স্পোর্টস ডেস্ক : ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে রাফায়েল নাদালের অপ্রত্যাশিত বিদায়, অস্ট্রেলীয় ওপেন গত তিন দিনে অনেক কিছুই দেখে নিয়েছে। আগের দিন বছরের প্রথম গ্র্যান্ড সø্যামটি অবশ্য দেখল সেরেনার অভিনব শট থেকে উদাসীন ফেদেরারকে। আর গতকাল, তীব্র গরম ও বিপক্ষকে উড়িয়ে পরের রাউন্ডের টিকিট কেটে রাখলেন টেনিস নক্ষত্ররা। সেই ম্যাচগুলোকে ছাপিয়ে মানবিকতার ছোঁয়াও পেলো রড লেভার অ্যারেনা!
কোর্টের লড়াইয়ে নিরাপদেই তৃতীয় রাউন্ড পার করেছেন দ্বিতীয় বাছাই হিসেবে এবার মেলবোর্নে খেলা ব্রিটিশ তারকা এ্যান্ডি মারে। স্বাগতিক স্যাম গ্রোথকে ৬-০, ৬-৪, ৬-১ গেমে উড়িয়ে দেন তিনি। খেলায় রেকর্ড ১৬৩ মাইল গতিতে সার্ব করেন গ্রোথ। এরপরও দেড় ঘণ্টার লড়াইয়ে সরাসরি সেটে জয় তুলে নিতে সক্ষম হন মারে। তৃতীয় রাউন্ডে মারে মুখোমুখি হবেন জোয়াও সোসার। এই পর্তুগিজের সঙ্গে চার বছরে তৃর্তীয়বারের মতো দেখা হতে যাচ্ছে মারের।
মেয়েদের এককে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা তৃতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেন। ২০১২ ও ২০১৩ সালের শিরোপাধারী বেলারুশ সুন্দরী দ্বিতীয় রাউন্ডে হারান মন্টেনেগ্রোর দানকা কোভিনিচকে। আজারেঙ্কা ৬-১, ৬-২ গেমের সহজ জয় পান। পরবর্তী রাউন্ডে জাপানের তরুণী নাওমি ওসাকার মুখোমুখি হবেন তিনি। এছাড়াও দ্বিতীয় রাউন্ডে জিতেছেন সার্বিয়ার আনা ইভানোভিচও। লাটভিয়ার আনাস্তাসিজা সেভাস্তোভাকে ৬-৩, ৬-৩ গেমে হারান তিনি। রড লেভার এরিনায় ম্যাচের প্রথম সেট চলাকালীন সিঁড়ি থেকে পড়ে আহত হন এক বয়স্ক দর্শক। তার প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রায় আধ ঘণ্টা ম্যাচ বন্ধ থাকে।
এর চেয়ে বড় কীর্তিও ঘটেছে গতকাল। টেনিস কোটে শুধু বল নিয়ে মেতে থাকা নয়, সেখানে মানবিক দায়িত্ববোধও যে খেলোয়াড়দের মধ্যে কাজ করে, তা দেখিয়ে দিয়েছেন জো উইলফ্রেড সোঙ্গা। সকালে চলছিল অস্ট্রেলিয়ার ওমার জেসিকা ও ফ্রান্সের জো উইলফ্রেড সোঙ্গার মধ্যে। খেলা চলাকালে আচমকা একটা বল গিয়ে লাগে দাঁড়িয়ে থাকা এক বল গার্লের নাকে। সাথে সাথেই খেলা বন্ধ করে সোঙ্গা ছুটে যান ব্যথায় কষ্ট পাওয়া মেয়েটির কাছে। আহত বালিকাকে প্রাথমিক চিকৎসা দেয়া থেকে শুরু করে তাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে দিয়েছেন সান্ত¡নাও। আর এই দৃশ্য দেখে হাত তালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো গ্যালারি। মন জয় করে নেন বিশ্ব ক্রিকেটের। পরে জেসিকাকে হারিয়ে কোর্টের ম্যাচটিও জিতে নিয়েছেন জো উইলফ্রেড সঙ্গা।
এদিকে, প্রত্যাশামতই দ্বিতীয় রাউেন্ডে পা রেখেছেন মহিলা দ্বৈতের নম্বর ওয়ান সানিয়া মির্জা-মার্টিনা হিঙ্গিস জুটি। প্রথম রাউন্ডে এক ঘণ্টার মধ্যে পেরেইরা-মারিনো জুটির লড়াই ৬-২,৬-৩ সেটে শেষ করে দেন ইন্দো-সুইস জুটি। এই জয়ে টানা ৩১টি ম্যাচে জয় পেলেন সানিয়া-হিঙ্গিস। গত সপ্তাহেই সিডনিতে এপিয়া ইন্টারন্যাশানালে টানা ২৯তম ম্যাচ জিতে বিশ্বরেকর্ড হয়ে বিশ্বের নম্বর ওয়ান মহিলা জুটি।
তবে এদিনের আবেগঘন নাটকটি মঞ্চস্থ হলো রড লেভার অ্যারেনার সন্ধার ম্যাচটিতে। যেখানে হার দিয়ে অবসরের ঘোষনা দিতে হলো ঘরের ছেলে লেইটন হিউটকে। মেলবোর্নে তাকে এমন বিষাদময় বিদায় দিলেন স্প্যানিশ তারকা ডেভিড ফেরার, ৬-২, ৬-৪, ৬-৪ গেমে।
১৯৯৭ সাল থেকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে এই কোর্টেই শুরু হিউইটের টেনিসের পথচলা। কেটে গেছে ২০টি বছর, একটি বারের জন্য পা হড়কাননি, খেলেছেন প্রতিটি আসরে। হারের কষ্টের চেয়ে ঘরের মাঠের এই টুর্নামেন্টের শিরোপা ছুঁয়ে না দেখার আক্ষেপই যেন বেরুলো অশ্রæ হয়ে। দুই কন্যা আর এক সন্তানকে নিয়ে যখন কোর্ট ছাড়েন দুটি গ্র্যান্ড ¯ø্যামের মালিক, ৩৪ বছর বয়সেও যেন ছোট্টটি বনে গেলেন এই অজি, ‘আমি এবারও এসেছি, সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছি, সবসময়ের মত কিছুই রেখে আসিনি লকার রুমে। যা আমাকে বাকি জীবনে গর্ব করার রসদ যোগাবে। পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে আমি শতভাগ দিয়ে খেলেছি, এটাই আমার সান্ত¦না।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন