শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

পাহাড়ধসে ২ জনের প্রাণহানি

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কক্সবাজারের পাহাড়ে ৫ লাখ মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস পিছনে রাজনৈতিক প্রভাব ও স্থানীয় প্রশাসনের আশকারা গত দশ বছরে শতাধিক প্রাণহানি
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে : কক্সবাজারের পাহাড় গুলোতে ৫ লাখ মানুষ ঝুঁিকপূর্ণ বসবাস করছে বলে জানা গেছে। গতরাতে টেকনাফে পাহাড়ধসে পিতাও কন্যা দু’জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়-পেকুয়ার পাহাড়ে ঝুঁিক নিয়ে বসবাস করে আসছে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ। প্রতিবছর পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও বসবাসকারীরা মানছে না কোন বাধা নিষেধ। তবে বর্ষা এলেই পাহাড়ে এসব অবৈধ দখলদার ও বসবাসকারীদের পাহাড়ধসের শঙ্কায় দিন কাটে প্রতিনিয়ত। রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে এবং স্থানীয় প্রশাসনের আশকারায় পাহাড়ে গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ স্থাপনা। এতে গত দশ বছরে ঘটেছে শতাধিক নারী-পুরুষের প্রাণহানির ঘটনা।
এক অনুসন্ধানে দেখাগেছে, পর্যটন শহর কক্সবাজারেই অবৈধভাবে পাহাড় দখল করে ঝুঁিকপূর্ণ বসবাস করছে অর্ধলাখেরও বেশী মানুষ। শহরের প্রাণ কেন্দ্র হিলটপ সার্কিট হাউজের আশপাশেই গড়ে উঠেছে পাহাড় দখল করে দশ সহ¯্রাধিক অবৈধ ঘারবাড়ি। এসব অবৈধ বসবাসকারীরা পাহাড় কেটে স্থাপন করেছে কাচাঁ-পাকা ঘরবাড়ি। খুবই ঝুঁিকপূর্ণ এসব পাহাড় গুলো বর্ষায় যে কোন সময় ধসে পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। আশপাশের পাহাড় কেটে স্থাপনা গড়ে তোলার কারণে ঝুঁিকপূর্ণ হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী হিলটপ সার্কিট হাউজ ও রাড়ার স্টেশন। গত একবছর আগে পাহাড় কেটে রাড়ার স্টেশনের পাদদেশে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনায় পাহাড়ধসে বেশ কিছু মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটলেও এখনো উচ্ছেদ হয়নি ওসব অবৈধ স্থাপনা। একইভাবে হিলটপ সার্কিট হাউজের পূর্ব-দক্ষিণে পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে শত শত ঘরবাড়ি। সরেজমিনে দেখাগেছে, এসব ঘরবাড়িতে চরম ঝুঁিকতে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। একইভাবে শহরের পাহাড়তলী, মোহাজের পাড়া, বদ্যের ঘোনা পাহাড় ও কলাতলীতে পাহাড়ে ঝুঁিকপূর্ণ বসবাস করে আসছে হাজার হাজার মানুষ।
অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, পাহাড়ে ঝুঁিকপূর্ণ অবৈধ বসবাসকারীদের অধিকাংশ রোহিঙ্গা হলেও উপকূলীয় এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নদীভাঙা এলাকার মানুষ অনেক। এরা বিভিন্ন সময় কাজের সন্ধানে কক্সবাজার এসে স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলে পাহাড়ে। রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে এবং স্থান বিশেষে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় পাহাড় দখল করে অবৈধ বসবাসের সুযোগ পায় তারা।
গতরাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৭নং ওর্য়াডের পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়ায় পাহাড়ধসে পিতা-কন্যা দু’জন নিহত হয়েছে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নূর আহমদ আনোয়ারী জানান, পিতা মুঃ সেলিম (৪৫) ও মেয়ে টিসুমণি (৫) রাতে পাহাড়ধসে প্রাণ হারান।
একইভাবে রামুর গর্জনিয়া, খুনিয়াপালংসহ পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় ৫০ হাজার মানুষ পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছে বলে জানাগেছে। খুনিয়া পালং ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মাবুদ জাননা, সম্ভবত শুধু তার ইউনিয়নেই ৩০ হাজার মানুষ পাহাড়ে ঝুঁিকতে বসবাস করছে।
উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী জানান, ১৫-২০ হাজার মানুষ উখিয়ার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছে বলে তার ধারণা। তবে এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
একইভাবে টেকনাফের বিস্তীর্ণ পাহাড়ে যে কত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তার হিসাব কে রাখে ? তবে ৩০ হাজার মানুষ এখানে পাহাড়ে ঝুঁিকতে বসবাস করছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এখানে রোহিঙ্গারা পাহাড় দখল করে অবৈধভাবে বসবাস করলেও স্থানীয় লোকজন বনবিভাগের কর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারী পাহাড়ে পাকা দালান করারও নজির আছে। এছাড়াও চকরিয়ার ব্যাপক বনভূমিতে এবং পেকুয়ার পাহাড় গুলোতে দিন দিন ঝুঁিকপূর্ণ বসবাস বাড়ছেই।
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে ৪ সেনা অফিসারসহ দেড় শতাধিক প্রাণ হানির ঘটনার পর কক্সবাজারের প্রশাসনের এখনো টনক নড়েছে বলে মনে হয়নি। পাহাড়ে ঝুঁিকপূর্ণ বসবাস এলাকা গুলোতে এখনো চালানো হয়নি উচ্ছেদ অভিযান। সেখানে বসবাস করতে কোন বাধা দেয়া হয়েছে বলে এখানো জানা যায়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান কর্ণেল অবঃ ফুরকান আহমদ জানান, তিনি জেলা প্রশাসনকে বলেছেন এবিষয়ে জরুরী ব্যবস্থা নিতে। মাইকে প্রচার করে ঝুঁিকপূর্ণ স্থান গুলো থেকে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বাস্তবে দেখা গেছে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের এই মাইকিং কোন কাজ দিচ্ছে না। এপর্যন্ত ঝুঁিকপূর্ণ স্থাপনা থেকে কেউ কোথাও নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানাযায়নি।
কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কক্সবাজার পৌরসভায় ইতোমধ্যে দুই থেকে তিন শত পরিবারের মত ঝুঁিকপূর্ণ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করা গেলেও অতি ঝুঁিকপূর্ণ বসবাসকারীদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।এজন্য পৌরসভার বিভিন্নস্থানে ৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এটি তদারকির জন্য ৮টি টিমও গঠন করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন