রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বসবাস অযোগ্য যাত্রাবাড়ী

রাস্তা ও ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনায় সীমাহীন ভোগান্তি : দখল চাঁদাবাজি ও মাদকের আগ্রাসন

| প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : রাস্তা হয়েছে খাল। ৮ মাস ধরে রাস্তা বন্ধ করে চলছে ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ। ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি জমে আছে রাস্তায় রাস্তায়। মহাসড়ক সংযুক্ত সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। উপরে হানিফ ফ্লাইওভারের অনিয়মেও অতিষ্ঠ মানুষজন। তার উপর সরকারী দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে দখলদারিত্ব আর চাঁদাবাজিতো আছেই। পাড়া-মহল্লায় ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ মাদকের ছড়াছড়ি। সব মিলে রাজধানীর ব্যস্ততম যাত্রাবাড়ী এলাকা ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫০ নং ওয়ার্ডের অধীন যাত্রাবাড়ী এলাকাসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মানুষ সীমাহীন কষ্টে জীবন যাপন করছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ কষ্ট দেখার যেনো কেউ নেই। যাত্রাবাড়ীর পাশ্ববর্তী কুতুবখালী, কাজলা, দনিয়া, রায়েরবাগ, মুরাদপুর, ধোলাইপাড় এলাকার লাখ লাখ মানুষ ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনা ও রাস্তাঘাট সঙ্কটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ইনকিলাবকে বলেন, রাস্তাঘাটের দুরাবস্থা নিয়ে মানুষ অনেক কষ্টে আছে। পাড়া মহল্লায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে আবার জামাই আদর করে ছেড়ে দেয়। এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব নির্মুল করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।  
সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচ থেকে কুতুবখালী পানির পাম্প পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তাটি যেন এখন একটি খাল। সংস্কারের নামে যাত্রাবাড়ী এলাকার পয়ঃনিষ্কাশনের ময়লা পানি আটকে রাস্তাটির এ অবস্থা হয়েছে। এছাড়া যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তর কাজলা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা উঁচু-নিচু, ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ড্রেনেজ না থাকায় সারা বছরই ময়লাযুক্ত দুর্গন্ধময় পানিতে রাস্তাটি ডুবে থাকে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় কোমর পানি জমে অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। পথচারীরা নাক ও মুখ বন্ধ করেই এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। বিশাল এলাকাজুড়ে এহেন বেহাল দশা হলেও দেখার যেন কেউ নেই। এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে সিলেট, নরসিংদী, মাধবদী, রূপগঞ্জসহ অন্তত ২০ টি রাস্তার দূরপাল্লার শত শত যানবাহন। এছাড়াও ডেমরা, কোনাপাড়া, স্টাফ কোয়ার্টার, সারুলিয়া, কাঁচপুর এলাকার বাস, সিএনজি অটোরিকশা, লেগুনা, রিকশাসহ শত শত যানবাহন চলাচল করে। আর খানাখন্দ ও কর্দমাক্ত রাস্তায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ডেমরার রাস্তার এমন বেহাল দশার কারণে এ রুটে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার হওয়ার পরও যানজট কমেনি। সব সময় যানজট লেগেই থাকে। অন্যদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেনের জাতীয় মহাসড়কে কাজলা থেকে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে দুই পাশের সড়ক একদিকে সরু অপরদিকে রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে সিএনজি স্ট্যান্ড ও দোকানপাট। এসব স্ট্যান্ড ও দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলে যুবলীগের এক নেতা।  কাজলা-যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ এলাকার বেহাল রাস্তার কারণে রাজধানী ঢাকা থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, কক্সবাজার, বৃহত্তর সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, মুন্সীগঞ্জসহ দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে চলাচলকারী যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ৮ লেনের মহাসড়ক দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে অথবা ঢাকা থেকে বের হতে ব্যস্ত এ সড়কের পাশে রয়েছে ঢাকার বৃহত্তম যাত্রাবাড়ী কাঁচামাল, মাছ ও ফলের আড়ত। এই আড়ত ঘেঁষে রাস্তাটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। পাশেই ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে কোনোমতে গাড়ি চলাচল করে। আড়তের নোংরা আবর্জনা আর দুর্গন্ধে পুরো এলাকায় বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অপর পাশের রাস্তাটিরও বেহাল দশা। ৮ লেন মহাসড়কের নীচেই কুতুবখালী থেকে শনিরআখড়া পর্যন্ত ড্রেন তৈরীর কাজ চলছে ৬ মাস ধরে। এ কারনে মহাসড়কের সাথে দনিয়া, শনিরআখড়া, গোবিন্দপুর, রসুলপুরসহ আশপাশের এলাকার সমস্ত রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতে করে জরুরী প্রয়োজনেও দনিয়া এলাকার বাসিন্দাদের ধোলাইপাড় হয়ে প্রধান সড়কে উঠতে হয়। ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও প্রশাসনিকভাবে সমাধানের কোনো উদ্যেগ নেয়া হয় নি। দনিয়া এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় ৭ লক্ষ মানুষের বাস এই এলাকায়। অথচ এলাকা থেকে বের হওয়ার রাস্তা নেই বললেই চলে। একটুখানি বৃষ্টিতে সব রাস্তা তলিয়ে যায়। ড্রেনের ময়লা উপচে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে এই এলাকা। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং এমপি মনোনয়ণ প্রত্যাশী সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার কাজী মনিরুল ইসলাম মনু বলেন, আমি গত রোববার রাতে দক্ষিণ সিটি মেয়রের সাথে দেখা করে রাস্তার সমস্যা সমাধানের জন্য অনুরোধ করেছি। মেয়র বলেছেন, বৃষ্টির কারণে কাজ সময়মতো করা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ নেতা মনু বলেন, আমি মানুষের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে মেয়রকে সাঈদ খোকনের কাছে অনুরোধ করেছি যাতে পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে হলেও দ্রæত রাস্তা ও ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ করা হয়।  
দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি
যাত্রাবাড়ী এলাকার বড় সমস্যা চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব। কয়েক দিন আগেও আ¯্রাফ উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছিলেন তার জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে স্থানীয় এক  যুবলীগ নেতা। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসারও অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ ওই যুবলীগ নেতার পক্ষে কাজ করে বলে অনেক উদাহরণ রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, শ্রমিক লীগ নেতা বাচ্চু খন্দকার ও দিদার মিলে যাত্রাবাড়ী বিআরটিসির জমি দখল করে রেখেছে। আশরাফ উদ্দিন আশু নামে আরেক নেতা সিটি কর্পোরেশনের জমি দখল করে বাজার বসিয়েছে।  কাউয়া খালেক ও সোহরাব মিলে লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে চাঁদাবাজি করছে বহুদিন ধরে। শুধু তাই নয়, এরা চোরাই গাড়ি কেটে লেগুনা বানিয়ে যাত্রাবাড়ী- ডেমরা রুটে ব্যবসা করছে। অনেকেরই অভিযোগ, স্থানীয় এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার নাম ভাঙ্গিয়ে বাচ্চু খন্দকার যাত্রাবাড়ীতে এখন দখল ও চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করতে বসেছে। বাচ্চু বাহিনীর অত্যাচারে লেগুনাসহ পরিবহন ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এক সময়ের ফ্রিডম পার্টির নেতা বাচ্চু রাতারাতি শ্রমিক লীগের নেতা সেজে চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করে ফেলেছে। এসব নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও ক্ষুদ্ধ। থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে, এমপিকে ডুবানোর জন্য এক বাচ্চুই যথেষ্ঠ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন