লোকমান তাজ
উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং শিল্প জগতে পুরোধা ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় স্বচ্ছন্দ বিচরণকারী ঠাকুর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এনেছেন নতুন সুর, বাঙালীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঘটিয়েছেন বিশ্বায়ন এবং প্রতিষ্ঠা করেছেন শিল্পচর্চার নতুন মাত্রা। তার বিপুলায়তন সাহিত্যকর্ম ও শিল্পচর্চার বিষয় বৈচিত্র্যের কারণেই এখনো নতুন প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে উপস্থিত হয়, আমাদের ভাবতে শেখায়। তেমনি একটি বিষয় রবীন্দ্র চিত্রকলা। তার চিত্রকর্মের নানামাত্রিক প্রকাশভঙ্গী নিয়ে সমালোচকদের আলোচনার টেবিলে উপাদেয় সার বিশ্লেষণের জন্ম দেয়। রবীন্দ্রনাথ চিত্রকলার জগতে চলমান আন্দোলনে নিজেকে শামিল করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন। তাঁর আঁকা ছবির ভাÐার বিশাল যদিও তা একজন সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী একজন মহৎ কবির শেষ বয়সের ক্রীড়া হিসেবে সৃষ্টিকর্মের সীমানার বাইরে পড়ে থাকে। তাঁর আঁকা ছবির সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশী। তাঁর চিত্রকলার প্রধান বৈশিষ্ট্য তাঁর বর্ণিত স্বকীয় পদ্ধতি। এ পদ্ধতি অদ্ভুত, অস্বাভাবিক। এক্ষেত্রে তার অনুসারী কেউ নেই। তাঁর ছবি ভারতীয় ঐতিহ্যগত চিত্রকলার কোন কাঠামোতেই শ্রেণীবিন্যাস করা যায় না। শিল্পকলা ঠাকুরকে আশৈশব খুব টানতো। তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল রেখা ও রঙের সমবায়ে যে ছবি নির্মিত হয় তার মধ্যে প্রাণ ও বাণী সঞ্চারণের ব্যাপারটি। কিন্তু তিনি জীবনের প্রথমভাগে মেনে নিয়েছিলেন যে ছবি আঁকার ব্যাপারটি তাঁর আদৌ নয়। শৈশবেই পেন্সিল বা তুলির আঁচড়ে ভাবের প্রতিমূর্তি ফুটিয়ে তোলার যে সহজাত ক্ষমতার স্ফুরণ অনেককে চিত্রাঙ্কনে উৎসাহী করে তোলে তা-ও তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। খেলার ছলেই তিনি আঁকতে শুরু করেছিলেন, তারপর একসময় তা নেশা হয়ে দাঁড়ায়। কার্যত তা কার্যত রেখা ও রং থেকে ছবি ফুটিয়ে তোলার স্বীয় শক্তির দৈনিক পরীক্ষায় পরিণত হয়। চিত্রকলায় ঠাকুরের কোন প্রথাগত বা আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন