বাসার তাসাউফ
[এ গল্পটা বিশ^াস করা না করা আপনাদের ব্যাপার। আমার কাজ গল্প বলে যাওয়া।]
লোকটাকে আমি প্রথম দেখি একটি রেলস্টশনে। বাস কিংবা রেল স্টেশনে হরেক রকমের মানুষের দেখাই তো মেলে। তবে অনেক মানুষের ভিড়ে তাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে মোটেও অসুবিধা হয় নি।
যে স্টেশনে লোকটিকে আমি প্রথম দেখি, এর নাম কসবা। কুমিল্লা শহরের উত্তর দিকের শেষ সীমনায়, একেবারে ভারতের কাছাকাছি- মফস্বলের ছোট্ট একটি স্টেশন। চারপাশে লাল মাটির পাহাড় আর সবুজ বৃক্ষরাজির মাঝখানে আলগোছে যেন বসিয়ে দেওয়া হয়েছে নিরালা এই স্টেশনটাকে। প্লাটফর্মে কোনো গাড়ি নেই, আমি যে গাড়িতে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছাবার অপেক্ষায় আছি- সেটা আসে নি। নির্জন প্লাটফর্মে খামোখাই বসে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আমি বসে না থেকে প্লাটফর্ম ধরে এদিক ওদিক হাঁটতে থাকি। স্টেশন ছেড়ে একটু দক্ষিণে এসে দেখি এ দিকটা বেশ জনবহুল ও গতিময়। বুঝতে পারি, এতক্ষণ আসলে অফসাইডে ছিলাম। প্লাটফর্ম ধরে কয়েক পা দক্ষিণে এসেই লোকটাকে দেখতে পাই, রেললাইনের ধারে দাঁড়িয়ে আছে। তার কাছে এগিয়ে গিয়েই আমি নিশ্চিত হই- আরে! এ তো সেই লোকটা, যার ছবি আমার ঘরের দেয়ালে ফুটে উঠেছে।
আমি লোকটির কাছে যাই, সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখের ছবিটা আমার কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। তার মুখের সাথে দেয়ালের ছবিটার হুবহু মিল আছে। আমি লোকটার পাশে গিয়ে দাঁড়াই, অদ্ভুত একটা গন্ধ বা ঘ্রাণ পাই তার গা থেকে। যদিও গন্ধ আর ঘ্রাণের মধ্যে একটা তফাৎ আছে। একটা নাকে এসে লাগে, অপরটি শুঁকে নিতে হয় বাতাসের শরীর থেকে। আমি লোকটির গা থেকে আসলে ঘ্রাণ নয়, পেয়েছি গন্ধ। তবে গন্ধটা কীসের তা বলতে পারি না। তার গায়ের কাপড়গুলো এমনিতেই ছেঁড়া, তার ওপরে ময়লা জমে জমে পোড়া মবিলের মতো হয়ে আছে। বুঝতে পারি, গন্ধটা এই ছেঁড়া জামা থেকেই ভেসে এসেছে।
দুঃখিত! আসল কথাটাই বলা হয় নি।
কয়েক বছর আগে আমি কুমিল্লা শহরে ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়ে ‘নূরমহল’ নামের একটি বাড়ির দোতলায় ভাড়া থাকতাম। আমার আগে বাড়িটাতে যে লোক থাকতো শোবার ঘরের দেয়ালে রঙ করিয়েছিল সে। সেই রঙ পুরনো হয়ে গেছে। পলেস্তরা পড়েছে খসে। বৃষ্টির জলে ভিজে কিছু স্যাঁতস্যাঁতে দাগ ফুটে উঠেছে দেয়ালে দেয়ালে। দাগগুলো এমন ভাবে ফুটে উঠেছে যে, কিছু কিছু দাগ মিলে রূপ নিয়েছে একজন মানুষের মুখের ছবির মতো। আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানা ছাড়ার আগে এই মুখচ্ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকি। রাতে ঘুমোবার সময় ছবিটাকে সঙ্গী করে ঘুমোই। ভাবি আমারই সঙ্গী সে। এভাবে দিনরাত চলে যেতে থাকে। কিছু দিন পর ছবিটাকে আরও জীবন্ত, আরও স্পষ্ট মনে হতে থাকে। দিনে দিনে ছবিটা বিষম এক ভাবনা বাসা বাঁধিয়ে দেয় আমার মাথায়। কেন জানি আমার মনে হয়, ছবির এই মানুষটার বাস্তবে অস্তিত্ব আছে, যেন এ শহরে কোথাও খুঁজলেই আমি তার দেখা পাব।
আমি আর কিছু না ভেবে মানুষটাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ি। অলিতে গলিতে, পথে-প্রান্তরে, রাজনৈতিক সভায়, ক্রীড়া অনুষ্ঠানে, রেল স্টেশনে- যেখানে মানুষের ভিড় দেখি সেখানেই ছুটে যাই ছবির মানুষটাকে দেখার প্রত্যাশায়। হাজার হাজার মানুষ দেখি। কিন্তু সেই মানুষটাকে দেখি না। খুঁজে পাই না দেয়ালে ফুটে উঠা ছবিটার সঙ্গে কারও মুখের মিলও। তবে আমি দমে যাই না, খুঁজতে থাকি। ছবির মানুষটাকে খঁজে পাবার নেশা আমাকে প্রায় পাগল বানিয়ে ফেলে। জনাকীর্ণ রাজপথে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকি তার দেখা পাবার আশায়। পুলিশ আমাকে চোর ভেবে সন্দেহ করে আর পথচারীরা পাগল ভেবে পাশ কেটে চলে যায়। তাতে আমি কোনো ভ্রুক্ষেপও করি না। শুধু অবিরাম মানুষটাকে খুঁজে বেড়াই। কখনো আমি মেয়েদের দিকে তাকাই না, কেবল দেখি পুরুষদের। কারণ- ছবিটা পুরুষের।
অবশেষে লোকটার দেখা আমি পেয়ে যাই! সেটা এই স্টেশনেই-।
লোকটাকে প্রথমবার দেখলে আপনি নিশ্চিত অবাক হবেন, আমিও হয়েছি। ফজলি আমের মতো মুখের গড়ন। মুখভর্তি দাড়ি, কিন্তু গোঁফ নেই। মাথার চুলগুলো উসকোখুসকো। মনে হয়, কতদিন চিরুনি লাগায় না। শরীরের গঠন বেশ মোটা তাজা, মাংসল ও পেশিবহুল- যাকে বলে পেটানো শরীর। লম্বাটে দেহের গঠন। হাত আর পায়ের রগগুলো ভাসা ভাসা- দেখলে মনে হয়, যেন বুড়ো কোনো বৃক্ষের শেকড়। সাদা লুঙ্গি আর হলুদ রঙের ফতোয়াপরা গায়ে। ট্রেনে চড়ে কোথাও যাবার জন্য অথবা এমনিতেই একা একা স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল। আমি তাকে ফলো করতে থাকি। সে ট্রেনে উঠে, আমিও দ্রুত একটা টিকেট কিনে উঠে পড়ি। দু’টো স্টেশন পেরিয়ে ট্রেন থেকে নামে সে, নেমে পড়ি আমিও। বোধ হয় চট্টগ্রামে যাবে সে। আমি তার সঙ্গে কথা বলার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হই। কিন্তু তার আগেই সে আবার ট্রেনে উঠে পড়ে, আমিও উঠি। ট্রেন যাচ্ছে চট্টগ্রামের দিকে। ভাবি, ট্রেন থেকে নেমে তার সঙ্গে কথা বলব। এ ফাঁকে তাকে ভালো করে দেখতে থাকি। আশ্চার্য! আমার ঘরের দেয়ালের সেই ছবিটার সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই এ লোকটার মুখের, একেবারে হুবহু মিল আছে। আমার মাঝে প্রবল উত্তেজনা শুরু হয়ে যায়। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারি না। দ্রুত ছুটে যাই লোকটার কাছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলি, ‘দয়া করে আপনার পরিচয়টা কি দেবেন?’
লোকটা আচমকা আমার এ কথা শোনে একটু বিস্মিত হয়ে যায়। কোনো কথা না বলে আমার দিকে তার বিস্মিত চোখজোড়া মেলে তাকিয়ে থাকে নির্ণিমেষ। আমি লক্ষ্য করি, তার চোখ দু’টো সাধারণ চোখের চেয়ে আরও বেশি নীল। সেই নীল চোখের চাহনিতে পৃথিবীর সব বিস্ময় জাগিয়ে সে আমাকে শুধায়, ‘আপনি আমার পরিচয় জেনে কী করবেন?’
‘কিছুই করব না, তবে আপনার সাথে পরিচিত হতে চাই।’
‘আমার নাম দেয়াল আহমেদ, থাকি ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়ে ‘নূরমহল’ নামের একটি বাড়ির দোতলায়!’ গম্ভীর গলায় এ কথাগুলো বলেই লোকটা চলে যায়। আমি ঘোর লাগা চোখে শুধু তার গমন পথে তাকিয়ে থাকি। সে চলে যাবার পরে নূরমহলের দোতলায়ই যে আমারও বসবাস সে কথা মনে পড়ে। ভাবতে থাকি, তবে কি এ লোকটাই সেই দেয়ালে ফুটে উঠা ছবির মানুষটি। বেশিক্ষণ ভাবার সময় পাই না। কারণ- আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আর যখন সুস্থ্য হই তখন নিজেকে আবিস্কার করি একটি হাসপাতালের সাদা বিছানায়। কয়েক ঘণ্টা হাসপাতালে কাটিয়ে বাসায় ফিরে আসি সুস্থ্য হয়ে। দেয়ালের ছবিটা তখনও আছে, তবে অন্যদিনের তুলনায় একটু ¤øান, একটু ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
এরপর লোকটাকে আমি আর কোথাও খুঁজে পাই নি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার আর কোনো সন্ধান না পেয়ে ধর্মসাগরপাড়ের লোকদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, লোকটি একজন কোটিপতি। কুমিল্লা শহরেই কোনো এক ধনী পরিবারে জন্ম তার। কিন্তু কোথায় তা কেউ জানে না, আমিও জানতে পারি নি।
এরপর কেটে যায় কিছুদিন।
সেদিন রাতে আমি একটু দেরি করে ঘুমোতে যাই বিছানায়। এ জন্য সকালে ঘুমও ভাঙ্গে একটু দেরিতে। যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন ভোরের সোনালি আলোয় ভরে গিয়েছে আমার ঘর-দোর। প্রত্যেকদিনের অভ্যেসমতো তাকাই দেয়ালের দিকে। দেখি ছবিটা প্রায় মিলিয়ে গেছে। রাতেও কেমন স্পষ্ট আর উজ্জ্বল ছিল সেটা। বিছানা ছেড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসি। মেঝেতে পড়ে থাকা সকালের খবরের কাগজটা হাতে নিতেই চোখে পড়ে একটা সংবাদ। প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে সংবাদটি- “কুমিল্লার কোটিপতি দেয়াল আহমেদ মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন...।’ আমি দ্রুত ঘরে ফিরে এসে দেখি দেয়ালের মুখচ্ছবিটা প্রায় ফ্যাকাসে হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যে হবার আগেই সেটা একেবারে বিলীন হয়ে গেল...!
এ ঘটনার মধ্যে তিনটি বিশেষত্ব আছে।
প্রথমটা হলো, দেয়ালের গায়ে বৃষ্টির জলের কিছু দাগ মিলে ঐ কোটিপতির মুখের আকার ধারণ করল কীভাবে? আর ঐ ছবিটার সঙ্গে তার নিজের জীবনের এত গভীর সম্পর্ক কেন থাকবে? জানি, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি এটার কোনও জবাব দিতে পারবে না।
দ্বিতীয়টা হলো, দেয়ালের গায়ে যে ছবিটা ফুটে উঠেছিল তার সঙ্গে লোকটার নাম সংযুক্ত কেন? এর কী ব্যাখ্যা প্রদান করা যেতে পারে?
অনেকদিন ধরে আমি নাকি এমন সব গল্প লিখছি, যা পড়ে পাঠক কোনো আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে না। পরিচিত পাঠকেরা তো আছেই, সঙ্গে আমার স্ত্রীও এমন অভিযোগ হরহামেশাই করে। আমার লেখা নাকি সাদামাঠা, কোনো রহস্য নেই। কাজেই একটি রহস্যগল্প লিখতে হবে। সম্পাদকের ফরমায়েশও আছে, একটা ভূতের গল্প লিখার। ভাবি, কী লেখা যায়। ওরকম কোনো গল্প বা ঘটনা আমার জানা নেই। কারও কাছ থেকে ধার করতে হবে রহস্যময় কোনো কাহিনী। অফিসে, আড্ডায় ওত পেতে থাকি কিছু খুঁজে পাই কিনা। পুরোপুরি রহস্যময় না হোক, গোয়েন্দা অভিযান কিংবা অপহরণ বিষয়ক গল্প হলেও চালিয়ে নেব। কারও সঙ্গে কথা হলেও বিষয়টি টেনে আনি কিন্তু হয় না। অবিরাম ভাবতে থাকি। এভাবে দিন কয়েক কেটে যায়। সম্পাদক তাড়া দেয়। দুই দিন পরপরই ফোন করে বলে, ‘মনে আছে তো?’
‘আমাকে দিয়ে ভূতের গল্প হবে না। অন্য কিছু লিখি?’
‘না, ভূতের গল্প লিখতেই হবে। আমরা একটা বিশেষ সংখ্যা বের করতে যাচ্ছি। আপনার গল্পটা প্রথম দিকেই থাকবে।’
এ কথা শুনে আমি উৎসাহিত না হয়ে আরও ভড়কে যাই। সম্পাদকের অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে গিয়ে মনস্থির করি, এবার একটা ভুতের গল্প আমি লিখবোই।
প্রতি রাতেই লিখতে বসি। দু’লাইন লিখি তো ছিঁড়ে ফেলি। কাটাকুটি করি। কী লিখি, কী লিখি! ভাবতে গিয়ে ধ্যানী সাধকের মতো দু’চোখ বন্ধ করে বসে থাকি। সুকান্তের মতো গালে হাত দিয়ে কাটিয়ে দিই দিন ও রাতের প্রায় অর্ধেক সময়। শিকারের দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে যেমন করে দেয়ালে কোনো টিকটিকি আর বিলের হাঁটুজলে গভীর খেয়ালে বসে থাকে বক, মাছরাঙ্গা কিংবা গাঙ্চিল- আমিও তেমনি অহর্নিশি বসে থাকি একটা ভুতের গল্পের সন্ধানে। কখনও কখনও বারান্দায় গিয়েও বসে থাকি। রাতের গুটগুটে অন্ধকারে ভূত-প্রেত কিংবা কোনো অশরীরীর ছায়া খুঁজি, গভীর রাতে তাদের দেখা পেলে ভুতের একটা চমৎকার গল্প লেখা যাবে। বাড়ির সামনেই কয়েকটি শেওড়াগাছ আছে। দূর থেকে ভুতুড়ে মনে হয়। সেদিকে এগিয়ে যাই। হঠাৎ শেওড়াগাছের আড়ালে কিছু একটা নড়েচড়ে উঠে। নিশ্চয়ই ভুত-প্রেত হবে। তাকেই তো আমার দরকার। তার কাছ থেকেই গল্পের উপাদান পাওয়া যাবে। কিন্তু আমার ভেতরটা ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠে। ফিরে আসি সেখান থেকে। ‘আমার মতো ভীতুকে দিয়ে কিছুই হবে না’- শৈশবে এ কথাটি মা প্রায় বলতেন। সেটা আরও একবার প্রমাণিত হয়ে যায়। স্ত্রীকে বলি, ‘একটা ভুতের গল্প কীভাবে লিখি, বল তো? আমি তো কোনো দিন ভুত দেখিনি!’
সীমা হেসে বলে, ‘লেখকরা তো কাগজ-কলম নিয়ে বসলেই হয়। একটা শিরোনাম দিয়ে লেখা শুরু করে দাও।’
‘কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলে কল্পনায় কি ওসব লেখা যায়!’
‘কল্পনা ও সাধনাই সাহিত্যের জন্মজঠর। কন্সিনোস আসেন্স নামের বিখ্যাত একজন কবি জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেভিল-এ, থাকতেন মাদ্রিদে। তিনি সমুদ্র নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলেন। পাঠক মহলে সেটা বেশ প্রশংসিত হলে তিনি অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, সমুদ্র নিয়ে লেখা কবিতাটি সুন্দরই, কোনো একদিন হয়তো সমুদ্র দেখার সৌভাগ্য হবে...।’ তাঁর কথা থেকে বোঝা যায় তিনি কোনোদিন সমুদ্র দেখেন নি। আর না দেখেই কল্পনায় সমুদ্র নিয়ে তিনি অনুপম একটি কবিতা লিখেছিলেন। লেখকের কাজ গভীরভাবে চিন্তা করে অবিরাম লিখে যাওয়া। এভাবেই চিন্তা-চেতনা এক ধরনের স্বতঃস্ফূর্ততা অর্জন করবে, তোমার লেখকস্বত্বা প্রসন্ন হয়ে নেমে আসবে। এ জন্য তোমাকে সময় ব্যয় করে সাধনা করতে হবে আর অবশ্যই করতে হবে পরিশ্রম। পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে সৃষ্টি হতে পারে ভালো কিছু সাহিত্যকর্ম।’ চোখে পরা সাদা ফ্রেমের চশমাটিকে একবার হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে ওপরে ঠেলে দার্শনিকের মতো করে কথাগুলো বলছিল সীমা। সত্যিই কথাগুলো যখন সে বলছিল তখন দার্শনিকের মতোই দেখাচ্ছিল তাকে। আমার লেখার ঘরে বুকস্লেফজুড়ে তাকে তাকে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, জীবনানন্দ-সুনীল, কার্লমার্কস-শেলী, শেক্সপিয়ার-কন্সিনোস আসেন্স, মিল্টন-রোঁমারোলাদের বসবাস। বুঝতে পারি, ওসব ব্যক্তিদের লেখা মোটা বইগুলো পড়ে পড়ে আমার স্ত্রী বেশ সাহিত্যজ্ঞানী হয়ে উঠেছে। আমিও স্ত্রীর অমন কথায় উৎসাহিত হয়ে লেখা শুরু করে দিই। লেখার টেবিলে বসেই দেয়ালের গায়ে বৃষ্টির জলে ভিজে স্যাঁতে স্যাঁতে হয়ে ফুটে উঠা সেই ছবিটা আবিস্কার করি। তারপর রাত জেগে একনাগাড়ে লিখে মাত্র আধা ঘণ্টা আগে আমি এ গল্পটা শেষ করেছি...।
...আর এটাই এ ঘটনার তৃতীয় বিশেষত্ব!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন