অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোবাইল অ্যাপস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, অ্যাপসটি চালু হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের জন্য ব্রোকারেজ হাউজ বা মতিঝিলে আসতে হবে না। তারা মোবাইলের মাধ্যমে যে কোনো প্রান্ত থেকে লেনদেন করতে পারবে। এতে মতিঝিলে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কমে আসবে। বিনিয়োগকারীদের সমাবেশ ও বিক্ষোভও কমে যাবে। ডিএসইর মোবাইল লেনদেন চালুর কারণে ভবিষ্যতে শেযারবাজার চাঙ্গা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
গতকাল বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোবাইল লেনদেন কার্যক্রম ‘ডিএসই-মোবাইল’ উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ২০১০ সাল থেকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও আশানুরুপ চাঞ্চল্য ফেরেনি। বর্তমানে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত যেসব বিধি-বিধান রয়েছে তা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অতি উত্তম। এসব বিধি বিধান পরিপালন নিশ্চিত করা হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। তিনি আরো বলেন, আমি ১৯৬৯ সালে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে পাকিস্তানি সরকারের ষড়যন্ত্রের কারণে ৩৩ হাজার টাকা লোকসান করেছি। এরপর আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ১৯৯৬ সালের ধসের কারণে আর বিনিয়োগ করিনি।
ডিএসই মোবাইল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, ডিমিউচ্যুয়ালাইজড করার অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল স্টক এক্সচেঞ্জের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা। ডিএসইর মোবাইল আ্যপস এই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। এতে লেনদেন সহজ ও নিরাপদ হবে। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও অংশগ্রহন বাড়বে।
তিনি বলেন, পূর্বে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক কারিগরি জটিলতার সম্মুখীন হয়েছি। এটি ব্যবহারে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষন প্রদান করেছি। যাতে কারিগরি জটিলতার সম্মুখিন হতে না হয়। তিনি আরও বলেন, মোবাইল লেনদেনে বিনিয়োগকারিরা যে দুটি ভারসন ব্যবহার করতে পারবেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে ডিএসই মোবাইল ভিআইপি। এটি দিয়ে সরাসরি ট্রেড করা যাবে না। বিনিয়োগকারি মোবাইলে শুধু তার পোর্টফোলিও দেখতে পারবে। অন্যটি হচ্ছে ডিএসই-মোবাইল ট্রেডার। এই ভারসন ব্যবহার করে বিনিয়োগকারি নিজে ট্রেড করতে পারবেন।
তবে কোন বিনিয়োগকারি বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে ট্রেড অফার করলে ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেডার সেই আদেশ বাতিল করতে পারবেন। কিন্তু বাজার দরে আদেশ দিলে তা বাতিল করার ক্ষমতা ট্রেডারের কাছে থাকবে না। মোবাইল এ্যাপসটি একটানা ১০ মিনিট ব্যবহার না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগআউট হয়ে যাবে। শেয়ার কেনা-বেচার ক্ষেত্রে প্রতিবার আদেশ দেয়ার সময় নতুন করে পাসওয়ার্ড দিতে হবে।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর খায়রুল হোসেন বলেছের, ডিএসই’র অ্যাপসটি উদ্বোধনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার, লেনদেনের পরিমাণসহ শেয়ারবাজারের বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। এতে করে বাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ব্রোকারেজ হাউজের শাখা খোলার যে দাবি ছিল তা পূরণ হবে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালের ধসের পর আইনের অনেক সংস্কার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার সবগুলো বাস্তবায়ন হলে বাজার আরো স্থিতিশীল হতো।
আইপিও অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএসইসি আইন মেনে আইপিও অনুমোদন দিচ্ছে। আইপিও অনুমোদনে এখন পর্যন্ত আইনের কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটেনি। তারপরও অনেকে আইপিওতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার মূল্য নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। এসব তথ্যে কোম্পানির ঘোষিত বোনাস লভ্যাংশ আমলে নিচ্ছে না। ফলে বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হয়ে বাজারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন। তাই বিনিয়োগকারীদের এসব গুজবে কান না দিয়ে জেনে বুঝে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ডিএসইর পরিচালক ওয়ালিউল ইসলাম, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্টোক হোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন