শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

কবিতার সঙ্গে

| প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলা ভাষার প্রধান কবি আল মাহমুদের জন্ম ১১ জুলাই ১৯৩৬। আগামি শুক্রবার তার উপর বের হবে ইনকিলাব সাহিত্য

সা ই ফু দ্দি ন সা ই ফু ল
কালে কালে কবিতা চেতনায় মননে ভাবে কল্পনায় রঙে ঢঙে ও রসে করে টলমল। আর তখন ক্লান্ত দু’চোখ আটকে যায় কবিতা’র দৃষ্টিকাড়া অপরূপ অনূপম অতুলনীয় সৌন্দর্য্যরে দিকে অপলক অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে। এবং এভাবেই কবিতা দিনে দিনে পরিপূর্ণরূপে নিজে একদিন আত্মপ্রকাশ করে। এইতো সেদিন কবিতাকে দেখে এই মনটা একদম ভরে ওঠেনি, আর তাই কয়েকদিন ধরে কাল অতিবাহিত করে এক মনে এক ধ্যানে দেহ-প্রাণ দিয়ে কবিতা’র দেখভাল করেছি। শুধু তাই নয়, কবিতাকে একদম পরিপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে কি কি মাধ্যম দরকার কোন কোন বিষয় প্রয়োজনীয় সেসব একেএকে সংগ্রহ করে আমার পছন্দের কবিতাকে তৈরি করেছি, শিল্পের রঙে রাঙিয়ে মনের মতো সাজিয়েছি। তারপর একটা সময়ে নির্মাণ করেছি কবিতা’র অবকাঠামো, পাশাপাশি একটা একটা শব্দে গেথেছি কবিতা’র মূর্ত-বিমূর্তকে। আর সৃষ্টি করেছি কবিতা’র ঘর-সংসার। এবং কবিতা’র সাথে গড়ে তুলেছি প্রীতিসম্পর্কের বন্ধন। চলার পথে এই প্রীতিসম্পর্কের সাথে কখনো ভুল বুঝা বুঝি হয়নি। সন্দেহ এসে বাসা বাধেনি মনের ঘরে, আত্মবিশ্বাসে আমার কবিতাকে এই জন্যে মায়াবতীরূপে আপনমনে আপনমন্দিরে শৈল্পিক প্রতিমা করে নির্মাণ করেছি।
আমার প্রিয় যতো পছন্দের তালিকায় কবিতা সব চাইতে আগে এবং অন্যতম। আমার কবিতা’র সাথে প্রেম গভীর মধুর ও অন্তরঙ্গ। এখানে নেই কোনো স্বার্থ, নেই কোনো দ্বন্দ, আছে শুধু ভালোবাসা; আর তাই ভাবে ছন্দে চিত্রকল্পে ও রূপে রসে কবিতাকে আপন করে নিয়েছি। এই জন্যে কবিতা’র পাশাপাশি অন্যকিছুকে দাড় করাতে পারিনে। কেননা, কবিতা’র জন্যে বেঁচে আছি, কবিতা’র জন্যে নিঃশ্বাস নিই, কবিতা’র জন্যে চিন্তা করি ভাবি, কবিতা’র জন্যে যতো শিল্পকলা ছন্দ রস বোধ চেতনা উপলব্ধি মানসিকতা এবং কবিতা’র জন্যে কালি-কলম হাজার হাজার শব্দ আর ভাব বোধ একত্রে মিলনে অন্তরঙ্গ গভীর বিশ্বাস গড়ে তুলেছি। আর এ বিশ্বাস থেকেই কবিতাকে অনেক অনেক ভালোবেসে ভালোবাসার রাজপ্রাসাদ গড়েছি। এছাড়া কোনো কিছুর বিনিময়ে কবিতা’র পাশে অন্য কোনো কিছুকে এতোটুক স্থান দিতে রাজি নই আমি। এবং তা কখনো জেনে বুঝে দিই-ও না। তবে যে কথাটি একেবারে না বললেই নয়, সেটি এই যে, কবিতা’র সহিত এতোটা দিন ঘর-সংসার অর্থাত এক সাথে থাকার পরেও কবিতাকে এখনো পর্যন্ত ভালো করে চিনতে জানতে পারিনি, এমনকি কবিতা আসলে কি কি তার চাওয়া পাওয়া সেটাও একান্তে বুঝতে-ও পারিনে। অথচ কবিতাকে জানার জন্যে চেনার জন্যে এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে এলাম তবুও কবিতা যেনো অধরা থেকে যায়। যদিও কবিতা’র পিছু ছাড়িনে। হয়তো এটাই কবিতা’র প্রতি দূর্বলতা নয়তো অন্য কিছু। এই অদৃশ্য অন্য কিছুর সাথেই নিজেকে বেধেছি পরম ভালোবাসার ঘর। আর কবিতা’র মন্দিরে মায়াবতীকে দেবির আসনে বসিয়ে ভক্তিসহকারে নিত্য পূজা করি। কবিতা’র চরণে নৈবদ্য দিই। এভাবে কবিতাকে দিনে দিনে করে তুলেছি মায়াবতীর আদলে মনকাড়া আপন নমস্য প্রতিমা।
মোদ্দাকথা, প্রিয় কবিতা’র সাথে এই দীর্ঘকাল ঘর-সংসার করার পরেও মাঝে মাঝে কেনো জানি মনে হয় কবিতা যেনো বড্ড অধরা অচেনা ও কঠিন থেকে কঠিনতর। কেনো যে এমন হয়! কবিতাই ঢের বলতে পারে। আসলে কবিতা ধরা দিয়েও ধরা দেয় না, কবিতাকে ছুতে যেয়ে-ও ছুতে পারিনে। তবুও কবিতাকে ভালোবেসে প্রেম করে বন্ধুর মতো আগলে রেখেছি প্রতিক্ষণে প্রতিপলে। এতোটুকু কবিতাকে বিচ্ছিন্ন হতে দিইনি কিংবা দিই না। কবিতার’ সাথে এই ঘর-সংসার করতে করতে জানি যেদিন আর এই ধরাধামে থাকবো না, না ফেরার দেশে হারিয়ে যাবো; সেদিন শুধু কবিতা বেঁচে থাকবে এবং কবিতা’র সাথে আত্মার ভাবের ও মনের যে সম্পর্কটি জীবনকালে ছিলো প্রিয় কবিতা সেটারই অস্তিত্ব জানান দেবে কালে কালে ও যুগে যুগে। আর এই জন্যে কবিতা’র ভেতরে একটু অন্যরকম ভালোলাগা ভালোবাসার আনন্দ উচ্ছাস সুখ খুঁজে পাই। এই সুখে আনন্দে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে হিমালয় পর্বত পেরিয়ে সাহারার খোলা বুকে দৌড়িয়ে মাতাল বাতাসের ন্যায় অনেক অনেক ছুটে কোনো এক অচেনা অজানা নান্দনিকময় কাব্যনগরে সতত হারিয়ে যাই।
এই যখন কবিতা’র
সাথে
যাপিত
জীবনের
নিত্য
দিনের
মিলন
তখন
আবার কখনো কখনো ভিন্ন দেশের ভাষা-শব্দে গাথা উর্বশী কবিতা হুড়মুড় করে এসে মনের চিন্তার ভাবনার কল্পনার রাজ্যে আপনার ঘরটিকে মনমাতানো রঙিন আলোতে আলোকিত করে দেয়। তবুও দূর দেশের কবিতা হলে-ও তাকে নির্দ্ধিধায় আপন করে নিই। কারণ, ভিন দেশের ভাষার কবিতা’র নতুন রূপে নতুন রসে নতুন ছন্দে নতুন গন্ধে নতুন রঙে নতুন ভাবে নতুন সৌন্দর্য্যে এবং মিষ্টি-মধুর একান্তে স্পর্শে এক অন্যরকম যাদুতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। কিন্তু নিজেকে সেই কবিতা’র প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খেতে খেতে দিশেহারা উন্মাদের মতো পাগল হইনা। এভাবেই কবিতা দেহ-মন চিন্তা-চেতনা ভাব ও ইচ্ছেকে শিল্পময় গহীন অতলে ক্রমশঃ নিয়ে যায়। আর হারিয়ে যাই অন্য এক পরিমাটি করে সাজানো যৌবনবতী সবুজ অরণ্যে। কবিতা’র গহীনে খুজে পাই অনেক অনেক অমূল্য ধন-সম্পদ । কবিতাকে করে তুলি আকাশ ছোয়া অট্রালিকা ও বহতা নদীর মতো। রাতের তারা জ্যোৎ¯œা আকাশের বুকে রঙধনু ভোরের শিশির পাখির কিচির মিচির ডাক নদীর মাতাল করা ঢেউ দোয়েল কোয়েলের সমুধুর সুরে গান আর দূর নীলাকাশের বুকে কালোমেঘ সবকিছু কবিতাকে করে তোলে আরো সুন্দর ও শিল্পময় । বারংবার কবিতা’র রূপে মুগ্ধ হই কবিতা’র প্রেমে পড়ে যাই এবং কবিতার মধ্যে খুজে ফিরি আপন সত্ত¡ার ঠিকানা।
পরিশেষে জানি যে, কবিতা’র শক্তি অপার শক্তি, কবিতা’র আবেদন যুগের ও সমকালের এবং কবিতা’র আধুনিকতা বর্তমান রঙে ঢঙে আঁকা। চিত্রকল্পই কবিতা’র সৃষ্টির মূল রহস্য। এখানেই কবিতা লুকিয়ে থাকে। যার ফলে একমাত্র কবিতাই পারে মনকে চেতনাকে ভাবকে বিশ্বাসকে শাণিত করতে। তাই দেখি যে, কবিতা যান্ত্রিক জীবন সমাজ রাজনীতি অর্থনীতি ও শাসন পরিবর্তনেরও দৃঢ় কন্ঠে কথা বলে। পাশাপাশি কবিতা রাজনৈতিক সচেতনতায় ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির চেতনা লালন-পালন ধারণ করে। কবিতা’র পরশে এই পৃথিবী সুন্দর ও মানুষের পৃথিবী হয়ে উঠতে পারে এতে মোটেই সন্দেহ নেই। শুধু কি তাই! কবিতা কখনো কখনো অসম্ভব দ্রোহের আগুনে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। যেটা সত্য ন্যায় নিরপেক্ষ অথচ অন্যের কাছে গ্রহনীয় নয় সেই সত্য ন্যায় নিরপেক্ষতার পক্ষে কথা বলতে কবিতা দ্বিধাবোধ করেনা। আমার একটি জোয়ার-ভাটা নদী আছে, আছে একটি অপরূপ নীলাকাশ, আর আছে আলাদা একটা রঙধনু। এই নদীতে নীলাকাশে এবং রঙধনুর রঙে কবিতাকে সাথি করে মুক্ত বলাকার মতো সাঁতার কাটি। আমি আর কবিতা হয়ে উঠি দুই নদীর মোহনার মতো।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন