অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘কথামালার বাজেট’ বলে মন্তব্য করছেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড. আকবর আলি খান বলেছেন, বাংলাদেশের মূল সমস্যা সুশাসনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে বাজেটে কোনো নির্দেশনা নেই। বাজেট ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো উচিত। বাংলাদেশের বাজেট অত্যন্ত অস্বচ্ছ। বাজেটে কর থেকে নতুন কর কত টাকা আহরণ হবে তার কোনো হিসাব নেই।
রোববার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের উদ্যোগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। ১৯৭২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত হিসাব থাকলেও এরপর থেকে আর হিসাব নেই বলেও জানান।
ড. আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশে বাজেট একটি আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। বাজেট হলো গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি। গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো, নো ট্যাক্সসেশন উইথ আউট রিপ্রেজেন্টেশন। জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো করারোপ করা যাবে না। বাজেটের মাত্র ২০ শতাংশ আলোচনা হয়। আমাদের দেশের সংসদ সদস্যদের বাজেট নিয়ে আলোচনার করার কোনো সুযোগই নেই। অর্থমন্ত্রী তৈরি করেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন। এতে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের ভূমিকা আছে বলে মনে হয় না। সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সারাবছর ধরে বাজেট নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিংগুলো জাতীয়করণ করা হয়েছে আদর্শ সেবা দেয়ার জন্য। ব্যাংকের লাভ দিয়ে সরকারের কর্মকান্ড চালাবে। ব্যাংকগুলো কোনো সেবা দিচ্ছে না। এসব ব্যাংকের লোকসানের জন্য করদাতাদের কাছ থেকে কর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা অমার্জনীয় অপরাধ। দুই দশক ধরে শুনছি সরকার এসব ব্যাংক বিরাষ্ট্রীয়করণ করছে। একটি সরকারি ব্যাংক রেখে সব ব্যাংক বিরাষ্ট্রীকরণের জন্য সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংক ছাড়াও সরকারের যেসব লোকসানি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের লোকসান কমানোর বিষয়েও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
প্রস্তাবিত এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড.এ.বি. মির্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমান বাজেট কতটুকু বিনিয়োগবান্ধব- সেটা প্রশ্নবিদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই বাজেট প্রস্তাবে। ব্যবসায়ীরা এই বাজেটকে বিনিয়োগবান্ধব বলছেন না।
ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক বাড়ানো অন্তর্ভুর্ক্তিমূলক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। মানুষকে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে দূরে রাখতে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক বসানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সাবেক গর্ভনর বলেন, মদ, গাজাসহ কিছু পণ্য রোধকল্পে আবগারি শুল্ক হয়। এবারের বাজেটে ব্যাংকিংয়ে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। বাজেটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাজেটের প্রথমে বলা হয়ছে উন্নয়নের মহাসড়কে, সময় এখন বাংলাদেশের। উন্নয়নের মহাসড়কে যেতে প্রস্তুতি দরকার। প্রস্তুতি ছাড়াই মহাসড়কে উঠে গেছে। প্রস্তুাবিত বাজেটে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে কোনো মিল নেই।
মূল্যস্ফীতি বিষয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এরপরও মূল্যস্ফীতি নাকি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কোথায় জরিপ করছে? কীভাবে করছে? কিছুই মাথায় আসে না। বাজেটের টাকা দেবে গৌরি সেন অর্থাৎ আমজনতা। গতানুগতিক ও গাণিতিক এই বাজেটের রূপকল্প রূপ গল্পে থেকে যাবে। বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন