বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

নেদারল্যান্ডসকে পেলে এমনই চাঙ্গা থাকেন তামীম

প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী, ধর্মশালা (ভারত) থেকে: নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আইসিসি ট্রফিতে চাচা আকরাম খানের ম্যাচ উইনিং ফিফটির ইনিংসটি দেখেননি তামীম। বাঁ-হাতি এই ওপেনারের বয়স তখন স্পর্শ করেনি ৮ বছর। সবেমাত্র ক্রিকেটে হাতেখড়ি ভাতিজার। ’৯৭-এর আইসিসি ট্রফিতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আকরাম খানের ওই ইনিংসেই বিশ্বকাপে খেলার পথটা হয়েছে সুগম হয়েছে বাংলাদেশের, তা জেনেছেন তামীম। এবং ওই ঘটনায় চাচা আকরাম খানকে নিয়ে একটু বেশিই গর্ব অনুভব করেন তামীম। চাচা’র রক্ত যে শিরা-উপশিরায় ভালই প্রবাহিত হচ্ছে, প্রতিপক্ষ হিসেবে নেদারল্যান্ডসকে পেলে তা জানিয়ে দিতে চান তামীম ইকবাল। সংক্ষিপ্ত ভার্সনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটাই যেনো বার বার জানিয়ে দিচ্ছেন তামীম। টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটির জন্য তামীমের মতো আক্রমনাত্মক ব্যাটসম্যানকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০তম ইনিংস পর্যন্ত। নেদারল্যান্ডসকে পেয়েই হয়েছে সে অপেক্ষার অবসান। ২০১২ সালের জুলাইয়ে ডেন হেগ এ ৫৩ বলে ৬৯ রানের ওই ইনিংস থেকেই পেয়েছেন তামীম দারুন এক টনিক। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গতকাল তামীমের ফিফটিটি ( ৮৩ নট আউট) আবার উপর্যুপরি তৃতীয়। তার চেয়েও বড় কথা, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ইনিংসের তিনটিকেই ফিফটিতে পরিনত করে ছেড়েছেন তামীম!! ২০১২ সালে নেদারল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৬৯ নট আউট ও ৫০ নট আউট, চলমান টি-২০ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে করেছেন ৮৩ নট আউট। টি-২০ ক্যারিয়ারের ৪ ফিফটি তিনটিতেই প্রতিপক্ষ হিসেবে তামীম বেছে নিয়েছেন নেদার‌্যান্ডসকে। টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইতোপূর্বে নিজের সেরা ইনিংস ছিল ৩২, ২০০৭ সালেÑঅস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। টি-২০র বিশ্বকাপে প্রথম ১৭টি ইনিংসের একটিতেও নেই ফিফটি, সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে নিজের প্রথম ফিফটিতেও তামীমের প্রতিপক্ষের নাম নেদারল্যান্ডস। বাঁ হাতি স্পিনার ভ্যান দার মারেকে এদিন ভালই বাগে পেয়েছিলেন তামীম। এই ডাচ বোলারের প্রথম ২ ওভারে ছক্কার সৌরভ ছড়িয়েছেন তামীম। প্রথমটি লং অফ এর উপর দিয়ে, পরেরটি লং অন দিয়ে, আর শেষটি লং অনের উপর দিয়ে। সাব্বির রহমান রুম্মানতে নিয়ে ৩২ বলে ৪৮ রানের পার্টনারশিপে দলকে বিপদমুক্ত করতে পেরেছেন তামীম। অন্য প্রান্তে যখন নিয়মিত বিরততে পড়েছে উইকেট, তখন এক প্রান্ত আগলে রেখে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন তামীম। মাত্র ২ দিন বয়সী নবজাতক পুত্রসন্তানকে থাইল্যান্ডে রেখে এসে বিসিবি’র নির্দেশে ঢাকায় পা রেখে খেলতে হয়েছে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ২টি ম্যাচ। ম্যচি দু’টিতে সেভাবে ধরতে পারেননি মেলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ এবং ভারতের বিপক্ষে ১৩’র পর ফর্মে ফিরেছেন এদিন ভালভাবেই। অন্য এন্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ছে বলে অনোন্যপায় হয়ে দায়িত্বটা একাই তুলে নিয়েছিনে কাধেঁ। সেই দায়িত্ববোধই দারুন একটি ইনিংসে দিয়েছে প্রেরনা টি-২০ ব্যাটসম্যানদেও কেউ দায়িত¦ নিয়ে ব্যাট করেনি বল প্রথম বল থেকেই দলের দায়িত্বটা নিয়েছিলেন তামীম। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটিতে লেগেছে তার ৩৬টি বল। সেখানে অবশিস্ট ৩৩ রানের জন্য খেলতে হয়েছে তাকে ২২টি বল। ভ্যান মারউইককে স্কোয়ার লেগ দিয়ে ডাবলের সঙ্গে সঙ্গে টি-২০ বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটি উদযাপনে বন্য উৎসব করেননি তামীম। বরং ইনিংসটি শেষ করে আসারই যেনো পন ছিল। ৪৬ রানের মাথায় মারউইর ইয়র্কারে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হতে হতে বেঁচে যাওয়ার পর তামীমে মেতেছে ধর্মশালা। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজেন বিপক্ষে নিজের সেরা নট আউট ৮৮ রানের ইনিংসটি এখনো বাংলাদেশের সেরা। সেই ইনিংসকে টপকে যাওয়ার হাতছানি ছিল তামীমের। পারেননি তা অন্য এন্ডের ব্যাটসম্যানদের কারো সাপোর্ট না পাওয়ায়। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপে ডাম্বুলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিবের ৮৪ রানের ইনিংসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে থেমেছেন গতকাল তামীম ৮৩ রানে। তামীমের এমন ইনিংসে মুগ্ধ ডাচ অধিনায়ক পিটার বোরেনÑ‘তামীম উইকেটের সঙ্গে দারুন মানিয়ে নিয়েছেন। অনেক পরিনত এক ক্রিকেটার মনে হয়েছে তাকে। যদি অন্য এন্ডে পার্টনারের সাপোর্ট ঠিকঠাক মতো পেতেন,তাহলে সেঞ্চুরি হতো তার।’ সেঞ্চুরির ভাবনার চেয়েও নাকি দলের টোটাল দেড়শ’ পর্যন্ত টেনে নেয়াকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন তামীমÑ‘নিজের সেঞ্চুরি নয়, আমার টার্গেটাই ছিল যেনো আমরা দেড়শ’ করতে পারি। কারন, আমাদের হাতে স্পিনার আছে। তাছাড়া ১৫ তম ওভারে মাহামুদুল্লাহ ভাই এবং মুশফিক ভাই আউট হলে পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে ব্যাট করেছি।’ নিজের টি-২০ ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস,টি-২০ বিশ্বকাপেও ফিফটির অভিষেকে প্রতিপক্ষ ডাচ। সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে ৪ টি ফিফটির ৩টিতেই প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। যে তিনটি ইনিংসে নট আউট আবার ২ ইনিংসে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ইনিংসে রানের সমস্টি ২০২, পুরোটাই এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তামীমের ব্যাটিং গড় ( ২০২.০০)। এমন এক প্রতিপক্ষকে প্রিয় না বলে কি উপায় আছে তামীমের? তবে তামীম চাচা আকরাম খানের ওই ইনিংসের মহাত্মর সঙ্গে অন্য কারো ইনিংসকে তুলনায় আনতে চান নাÑ‘আমি ভেবেছি, ওদের সাথে বুঝি আমার একটি ফিফটি আছে। আর আমার চাচা যে ইনিংস খেলেছেন, তা সবাই জানে। ওই ইনিংসে উনি কি করেছেন, তার গুরুত্ব বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক বড়।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন