শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

হূমায়ুন আহমেদ স্মরনে : অপরাজেয় কথাশিল্পী

| প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ড. মাহমুদ শাহ কোরেশী
নানাজন নানাভাবে ভাঁজে চিহ্নিত করতে প্রয়াস পেয়েছেন। প্রথমাবধি আমি তাকে এই দুটি শব্দে চিত্রে নেবার অবকাশ খুঁজে ছিলাম। হয়তো মৌলিক নয়, হয়তো শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথা স্মরণ করে এই অভিধা সংযোজনের আয়োজন জানি না। সেই সত্তরের দশকে প্রথম দিকের লেখা পাঠের পর থেকে মনে প্রাণে একটা আশাবাদ জাগ্রত হলো : বাহ! এবার আমরা একজন কথাশিল্পী পেলাম বটে! এবং তিনি একজন বিজ্ঞানী, একজন শিক্ষক, তিনি হুমায়ুন আহমেদ (১৯৪৮-২০১২)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫৪ সালে অনার্স কোর্সে আমার সহপাঠী সৈয়দ শামসুল হক, আবদুল গফফার চৌধুরী ও জহির রায়হান, আবু বকর সিদ্দিক ও শওকত আলী, ১৯৫৮ সালে এমএ শেষ পর্বের সঙ্গী- পরবর্তীকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী কর্মী হাসান আজিজুল হক আরো পরে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, কিংবা বহুপূর্বে প্যারিসে প্রায় একদশক আমার অগ্রজপ্রতিম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ প্রমুখ অনেক কালজয়ী কথাশিল্পীর আবির্ভাব আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ তুলনা রহিত! গল্প উপন্যাস ও নাটকে তিনি আজ বহুদিন ধরে আমাদের বিমুগ্ধ করে রেখেছেন। এগুলো বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে শেষ করা যাবে না। সমকালীন মানব জীবনের পূর্ণাঙ্গ আশা-আকাক্সক্ষা, আনন্দ-বেদনা আর কোনো লেখক কি এভাবে এতোখানি সহানুভূতীর সঙ্গে আমাদের সামনে উপস্থাপিত করতে পেরেছেন? আমার মনে হয় না।
১৯৯০ সালে আমি বাংলা একাডেমিতে কর্মরত থাকাকালে তার সঙ্গে কয়েক দফা সাক্ষাতের সুযোগ আমার হয়েছিল। আমার ছাত্র বর্তমানে প্রখ্যাত লেখক ড. সরদার আবদুস সাত্তারের উদ্যোগেই ঘটেছিলো এই সুযোগ। সাত্তার পরে তার স্মৃতিজাগানীয়া হুমায়ুন আহমেদ গ্রন্থে (সুচয়নী পাবলিশার্স, ২০১৩, পৃ. ৯৬ এবং পরে) এ সম্পর্কে সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছে; কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র উৎসবের কথাও লিখেছেন তবে তাদের বন্ধু এবং এক অসামান্য সাহিত্যকর্মী, থ্যালাসেনিয়া রোগে আক্রান্ত মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহকে বিদেশে চিকিৎসার্থে পাঠানোর উদ্বেগ সম্পর্কে সম্ভাবত কিছু লেখেননি। সে বিষয়ে হুমায়ুন আমাকে অনেক কথা বলেছিলেন এবং আমিও তার সঙ্গে একমত হয়ে সরকারী সাহায্যের প্রয়াস চালিয়ে ছিলাম বলে মনে পড়ে।
প্রবল মানবিক বোধ নিয়ে, ভাষার ওপর ব্যতিক্রমী দখল দেখিয়ে, গ্রাম ও শহরের যথার্থ পটভূমিতে, ‘প্রকৃতির বিপুল বিস্ময় ও সৌন্দর্য বর্ণনার ক্ষেত্রে’ হুমায়ুন আহমেদ অবশ্যই অপরাজেয় কথাশিল্পী!
হুমায়ুনের নামাজে জানাজায় আমার পরবর্তী বাংলা একাডেমি- মহাপরিচালক অধ্যাপক হারুনসহ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে দীর্ঘ অবস্থানের পর প্রথম সারিতে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম এটাও এক অসাধারণ স্মৃতি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন