স্টাফ রিপোর্টার : মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশেষ রহমত এবং অনুগ্রহের রজনী হচ্ছে লাইলাতুল কদর। গতকাল দিবাগত রাত ছিল লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদর অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ রাত। পবিত্র কুরআন রমজান মাসের এ রজনীতেই নাযিল শুরু হয়েছিল। এ রাতের ইবাদত বন্দেগীকে নাজাতের উছিলা এবং হাজার মাসের ইবাদতের চাইতে উত্তম বলে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযথ পবিত্রতা ও মর্যাদার সাথে লাইলাতুল কদর পালন করেছেন। পবিত্র লাইলাতুল কদরের রজনীতে ইবাদত বন্দেগীর জন্য ইফতার ও মাগরিব নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মসজিদ, দরবার, খানকাসমূহে জমায়েত হতে শুরু করেন। রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে বিপুলসংখ্যক মসুল্লী জমায়েত হয়ে রাতভর ইবাদত বন্দেগী করেন। আজিমপুর, বনানী ও শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানসহ বিভিন্ন কবরস্থানে জিয়ারতকারীদের ভিড় ছিল সারা রাতই। রাতভর ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে ছিল কোরআনখানি, নামাজ, জিকির, মিলাদ মাহফিল, দান খয়রাত, শেষে রোজাদার মুসলমানগণ ক্ষমার শেষ সুযোগ মনে করে মুনাজাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আখেরি মুনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি সমৃদ্ধি এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করা হয়।
মসজিদে গাউছুল আজম
মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হয়। এশা ও তারাবী নামাজ শেষে শুরু হয় কদরের বিশেষ ইবাদত-বন্দেগী। মধ্যরাতের পর এ মসজিদে মুসল্লিদের আগমন বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাত ২টার পর থেকে শুরু হওয়া কিয়ামুল লাইলে কোরআনের তৃতীয় এবং শেষ খতম হয়।
মসজিদের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজির পরিচালনায় এ দিনের ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রাখেন দেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম এবং মসজিদের ইমাম। বক্তাগণ বলেন, এ মহিমাময় রাতে হযরত জিব্রাইল (আ.) বিপুলসংখ্যক ফেরেশতাদের নিয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করেন এবং ইবাদত বন্দেগীতে মশগুলদের জন্য আল্লাহ তা’য়ালার ক্ষমার ঘোষণা দিতে থাকেন। বক্তাগণ বলেন, কদরের রাতে নাজিল হওয়া মুক্তির চাবিকাঠি পবিত্র কুরআনের আলোকে সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন গড়ে তোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, এ মহিমাময় রাতে নিজের কৃত দোষ-ত্রæটি, গুণাহ ও পাপ কাজের জন্য তওবা করে গুণাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে আকুতি জানালে মহান আল্লাহ সে দোয়া কবুল করেন।
চট্টগ্রামে শবে কদর পালিত
চট্টগ্রাম ব্যুরো : বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে ভাবগম্ভীর পরিবেশে ইবাদত বন্দেগী ও জিকির-আজকারের মধ্যদিয়ে হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী পবিত্র শবে কদর পালিত হয়েছে। মহিমান্বিত এ রজনীতে মহানগরীর মসজিদসমূহে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঢল নামে। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মসজিদসমূহে রাতভর চলে ইবাদত-বন্দেগী। নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ মসজিদে ইবাদতে মশগুল ছিলেন। মসজিদে ইবাদতের পাশাপাশি মহানগরীর পীর-আউলিয়াদের মাজার ও খানকা এবং কবরস্থানগুলোতে মুসল্লিদের জেয়ারত করতে দেখা যায়। পারিবারিক কবরস্থানগুলোতে মুরুব্বিদের কবর জেয়ারত করেন অনেকে।
নগরীর ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ, বায়তুশ শরফ মসজিদ, শাহ আমানত খান দরগাহ মসজিদ, গরীবুল্লাহ শাহ জামে মসজিদ, চকবাজার অলিখাঁ মসজিদ, আগ্রাবাদ সিডিএ জামে মসজিদ, চন্দনপুরা জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ, মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, হযরত বায়েজিদ বোস্তামী দরগাহ মসজিদসহ নগরীর প্রায় প্রতিটি মসজিদে ছিল মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড়। মাগরিব ও ইশার নামাজে অনেক মসজিদ ছাড়িয়ে মুসল্লিদের ঢল আশপাশের সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
এ পবিত্র রাতে ছোট ছোট বয়সী শিশু, যুবক, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদে ভিড় জমান। তারা শবে কদরের নফল নামায আদায় শেষে রাত জেগে মসজিদে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল ছিলেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মহান আল্লাহর রহমত কামনা করে গুনাহ মাফ চেয়ে কান্নাকাটি করেন। পাশাপাশি এ পবিত্র রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার করে সারারাত কাটিয়ে দেন। # আ/আলী ২২/০৬/১৭ইং
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন