কালীপদ দাস
পূর্বে প্রকাশিতের পর
এখানকার বানরেরা মানুষের কোনও ক্ষতি করে না। সেখান থেকে যান তুলসী মানস মন্দির। বড় শান্ত পরিবেশ । এখানকার শ্বেত পাথরের চাতালে বসে কিছু সময় কাটাতে পারেন। এবারে যান সঙ্কট মোচন মন্দির। এটি হনুমান বা ল্যাংড়া বাবার মন্দিরও বলা হয়। স্থানীয় মতে এখানকার হনুমানজী নাকি খুবই জাগ্রত। তাছাড়া এখানকার প্যাড়াও খুব বিখ্যাত। আসার দিন এক ফাঁকে গিয়ে বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনের জন্য এক-দু’ কেজি প্যাড়া কিনে আনতে ভুলবেন না। তবে ভুলেও কিন্তু অন্য কোথাও থেকে প্যাড়া কিনতে যাবেন না। দেখার আছে ভারতমাতা মন্দিরও। ওটা অন্য কোনও দিন, কোনও ফাঁকে দেখে নেবেন।
এবারে ওখান থেকে সোজা ফিরে যান দশাশ্বমেধ ঘাট। সন্ধ্যের সময় ঘাটের ধারে অপূর্ব সন্ধ্যারতি দেখে জীবন ধন্য করুন। এই সন্ধ্যারতি রোজই হয় বলে যে ভিড় কম হয়, তা কিন্তু নয়। তাই একটু আগে-ভাগে গিয়ে জায়গা নিয়ে বসে পড়বেন। প্রথম দিনটা এটুকুই যথেষ্ট।
দ্বিতীয় দিন একটু ভোর-ভোর উঠে পড়–ন। চেষ্টা করবেন ৫টা, সাড়ে ৫টা নাগাদ বেরিয়ে পড়তে। এবার রিক্সা বা অটো রিক্সা নিয়ে সোজা চলে যান দশাশ্বমেধ ঘাট। সেখান-থেকে একটা নৌকা (মোটর দেওয়া নয়, দাঁড় টানা) নিয়ে চলে যান অসি ঘাট আবার সেই নৌকাতেই ফিরে আসুন দশাশ্বমেধ ঘাটে। এই জলপথে আপনারা দেখবেন অহল্যা বাঈ ঘাট, অস্সি ঘাট, দ্বারভাঙ্গা ঘাট, দশাশ্বমেধ ঘাট, দিগপতিয়া গাট, গঙ্গা মহল ঘাট, হরিশ্চন্দ্র ঘাট, চেত সিংহ ঘাট, জৈন ঘাট, মণিকর্ণিকা ঘাট, মান মন্দিওর ঘাট, মান সরোবর ঘাট, নারদ ঘাট, পান্ডে ঘাট, রাজা ঘাট, রাজেন্দ্রপ্রসাদ ঘাট, সিন্ধিয়া ঘাট, শিবালা ঘাট, ত্রিপুরা ভৈরবী ঘাট, বিজয়নাগরাম ঘাট, চৌকী ঘাট, চৌসাথী ঘাট, কেদার ঘাট, ললিতা ঘাট, পঞ্চগঙ্গা ঘাট, আদি কেশব ঘাট, তুলসী ঘাট, ইত্যাদি। মাঝিকে বলবেন যাত্রার শুরু বা শেষটা যেন করে অস্সি ঘাটে। যে দিন ভোরে নৌকা নিয়ে ঘুরতে যাবেন তার আগের দিনই নৌকাটা ভাড়া করে নেবেন। মাঝি নৌকা নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করবে। ঘাট ঘোরার জন্য সাধারণত ওরা ৩০০-৩৫০ টাকা নেয়। তবে উৎসবের সময় ভাড়ার কোনও ঠিক থাকে না।
৩.
ঘাট থেকে ঘরে ফিরে এসে স্নান সেরে সকাল ৯টা নাগাদ চলে যান বিশ্বনাথ মন্দির দর্শনে। যাওয়ার সময় অবশ্যই মনে রাখবেন, ক্যামেরা, সোনার গহনা, চামড়ার ব্যাগ, চামড়ার বেল্ট, চামড়ার মানি ব্যাগ এবং বেশি টাকা-পয়সা (পুজো দেওয়ার মতো টাকা বাদে) সঙ্গে নেবেন না। চামড়ার কোনও জিনিস মন্দিরের ভেতরে নেওয়ার অনুমতি নেই। ওখানে কোনও পান্ডা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ফুল-মিষ্টি নিয়ে নিজেরাই বিশ্বনাথকে নিবেদন করুন। ওখানে পুরোহিত থাকে, অসুবিধা হবে না। বাবা বিশ্বনাথ বরং এতেই বেশি খুশি হবেন। মন্দিরে ঢোকার সময় সব ফুল-প্রসাদের দোকানেই বলবে “আসুন, এখানে জুতো খুলে রাখুন”। কিন্তু আপনারা আরও এগিয়ে মন্দির পর্যন্ত যাবেন এবং সেখানকার কোনও ফুল-মিষ্টির দোকান থেকে পুজোর দ্রব্যাদি কিনে নেবেন। ঐ দোকানেই আপনারা আপনাদের জুতোও খুলে রাখতে পারবেন। তাই খালি পায়ে যাওয়ার দরকার নেই।
সেদিনই ফিরে এসে খাওয়া-দাওয়া সেরে দুপুরের পর ৩টা নাগাদ চলে যান গঙ্গার ওপারে রামনগর। শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এই রামনগর। এই রামনগরে গঙ্গার ধারে দেখবেন কাশী নরেশের সুরম্য প্রসাদ, বিখ্যাত মিউজিয়ম ও ব্যাসদেবের মন্দির । চুনারের বিখ্যাত লাল বেলেপাথর দিয়ে কাশি নরেশ মহারাজা বলবন্ত সিংহ অষ্টাদশ শতাব্দিতে এই প্রাসাদ নির্মাণ করান। এখানে উঁচু প্রাচীর দেওয়া কেল্লার ভেতরেই আছে মহাভারত প্রণেতা বেদব্যাসের মন্দির। মন্দিরে বেদব্যাসের একটি মূর্তিও আছে। মনে করা হয় ব্যাসদেব নাকি এখানে কিছু কাল বাস করেছিলেন। ব্যাস মন্দির নামে এটি বিখ্যাত। এই মন্দিরটি তাকেই উৎসর্গ করা হয়েছে। মিউজিয়মে দেখতে পাবেন পুরনো আমলের প্রচুর বন্দুক, ভিনসেন্ট কার, নানা ধরনের পালকি, রতœ খচিত হাওদা, গোস্বামী তুলসী দাসের নিজের হাতের লেখা পান্ডুলিপি, মূল্যবান মণি-মুক্তো খচিত পোষাক-আশাক, কেরামতি ঘড়ি ইত্যাদি। এখানে আরও একটি বড় ঘড়ি আছে দেখার মত। ঘড়িটি শুধু যে সময়, বছর, মাস, সপ্তাহ ইত্যাদি দেখায় তাই-ই নয়, আকাশের সূর্য, তারা ও গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানও নিপুণ ভাবে দর্শায়। রামনগরের লস্সি কিন্তু খুব বিখ্যাত, ফেরার সময় খেয়ে দেখতে পারেন। সেখান থেকে ফিরে এসে খানিক বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যেয় যথারীতি চলে যান ঘাটের ধারে সন্ধ্যারতি দেখতে। সন্ধ্যেটা দিব্যি কেটে যাবে। তবে বিশ্বনাথের মন্দির ঘুরে এসে এদিন যদি রামনগর যেতে ইচ্ছে না করে তবে পরদিন বা অন্যদিনও যেতে পারেন।
তৃতীয় দিন সকাল সকাল বেরিয়ে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে সারনাথ ঘুরে আসুন। এখানে দেখবেন সারনাথ স্তূপ বা চৌখান্ডি স্তূপ এবং ধামেক স্তূপ। এখানকার মিউজিয়মও সারা ভারতে বিখ্যাত। বুদ্ধের বিভিন্ন মূর্তি ও বুদ্ধের নানা স্মৃতি বিজড়িত অনেক কিছুই এখানে দেখার আছে। সঙ্গে করে শুকনো খাবার নিয়ে গেলে এখানকার মনোরম পরিবেশে বসে দুপুরের খাওয়াটা সেরে নিতে পারেন। তবে হ্যাঁ, একটা কথা মনে রাখবেন, প্রতি শুক্রবার কিন্তু মিউজিয়ম বন্ধ থাকে। তাই শুক্রবারের কথাটা মাথায় রেখে সারনাথের প্রোগ্রাম করবেন। বাকি দিনগুলো খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এদিনটা শুধু সারনাথের জন্যই রাখুন।
চতুর্থ দিনটা সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিন। কিছু কেনাকাটা করার থাকলে এদিন করে নিতে পারেন। তবে মনে রাখবেন এখানে কোনও কিছুই কিন্তু সস্তা নয়। তবু কিছু কিনলে ভাল করে দরদাম করে তবেই কিনবেন। বারাণসীর গলি যেমন বিখ্যাত, বারাণসীর ষাঁড় যেমন বিখ্যাত, বারাণসীর বেলেপাথরের মূর্তি ও পাত্র যেমন বিখ্যাত, বারাণসীর ঘাট যেমন বিখ্যাত, বারাণসীর ঘাটের সিঁড়ি যেমন বিখ্যাত, বারাণসীর রেশম শাড়ি যেমন বিখ্যাত, বারাণসীর মীর্জাপুর জেলার হাতে তৈরি কার্পেট যেমন বিখ্যাত, বারাণসীর চোর-বাটপার-ঠকও তেমন বিখ্যাত। আর হ্যাঁ, এদিন বিকেলের দিকে বেরিয়ে আরও
৪.
একটা কাজ করবেন, একটু দরদাম করে বড় অটোগুলো একটা ভাড়া করে রাখবেন পরের দিন চুনার ও বিন্ধ্যাচল যাওয়ার জন্য।
পঞ্চম দিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়–ন বিন্ধ্যাচলের উদ্দেশ্যে। বারাণসী থেকে বিন্ধ্যাচলের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। যাওয়ার পথেই পড়বে চুনার ফোর্ট বা কেল্লা। চুনার ফোর্টের দূরত্ব বারাণসী থেকে ৪৫ কিলোমিটার মত। এই দুর্গের গঠন-শৈলী দেখার মত। বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই চুনার ফোর্ট বা কেল্লা। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন