গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘœ করতে অধিকতর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন
স্টাফ রিপোর্টার : দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের সাথে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন সরাসরি সম্পৃক্ত। কারণ শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ লোক গ্রামে বসবাস করে। দেশের অধিকাংশ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন পল্লী অর্থনীতি বিকাশের ওপর নির্ভর করে।
বিগত তিন দশক যাবৎ দেশীয় ও বৈদেশিক সহায়তায় বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) মাধ্যমে নির্মিত একটি বিস্তৃত পল্লী সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। পল্লীর এ সড়ক ব্যবস্থা অত্যন্ত নিবিড় যা দেশের গ্রামীণ যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাইল ফলক হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে দেশে এলজিইডি ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ (এলজিআই) এর আওতাধীন বিভিন্ন শ্রেণীর মোট প্রায় ৩ লক্ষ ৫২ হাজার ৯৪৩ কিলোমিটার সড়ক আছে যার মধ্যে এলজিইডি’র মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষ ছয় হাজার কিলোমিটার সড়ক পাকা করা হয়েছে। প্রতি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এলজিইডির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। যা পল্লী এলাকার এক বিশাল নেটওয়ার্ক সৃষ্টিতে নতুন মাত্রা এবং পল্লী যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনছে।
দেশের বিশাল এ পল্লী সড়ক নেটওয়ার্ক একটি জাতীয় সম্পদ এবং এর সুরক্ষা অতিব গুরুত্বপূর্ণ। পল্লী যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল ধরে রাখতে সড়ক ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার ১৯৯২-৯৩ অর্থ বছর থেকে প্রতি বছর জাতীয় রাজস্ব বাজেট হতে এ খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আসছে। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল হলেও রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ বরাদ্দ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করছে। পল্লী সড়ক নেটওয়ার্ক মেরামত ও সংরক্ষণ কার্যক্রমকে কার্যকরীকরণ এবং সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তোলার লক্ষে সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে ‘পল্লী সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ নীতিমালা- জানুয়ারি ২০১৩’ অনুমোদিত হয়। সে অনুযায়ী উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও উপকারভোগীদের অর্থায়নে এলজিইডি পল্লী সড়ক ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে। এ ছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন সময়ে প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে প্রকল্প এলাকার সড়ক ও সড়ক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু পরিমাণ অর্থের সংস্থান রাখা হয়। বিগত বছরগুলোতে এলজিইডির সড়ক নেটওয়ার্কের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, অগ্রাধিকার নির্ণয় ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিবিড় তদারকি ও মনিটরিং এবং বিভিন্ন ভালকাজের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এলজিইডির বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে। বর্তমানে পল্লী সড়কে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের সংখ্যা ও ভারী যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পল্লী সড়কসমূহের রক্ষণাবেক্ষণের চাহিদা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলজিইডির আওতাধীন উন্নয়নকৃত ১ লক্ষ ৬ হাজার কিলোমিটার পল্লী সড়ক ও সড়কের অবকাঠামোসমূহের প্রায় শতকরা ৫০ শতাংশ সড়ক ভালো রাখতে প্রতি বছর পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। এছাড়াও প্রতি বছর এলজিইডির সড়ক অবকাঠামোতে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক যোগ হচ্ছে। এতে করে প্রতি বছর রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য সড়কের তালিকাতে নতুন সড়ক যোগ হচ্ছে। বরাদ্দের অপ্রতুলতায় বিদ্যমান সড়কের বিরাট অংশই রক্ষণাবেক্ষণের আওতার বাহিরে থেকে যাচ্ছে।
এলজিইডি নিয়মিত ও নির্দিষ্ট সময়ান্তর এই দুই প্রকৃতির রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম হাতে নিয়ে থাকে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সমূহের মেরামত ও পূনর্বাসন কার্যক্রম অনুযায়ী জরুরী ভিত্তিতে গ্রহণ করা প্রয়োজন। এলজিইডি সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাজস্ব বাজেটের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১২৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল যা নিরূপিত চাহিদার ১৯% এবং তা উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কসমূহের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে শতভাগ ব্যয়ের মাধ্যমে গৃহীত রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। তাই অভিজ্ঞ মহল মনে করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা রাখার জন্যে গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্কের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরও অধিকহারে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন