তবে রোগের প্রকোপ কমবে বৈ বাড়বে না। আমাদের দেশের লোকেরা প্রয়োজনীয় কথায় কর্ণপাত করে না এ কথা ঠিক না। এর একটি জলন্ত প্রমাণ হলো জন্মের পর শিশু মৃত্যুর হার কমে যাওয়া। প্রিন্টেড ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করে যখনই মায়েদেরকে বোঝানো হল যে, সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর কিছু দিন পর পর ছয়টি টিকা নিলে কয়েকটি ভয়াবহ রোগের হাত থেকে সারা জীবনের জন্য রক্ষা পাওয়া যায়, তখন মায়েরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সন্তানকে নিয়ে ছুটতে শুরু করল গ্রামের/কাছের ক্লিনিকগুলোতে। আমাদের দেশের লোক ভাল জিনিস পেলে গ্রহণ করে না, একথা ঠিক না। আসলে তাদের পাওয়াটাই হয় অনেক কম।
২) রাস্তার নিরাপত্তাঃ
আমাদের দেশে রাস্তায় যাতায়াতের নিরাপত্তা দিন দিন মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। বেপরোয়া ও বেআইনীভাবে গাড়ী চালানো হচ্ছে। বিদেশে আগে শুধু গাড়ী চালাতে পারলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যেত। কিন্তু এখন গাড়ী ভাল করে চালানোর পাশাপাশি গাড়ীর বিভিন্ন যন্ত্রের ফাংশন্স সম্পর্কেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে আগ্রহীদের জ্ঞান পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা অনিয়ম ও দুর্নীতিও লক্ষ্য করা যায়। এই দুর্নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের জনসাধারণকে। সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অঙ্গহানি ছাড়াও কখনও কখনও প্রাণহানিও ঘটছে। এ ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে পুলিশের প্রশিক্ষণও পর্যাপ্ত নয়। এখন এইসব পুলিশ ও ড্রাইভারকে তাদের কাজের জায়গা থেকে উঠিয়ে না নিয়ে এসে প্রশিক্ষণ দিতে হবে অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণটা হতে হবে রহ-ংরঃঁ অর্থাৎ যে যেখানে আছে তাকে সেখানে রেখে দূর শিক্ষণের মাধ্যমে বুঝাতে হবে। খুব সহজ ও সুন্দর করে তৈরী করা ারফবড় পধংংবঃঃব-এর মাধ্যমে ট্রাফিক আইন ও রাস্তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনগুলো তুলে ধরা যায় এবং এগুলোর ঢ়ঁনষরপ নৎড়ধফপধংঃরহম হলে জনসাধারণের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতার সৃষ্টি হবে। ফলে রাস্তার নিরাপত্তা অনেকাংশেই নিশ্চিত হবে।
৩) ব্যবসায়-বাণিজ্যে টাকার লেনদেনের পদ্ধতি
আমাদের দেশে অনেক লোক আছে যারা ব্যাংক থেকে কীভাবে লোন পাওয়া যায় সে সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নয়। ফলে দালালদের খপ্পরে পড়ে অযথা হয়রানির শিকার হয়। অথচ এবিষয়টিতে যদি তাদেরকে ধঁফরড় ারংরড়হ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তবে সময়ের অপচয় ও হয়রানির হাত থেকে তারা সহজেই রক্ষা পেতে পারে।
৪) সময় ও সম্পদের অপচয় রোধ
একটা উন্নত চুলা যার বভভরপরবহপু শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ এ উন্নীত করা হয়েছে, তা কী করে বানাতে হয় এবং কী করে ব্যবহার করতে হয় তা যদি শিখিয়ে দেয়া হয় তাহলে বনাঞ্চলের উপর চাপ কমবে। এক্ষেত্রে দেশে ংঁভভরপরবহঃ ঢ়ৎড়সড়ঃরড়হধষ ধপঃরারঃু হয়েছে বলে মনে হয় না। এমনি ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে যেখানে মানুষকে কিছু বুঝিয়ে দিতে পারলে সে তার নিজের অবস্থা পরিবর্তনে সচেষ্ট হবে। আমরা আগেই বলেছি যে, হড়হ-পৎবফরঃ পড়ঁৎংব-এ কোন ডিগ্রী দেওয়া হয় না। এসব পড়ঁৎংব-এ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের চোখ কান ফুটিয়ে দেওয়া হয়, যাতে সে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে; এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারটি কিন্তু ঊসঢ়ড়বিৎসবহঃ। আমরা আজকাল প্রায়ই ঊসঢ়ড়বিৎসবহঃ বা ক্ষমতায়নের একটা বড় অংশের কথা শুনি। একজনের বুঝ যেমন আরেকজনকে দিয়ে দেওয়া যায় না তেমন হাত পাতা মানুষ কখনই মানুষ হতে পারে না। তাই মানুষকে দিয়েই মানুষের উন্নয়ন করতে হবে। হড়হ-পৎবফরঃ নধংবফ কোর্সে যে একেবারেই সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে না তা নয়। হাঁস-মুরগী পালন বা ব্যবসায়-বাণিজ্য বিষয়ে বেশ কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া যায় এবং যদি মনে হয় শিক্ষার্থী বিষয়টি রপ্ত করতে পেরেছে তবে তাকে একটা সার্টিফিকেট দেয়া মোটেও অসমীচীন হবে না; ক্ষরং এটা তার জন্য একটা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে দূর শিক্ষণ পদ্ধতির সব টেকনোলজি ব্যবহার করার পাশাপাশি ঢ়ঁনষরপ নৎড়ধফপধংঃরহম ও ব্যবহার করা উচিৎ। সমস্ত জিনিসটিকে হধৎৎড়ি পধংঃরহম-এর মধ্যে না রেখে ঢ়ঁনষরপ নৎড়ধফপধংঃরহম এ আনলে এর বাড়তি ফরারফবহফ হবে এই যে, টেলিভিশনের সামনে বসে যদি কেউ এই নৎড়ধফপধংঃরহম শুনে এবং সে যদি দূর শিক্ষণের রেজিস্টারড্ শিক্ষার্থী নাও হয় তবুও তার জ্ঞানের মাত্রা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। এদিক থেকে দূর শিক্ষণ একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেক বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার
পরিশেষে একথা বলা যায় যে দূর শিক্ষণ এখন ওঈঞ ইধংবফ হওয়ায় তা সর্বত্রগামী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই সর্বত্রগামীতার সুবাদেই দূর শিক্ষণের কোয়ালিটি বা মান প্রতিনিয়তই মূল্যায়নের সম্মখীন হয় বিধায় অনেক প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয়েও এখন দূর শিক্ষণে ব্যবহৃত লেকর্চাস অনুসরণ করা হচ্ছে। কারণ একটাই। এগুলোর পরীক্ষীত মান। আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে দূর শিক্ষণ মানবসম্পদের সৃষ্টি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে রচনা করে চলেছে এক নতুন দিগন্ত। একাজে হাসি-আনন্দের কোন ঘাটতি নেই। এখানে আমি আপনাদের একটা ছবি দেখাতে চাই, যা আপনারা উপভোগ করবেন।
ছবিটিতে একজন কৃষক বিনোদন উপভোগ করছেন হাল চালাতে চালাতে এন্টেনা সম্বলিত একটি টিভিতে যা ব্যাটারী চালিত। কৃষক পুলকিত হয়ে দেখছে নানা অঙ্গভঙ্গীমায় পরিবেশিত এক রমণীর ছবি। একই যান্ত্রিকতার মাধ্যমে এই চাষিকে ক্ষেতে চাষ করার সময়ে অনেক প্রয়োজনীয় কথাও বলা যায় এবং এই প্রয়োজনীয় কথা ও কাজের মাঝেও তাকে বিনোদন দেয়া যায়। মানবসম্পদ সৃষ্টি একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ; এই কাজে দেশের ছাত্র, অভিভাবক, নাগরিকসহ সর্বমহলের সর্বাত্মক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করি।
লেখক : ভিসি ও
প্রফেসর ইমেরিটাস, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি
ভিসি, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন